ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

৫ খুনির বিরুদ্ধে আরও একটি মামলা

মুহাম্মদ নূরুজ্জামান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৫০, ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৫   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
৫ খুনির বিরুদ্ধে আরও একটি মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনা : খুলনায় চাঞ্চল্যকর এক্সিম ব্যাংকের কর্মকর্তা পারভীন সুলতানাকে গণধর্ষণের ঘটনায় পাঁচ খুনি ও ধর্ষকের বিরুদ্ধে আরও একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

 

পারভীনের ভাই রেজাউল আলম চৌধূরী বিপ্লব বাদি হয়ে মঙ্গলবার লবনচরা থানায় এ মামলা দায়ের করেন। মামলায় গ্রেফতারকৃত আসামি লিটনসহ মোট পাঁচ জনকে আসামি করা হয়েছে।

 

এর আগে ইলিয়াস চৌধূরী (৭০) ও তার মেয়ে পারভীন হত্যাকান্ডের ঘটনায় গত ১৯ সেপ্টেম্বর থানায় হত্যা ও ডাকাতির মামলা দায়ের করা হয়। এ মামলায় গ্রেফতারকৃত আসামি লিটন আদালতে ১৬৪ ধারার জবানবন্দিতে হত্যা ও ধর্ষণের দায় স্বীকার করে ঘটনার লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছে।

 

পুলিশ জানায়, লিটন আদালতে জবানবন্দিতে গণ ধর্ষণের বিষয়টি স্বীকার করায় মূলত: আরও একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। যাতে লিটনসহ মোট পাঁচ জনকে আসামি করা হয়েছে। তবে তদন্ত ও গ্রেফতারের স্বার্থে তাদের নাম প্রকাশ না করতে অনুরোধ জানান তিনি।

 

এদিকে, জোড়া হত্যাকান্ডের বিষয়ে আরও কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে পুলিশ। প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, ১৯ সেপ্টেম্বর ঘটনার দিন শুক্রবার ছুটির দিনে ব্যাংক কর্মকর্তা পারভীন সুলতানা বাড়িতে আছে- জেনেই পরিকল্পনা অনুযায়ী পাঁচ কিলার ওই দিনটি বেছে নেয়। মূলত: পারভীনকে ধর্ষণ করে হত্যা এবং ডাকাতিই ছিল তাদের উদ্দেশ্য। তার বৃদ্ধ বাবাকে হত্যার কোন ইচ্ছা ছিল না তাদের।

 

কিন্তু ওই বাড়িতে প্রবেশ করতে প্রথমেই তারা ইলিয়াস চৌধূরীর সামনে পড়ে যায়। এ সময় তিনি তারা কারা-পরিচয় কি-কেন বাড়িতে প্রবেশ করেছে- জানতে চেয়ে উচ্চস্বরে আওয়াজ করায় বিষয়টি জানাজানি হওয়ার ভয়ে প্রথমে তাকেই শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়। পরে মেয়ের কক্ষে ঢুকে ধর্ষণ করে তাকেও একই ভাবে হত্যা করা হয়।

 

ওই বাড়িতে আর কেউ না থাকায় ঘটনা ঘটিয়ে পার পেতে হত্যাকারীরা দু’ জনের লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে বাথরুমের সেফটিক ট্যাকের মধ্যে ঢুকিয়ে রাখে। যেন অন্তত: ৪/৫ দিনের মধ্যে ঘটনাটি প্রকাশ না পায়। আর এ সুযোগেই তারা ডাকাতির ৮০ হাজার টাকা ভাগ-বাটোয়ারা করে নিয়ে সন্দেহের বাইরে যেতে পারে।

 

কিন্তু বাবা-মেয়ের মোবাইল বন্ধ থাকার কারণে স্বজনরা উদ্বিগ্ন হয়ে দ্রুত খবর নিতে আসার কারণেই বিষয়টি ফাঁস হয়। এর মধ্যে লিটন নিজেকে নির্দোষ প্রমান করতে এলাকায় থেকে গিয়ে গ্রেফতার হওয়ার পর অন্যদের নামও প্রকাশ পায়। তবে লুটকৃত টাকার কোন ভাগ সে পায়নি বলে পুলিশকে জানিয়েছে। এছাড়া হত্যা ও ধর্ষণের মূল পরিকল্পনাকারীর নামও সে প্রকাশ করেছে। পুলিশ তাদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রেখেছে।

 

জোড়া হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা লবনচরা থানার এসআই কাজী বাবুল হোসেন জানান, হত্যা ও ধর্ষণ মিশনে অংশ নেওয়া অপর চারজনকে গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। তবে তাদের অবস্থান চিহ্নিত করা যাচ্ছে না। তাদের গ্রেফতারে সব ধরনের কৌশল এবং প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে।

 

প্রসঙ্গত, গত ১৯ সেপ্টেম্বর রাতে নগরীর লবনচরা থানা এলাকার হযরত বুড়ো মৌলভী (রহ.) দরগা এলাকার নিজ বাড়িতে দুর্বৃত্তরা ইলিয়াস চৌধূরী ও তার মেয়ে পারভীন সুলতানাকে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর লাশ সেফটিক ট্যাংকির মধ্যে ঢুকিয়ে রাখে। পারভীন সুলতানা এক্সিম ব্যাংক খুলনার কালিবাড়ী শাখায় ক্যাশ কর্মকর্তা ছিলেন।

 

এ ঘটনায় নিহত ইলিয়াস চৌধূরী’র ছেলে রেজাউল আলম চৌধূরী বিপ্লব বাদি হয়ে ২০ সেপ্টেম্বর রাতে লবনচরা থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলায় নওয়াব আলী ও আসলাম নামে দু’জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করা হয়। পুলিশ লিটন নামে একজনকে গ্রেফতার করলে সে ২১ সেপ্টেম্বর খুলনা মহানগর হাকিম আয়শা আক্তার মৌসুমী’র আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে।

 


রাইজিংবিডি/২২ সেপ্টেম্বর ২০১৫/মুহাম্মদ নূরুজ্জামান/নওশের

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়