ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

পরিবহন সংকট : দুর্ভোগে রাজধানীবাসী

আসাদ আল মাহমুদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:১৮, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
পরিবহন সংকট : দুর্ভোগে রাজধানীবাসী

নিজস্ব প্রতিবেদক : অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘটে মঙ্গলবার চরম দুর্ভোগে পড়েছে রাজধানীবাসী।

ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী, এসএসসি পরীক্ষার্থীসহ শিক্ষার্থীরা গাড়ির জন্য দীর্ঘ সময় রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকেন। তাদের অনেকেই কোনো যানবাহন না পেয়ে হেঁটেই গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা দেন।

ধর্মঘটের কারণে রাজধানীর সায়েদাবাদ, গাবতলী, গুলিস্তান ও মহাখালী থেকে দূর পাল্লার কোনো বাস ছেড়ে যায়নি। জরুরি কাজে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ঢাকায় আসা সাধারণ মানুষও দুর্ভোগে পড়েছে।

ঢাকার পার্শ্ববর্তী জেলা মুন্সীগঞ্জ, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, টাঙ্গাইল থেকে কোনো গাড়ি ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসেনি। কিছু গাড়ি আসলেও পরিবহণ শ্রমিকরা যাত্রীদের টেনে-হেঁচড়ে নামিয়ে দেয়।

এ ছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন রুটের কিছু বাস চললেও অধিকাংশ বাস না চলায় দুর্ভোগে পড়েছেন রাজধানীবাসী।

সায়েদাবাদ টার্মিনালে কথা হয় নোয়াখালী থেকে আসা মনির নামের এক যাত্রীর সঙ্গে। তিনি রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘১০ দিন আগে জরুরি কাজে ঢাকায় এসেছিলাম। গত মঙ্গলবার সকাল ৯টার স্টার লাইন পরিবহনের টিকিট কাটা ছিল। ধর্মঘটের কারণে যেতে পারিনি। এখন কী করব বুঝতে পারছি না।’

 



রাজধানীর হানিফ ফ্লাইওভারে ও নিচের সড়কে ব্যারিকেড দিয়ে গাড়ি চলতে দিচ্ছে না শ্রমিকরা।

দুপুরে যাত্রাবাড়ী এলাকায় দেখা গেছে, শত শত মানুষ গাড়ি না পেয়ে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার ও নিচ দিয়ে গন্তব্যের উদ্দেশে হেঁটে যাচ্ছে। একই দৃশ্য দেখা গেছে ফার্মগেট, মগবাজার, গুলিস্তানসহ বিভিন্ন এলাকায়।

রাজধানীর গাবতলীতে আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালের সামনে গরুর হাট ক্রসিংয়ে ও দারুস সালাম সড়কে ব্যারিকেড দিয়ে কর্মবিরতি পালন করছেন পরিবহন শ্রমিকরা। কিছু প্রাইভেটকার ও লেগুনা ছাড়া কোনো গাড়ি চলাচল করছে না। রাজধানী থেকে সাভার ও নবীনগর সড়কে যান চলাচল বন্ধ। রাস্তায় হাজারো যাত্রী গাড়ির অপেক্ষায়। কিন্তু ঢাকা থেকে কোনো গাড়ি বের না হওয়ায় এবং ঢাকায় কোনো গাড়ি আসতে না পারায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন তারা।

সায়েদাবাদ এলাকায় দায়িত্বরত ট্রাফিক বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রথমে তাদের পক্ষ থেকে ট্রাক শ্রমিকদের কথা বলার পর পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছিল। কিন্তু বেলা ১১টার পর থেকে পরিবহন শ্রমিকরা রাস্তা অবরোধ শুরু করে ভাঙচুর চালায়।’

এস আলম পরিবহনের ঢাকা অঞ্চলের ইনচার্জ মোহাম্মদ মঞ্জুর মোরশেদ বলেন, ‘পরিবহন শ্রমিকরা ধর্মঘট ডেকেছে, সারা দেশে যান চলাচল বন্ধ। আমরা অসহায়ের মতো এর সঙ্গে আছি। পক্ষেও নাই বিপক্ষেও নাই।’

তিনি বলেন, ‘এর আগে কখনো এমন সাজা হয়নি। সে কারণে শ্রমিকরা ক্ষিপ্ত। আলোচনার মাধ্যমে এই অচলাবস্থার একটা সমাধান জরুরি।’

 



এ ব্যাপারে ঢাকা মেট্রোপলিটন ট্রাফিক বিভাগের (পশ্চিম) উপকমিশনার লিটন কুমার সাহা বলেন, ‘পরিবহন শ্রমিকদের অবরোধের ফলে রাজধানীতে কোনো যানবাহন প্রবেশ করতে পারছে না। এতে যাত্রীরা দুর্ভোগে পড়েছেন।’

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বলেন, ‘এক বাসচালকের যাবজ্জীবন সাজার রায় আসার পর শ্রমিকরা ক্ষুব্ধ হয়েছিল। কয়েক দিন ধর্মঘট পালনের পর গত রাতে আমরা আলোচনায় বসে সমস্যার প্রায় সমাধান করে ফেলেছিলাম। পরে শোনা গেল, সাভারে এক দুর্ঘটনার মামলায় ঢাকার ৫ নম্বর জজ কোর্টে এক ট্রাকচালকের ফাঁসির রায় হয়েছে। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা এখন অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতিতে গেছে। আমরা বিষয়টি নিয়ে সরকারের সঙ্গে আবার আলোচনায় বসব।’

উল্লেখ্য, সড়ক দুর্ঘটনায় প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা তারেক মাসুদ ও এটিএন নিউজের প্রধান নির্বাহী মিশুক মুনীরসহ পাঁচজন নিহতের ঘটনায় বাসচালক জামির হোসেনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন মানিকগঞ্জ আদালত। এই রায়ের প্রতিবাদে গত রোববার ভোর ৬টা থেকে খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট শুরু হয়েছে, যা মঙ্গলবার ভোর ৬টা থেকে দেশব্যাপী পালিত হচ্ছে। সোমবার রাতে শ্রমিক ফেডারেশনের নেতারা সারা দেশে ধর্মঘটের আহ্বান করে।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭/আসাদ/হাসান/সাইফুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়