ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থ চুরিতে উত্তর কোরিয়া জড়িত!

সাইফুল আহমেদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৪:৪৯, ২৩ মার্চ ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থ চুরিতে উত্তর কোরিয়া জড়িত!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক থেকে গত বছর বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থ চুরির ঘটনার পেছনে উত্তর কোরিয়ার হ্যাকাররা জড়িত ছিল।

এমনটিই দাবি করেছেন মার্কিন অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা ন্যাশনাল সিকিউরিটি ইন্টেলিজেন্স (এনএসএ)-এর প্রাক্তন এক কর্মকর্তা।

রিক লেজেট নামের এনএসএর প্রাক্তন ওই ‍উপপরিচালক জানান, উত্তর কোরিয়ার হ্যাকাররা বাংলাদেশ ব্যাংকের ৯৫১ মিলিয়ন ডলার চুরি করতে চেয়েছিল। তবে তারা ৮১ মিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থ সরাতে পারেনি, যার কিছু অর্থ পরবর্তীকালে বাংলাদেশ সরকার উদ্ধার করতে সমর্থ হয়।

ওই অর্থ চুরির পরপরই উত্তর কোরিয়ার দিকে আঙুল তুলেছিল যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। তবে তখন এর সঙ্গে দ্বিমত প্রকাশ করেন অনেক বিশেষজ্ঞ।

তবে গত মঙ্গলবার লেজেট বলেন, ওয়াশিংটনের একটি প্রতিষ্ঠানের সংকেতিক অর্থ স্থানান্তরে উত্তর কোরিয়াই হোতা ছিল।

আসপেন ইনস্টিটিউটে এক গোলটেবিল বৈঠকে লেজেট বলেন, বেসরকারি নিরাপত্তা সংস্থার গবেষকরা বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থ চুরির ঘটনার সঙ্গে ২০১৪ সালের সনি পিকচার্স হ্যাকের ঘটনার মিল খুঁজে পেয়েছেন, যার জন্য যুক্তরাষ্ট্র সরকার পিয়ংইয়ংকে দায়ী করেছিল।

লেজেট বলেন, ‘যদি সনি পিকচার্সের ঘটনার সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের ঘটনার যোগসূত্র থাকে - এর অর্থ হচ্ছে একটি দেশ ব্যাংক ডাকাতি চালাচ্ছে।’

ওই গোলটেবিল বৈঠকের সঞ্চালক এনএসএর প্রাক্তন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল জন কারলিন এ সময় লেজেটকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘আপনি কি বিশ্বাস করেন যে, বর্তমানে এমন কয়েকটি রাষ্ট্র আছে যারা ব্যাংক ডাকাতির সঙ্গে যুক্ত?’

জবাবে লেজেট বলেন, ‘হ্যাঁ, আমি মনে করি।’

যদিও বেসরকারি নিরাপত্তা সংস্থার চেয়ে উত্তর কোরিয়ার সাইবার অভিযানে এনএসএর অনেক বেশি নজরদারি আছে, তথাপি বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থ চুরির পেছনে উত্তর কোরিয়ার জড়িত থাকার সপক্ষে তাদের কাছে কী ধরনের তথ্যপ্রমাণ আছে, সে সম্পর্কে কোনো কথা বলেননি লেজেট। তা ছাড়া, লেজেটের বক্তব্যকে যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি বিবৃতি হিসেবে গ্রহণ করার সুযোগ নেই। কারণ তিনি এখন অবসরপ্রাপ্ত।

এনএসএতে ৩০ বছর চাকরি করে গত বছর অবসরে যাওয়া লেজেটের উত্তর কোরিয়াকে বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থ চুরির জন্য দায়ী করে দেওয়া এমন বক্তব্য অবশ্য এনএসএর তদন্তের সঙ্গে বৈসাদৃশ্যমূলক। এ ব্যাপারে লেজেট বলেন, ‘আমি মনে করি সরকারি মামলাটি সঠিকভাবে তৈরি ছিল।’ তবে লেজেটের এমন বক্তব্যের বিষয়ে কোনো মন্তব্য দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে এনএসএ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থ চুরির ঘটনা সারা বিশ্বে আলোড়ন তোলে এবং সাইবার নিরাপত্তায় বিশ্ব নতুন করে ভাবতে শুরু করে। এ ঘটনার পেছনে জড়িত থাকার অভিযোগের তির ওঠে উত্তর কোরিয়ার দিকে। এর পর থেকেই সাইবার জগতে উত্তর কোরিয়াকে একটি ‘দুঃসাহসিক’ দেশ হিসেবে গণ্য করা হয়।

লেজেটের বক্তব্য এমন এক সময় এল যখন উত্তর কোরিয়া অর্থনৈতিভাবে চাপে আছে। জাতিসংঘ পিয়ংইয়ংয়ের বিরুদ্ধে অবরোধ আরোপ করেছে এবং চীনে বৈদেশিক মুদ্রা নিরাপত্তায় নিয়োজিত উত্তর কোরিয়ার কোম্পানিগুলোর ওপর নজরদারি রেখেছে।

বেশ কয়েকবার দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ও পরমাণু পরীক্ষা জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় উত্তর কোরিয়াকে চাপ দিয়ে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র উত্তর কোরিয়ায় সামরিক হামলার হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে অসন্তোষজনক আচরণের জন্য সম্প্রতি চীন উত্তর কোরিয়া থেকে কয়লা আমদানি বাতিল করেছে। ধারণা করা হচ্ছে, এসব কারণে উত্তর কোরিয়ার ওপর যে আর্থিক চাপের সৃষ্টি হয়েছে, তা পুষিয়ে নিতেই বিভিন্ন ব্যাংকে সাইবার হামলা চালাচ্ছে দেশটি।

তথ্যসূত্র : ফরেনপলিসি ডটকম




রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৩ মার্চ ২০১৭/সাইফুল/এএন

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়