ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

‘সংশোধন ছাড়া ডিজিটাল আইন সাংবাদিক সমাজ মানবে না’

মেহেদী হাসান ডালিম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:০৯, ২৭ অক্টোবর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘সংশোধন ছাড়া ডিজিটাল আইন সাংবাদিক সমাজ মানবে না’

নিজস্ব প্রতিবেদক : ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের কয়েকটি শুধু সাংবাদিকদের জন্য নয়, দেশের সকল নাগরিকদের জন্যই প্রতিবন্ধক। তাই আইনটির আপত্তিকর ধারাগুলো সংশোধনের জন্য সবাইকে সোচ্চার হওয়ার আহবান জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

শনিবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘মুক্ত গণমাধ্যম: প্রেক্ষিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এ আহবান জানান। সুপ্রিম কোর্টে কর্মরত সাংবাদিকদের সংগঠন ল’ রিপোর্টার্স ফোরাম (এলআরএফ) এ গোলটেবিল আলোচনার আয়োজন করে।

সম্পাদক পরিষদের সদস্য ও দৈনিক ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেন, আমাদের সম্পাদক পরিষদের সঙ্গে সরকারের তৃতীয় একটি বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দেখা গেল বৈঠকটি হওয়ার আগেই আইনটি পাস হয়ে গেল। এতে আমাদের উদ্বেগের কারণ রয়ে গেছে। এ আইনে আমরা মাত্র ৯টি ধারার বিষয়ে আপত্তি দিয়েছি। আমরা কিন্তু পুরো আইনকে প্রত্যাখ্যান করিনি। আইনটিকে আমরা ফেলেও দেইনি। আমরা শুধু বলেছি এই ধারাগুলো স্বাধীন সাংবাদিকতার পরিপন্থী। কোথায় পরিপন্থী তা আমরা স্পষ্ট করে উল্লেখ করেছি। এ আইনটি শুধুমাত্র গণমাধ্যম কর্মীদের জন্য ক্ষতিকারক নয়। এটা আরও ব্যাপক। আমরা সরকারের প্রতি আস্থা রাখতে চাই। আস্থা রেখেই আমরা একটি সমাধানে পৌঁছাতে পারবো। আমরা রাস্তায় প্রতিবাদও করবো, সরকারের সঙ্গে আলোচনাও চালিয়ে যাব। আমরা এর প্রতিবাদে সারা দেশের মানুষকেও সম্পৃক্ত করতে চাই।

বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব শাবান মাহমুদ বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে তথ্য, আইন এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক হয়। সেখানে আইনমন্ত্রী আশ্বস্ত করেছিলেন আমাদের এই উদ্বেগের জায়গাগুলোয় সংশোধনী আনা হবে এবং আইনটি চূড়ান্ত হওয়ার আগে সংশোধনী হবে কিন্তু সেক্ষেত্রে আইনমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছেন, তিনি কথা রাখেননি। এই একটি জায়গায় আমাদের উদ্বেগ, উৎকন্ঠা আরও ঘণিভূত হয়েছে। সংশোধনী ছাড়া আইনটি বাস্তবায়ন বা কার্যকর হোক তা সাংবাদিক সমাজ থেকে মেনে নিতে পারি না।

ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের দ্বারা ৫৭ ধারা যে বাতিল হচ্ছে, তা কিন্তু নয়। ৫৭ ধারাটি থেকে যাচ্ছে। আইনটির ৫(৩) ধারাতে নিরাপত্তার জন্য গঠিত এজেন্সির কার্যক্রম বিধি দ্বারা পরিচালিত হওয়ার করা বলা হয়েছে। এর ফলে সরকার যখন যাকে মনে করবে তাকে ধরতে নতুন নতুন আইন প্রণয়ন করতে পারবে।

ব্যারিস্টার সারা হোসেন বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ন্যায় সঙ্গতভাবে ব্যবহার হচ্ছে না। তাই আইনটির ধারাগুলো সংশোধন প্রয়োজন।

ড. আসিফ নজরুল বলেন, এই আইনের অপরাধের সংজ্ঞায় অস্পষ্টতা আছে, যার ইচ্ছামত ব্যাখা ও অপ্রপ্রয়োগ করা সম্ভব। এই আইনে গুজব, ভাবমূর্তি, মূল্যবোধ, ধর্মীয় মূল্যবোধ-শব্দগুলো রাখা হয়েছে। এগুলো নিয়ে সংজ্ঞা আসেনি। এই আইনের দ্বারা কোন সংস্থাকে যদি অতিরিক্ত ক্ষমতা দেওয়া হয় এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হয় না তখন সেটি অবশ্যই কালো আইন। এই আইনের অধীনে পুলিশের ক্ষেত্রে তল্লাশি, জব্দ, গৃহে প্রবেশ, গ্রেফতারসহ বেশকিছু ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে স্বাধীন সাংবাদিকতার প্রতিবন্ধকতাও আইনটির বিধানে তুলে ধরা হয়েছে। এটি শুধু আইনজীবী, সাংবাদিকের সমস্যা নয়, এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো সকল নাগরিকের দায়িত্ব।   

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বলেন, আইনটি ভালো করে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, যে কাউকে যেকোনো অবস্থায় আইনটির অধীনে ফেলে দেওয়া যায়। বিশেষ ক্ষমতা আইন থেকে এটি ভয়ানক আইন। এই আইনের অবশ্যই সংশোধন হওয়া দরকার।

বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন বলেন, সকলেই যদি মনে করি আইনটি সবার স্বার্থে এবং জনগণের স্বার্থে হয়নি, তবে আইনটি অবশ্যই সংশোধন করা যাবে। প্রধানমন্ত্রী যদি প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকেন তবে অবশ্যই বাস্তবায়ন করবেন।

ল’ রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি সাঈদ আহমেদ খানের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক হাসান জাবেদের সঞ্চালনায় গোলটেবিল আলোচনা মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন দৈনিক প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক মিজানুর রহমান খান।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৭ অক্টোবর ২০১৮/মেহেদী/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়