ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

বাজেটে ভর্তুকি, প্রণোদনা ও নগদ ঋণ খাতে বরাদ্দ বাড়ছে

কেএমএ হাসনাত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:০২, ২৫ মে ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বাজেটে ভর্তুকি, প্রণোদনা ও নগদ ঋণ খাতে বরাদ্দ বাড়ছে

কেএমএ হাসনাতঃ অন্যান্য অর্থবছরের তুলনায় আগামী ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে সরকারের ভর্তুকি, প্রণোদনা ও নগদ ঋণ খাতে বাজেট বরাদ্দ মোট ৪৫ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। যা চলতি ২০১৮-২০১৯ অর্থবছর থেকে ছয় হাজার ৫০০ কোটি টাকা বেশি। চলতি অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ ৩৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। নানা কারণে এ খাতে বরাদ্দ বেশি রাখা হচ্ছে বলে সূত্র জানিয়েছে।

আগামী ১৩ জুন জাতীয় সংসদে ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল। তার বাজেট বক্তৃতায় এসব বিষয়গুলো অন্তর্ভূক্ত থাকবে।

সূত্র জানায়, আগামী অর্থবছরের বাজেটে ভর্তুকিতে বরাদ্দ বাড়ার প্রধান কারণ হচ্ছে প্রবাসীদের পাঠানো টাকার উপর দুই শতাংশ প্রণোদনা আর দেশের গ্যাস খাতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজির) খাতে ভর্তুকি বাবদ আট হাজার ৫০০ কোটি টাকা। গত ২০ অর্থবছর মধ্যে এ খাতে এবার সর্বোচ্চ বরাদ্দ রাখা হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

অর্থ বিভাগের ওই সূত্র জানায়, প্রদর্শিত ভর্তুকি, প্রণোদনা ও নগদ ঋণ বাবদ প্রকৃত ব্যয় আগের অর্থবছরগুলোর তুলনায় বাড়লেও জিডিপির শতকরা হিসাবে তা অপরিবর্তিত রয়েছে। সাধারণত, ভর্তুকি বেশি দেওয়া হয় কৃষি ও খাদ্য খাতে। আর প্রণোদনা বেশি দেওয়া হয় কৃষি, পোশাক রপ্তানি ও পাট খাতে। নগদ ঋণ দেওয়া হয়ে থাকে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি), বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) ও অন্যান্য সংস্থাকে।

তবে বিপিসি, পিডিবিকে যে নগদ ঋণ দেওয়া হয় সেগুলোকে এক ধরনের ভর্তুকি হিসেবেই দেখা হয়ে থাকে। কারণ, এসব ঋণ সাধারণত সরকার ফেরত পায় না। যে কারণে পরে পুরো ঋণই অনুদান, ভর্তুকিতে রূপান্তরিত হয়। বেসরকারি খাত থেকে বেশি দামে বিদ্যুৎ কিনে কম দামে বিদ্যুৎ পেতে পিডিবিকে ঋণ দেয় সরকার।

আগামী অর্থবছরে সবচেয়ে বেশি ভর্তুকি দেওয়া হবে বিদ্যুৎ খাতে। বিদ্যুতে ভর্তুকির পরিমাণ প্রাথমিকভাবে প্রাক্কলন করা হয়েছে ৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছর এ খাতে ভর্তুকি রয়েছে ৯ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। এর পরেই রয়েছে গ্যাস খাতের এলএনজি আমদানিতে ভর্তুকি, যার পরিমাণ আট হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এ পর্যন্ত এলএনজি আমদানি খাতে ভর্তুকি বাবদ পেট্রোবাংলাকে দুই হাজার ৫০০ কোটি টাকা দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়।

খাদ্যে ভর্তুকির পরিমাণ ধরা হচ্ছে চার হাজার ৫০০ কোটি টাকা। খাদ্যেও চলতি অর্থবছরের তুলনায় ১০৪ কোটি টাক বরাদ্দ কমছে। এ ছাড়া অন্যান্য খাতের জন্য ৯ হাজার ৬০০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রাক্কলন করা হয়েছে।

আগামী অর্থবছরের বাজেটে প্রণোদনার টাকার অংকে কোনো হেরফের হচ্ছে না। চলতি অর্থবছরের মতো আগামীতেও ১৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা প্রাক্কলন করা হয়েছে। কৃষি খাতের জন্য ৯ হাজার কোটি টাকা রাখার প্রস্তাব করা হচ্ছে। রপ্তানিতে নগদ প্রণোদনাও রাখা হচ্ছে চার হাজার কোটি টাকা। আর পাট খাতের জন্য ৫০০ কোটি টাকা।

নগদ ঋণ খাতে পাঁচ হাজার কোটি টাকা রাখা হচ্ছে। তবে এর মধ্যে বিপিসি ও পিডিবির জন্য কোনো বরাদ্দ রাখা হচ্ছে না। চলতি অর্থবছরেও এ দুই খাতে কোনো বরাদ্দ রাখেনি সরকার। বরং অন্যান্য খাতে পাঁচ হাজার কোটি টাকা রাখা হয়েছে।

আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কম থাকায় গত কয়েক অর্থবছর ধরে বিপিসিকে কোনো ভর্তুকি দেয়নি সরকার। আগামী অর্থবছরেও তাই ধারাবাহিকতার ব্যতিক্রম হচ্ছে না। আর বিদ্যুৎ খাতে পিডিবির ব্যবসায়িক পরিকল্পনা অনুযায়ী মূল্য সমন্বয় অব্যাহত রয়েছে। তাই এ খাতে ভর্তুকি দেওয়া হবে না।

নানা অনিয়ম, দুর্নীতি আর খেলাপি ঋণের ভারে নুয়ে পড়া ব্যাংক খাত বাঁচাতে আবারো দেড় হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হচ্ছে। এই অর্থ মূলত রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতির পূরণে ব্যয় করা হবে। সংকটে পড়া ব্যাংক খাতের ইমেজ উদ্ধারে সাম্প্রতিক সময়ে খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এছাড়া ভালো ঋণগ্রহীতাদের জন্যও পৃথক সুবিধা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

সূত্র জানায়, ব্যাংক খাতে বর্তমানে প্রায় এক লাখ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ সৃষ্টি হয়েছে, যার বেশিরভাগরই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর। এসব ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি পূরণে চলতি ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরের বাজেটেও এক হাজার ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। আগামী অর্থবছরেও একই পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ রাখা হচ্ছে। তবে শেষ সময়ে এর পরিমাণ কিছুটা বাড়তে পারে বলে জানা গেছে।



রাইজিবিডি/ঢাকা/২৫ মে ২০১৯/হাসনাত/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়