ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

‘গণহত্যা দিবস নতুন প্রজন্মকে পথ দেখাবে’

আসাদ আল মাহমুদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:০১, ২৫ মার্চ ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘গণহত্যা দিবস নতুন প্রজন্মকে পথ দেখাবে’

আসাদ আল মাহমুদ: ২৫ মার্চ জাতীয় গণহত্যা দিবস ঘোষণাকে যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত বলে অভিহিত করছেন সাধারণ মানুষ। তারা বলেছেন, এই দিনের মমার্থ অনুধাবন করে সরকার সময় উপযোগী সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটি শুধু সরকার নয়, গণ মানুষেরও দাবি ছিল।

তারা বলেছেন, স্বাধীনতার ৪৬ পর এটি জাতীয় সংসদে পাশ হওয়ায় ও মন্ত্রিসভায় অনুমোদন পাওয়ার তারা উচ্ছসিত-উদ্বেলিত। তারা এ দিনটিকে আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস হিসেবে পাওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

দিবসটির ব্যাপারে তারা রাইজিংবিডির কাছে এই অভিমত প্রকাশ করেছেন।

সচিবালয়ের সামনে কথা হয় মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানের বাসিন্দা এস এম আলীর সঙ্গে। তিনি রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘১৯৭১ সালে ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি বাহিনী এ দেশের মানুষের ওপর হত্যাযজ্ঞ চালায়। তারা কেবল ঢাকা নয়, সারা দেশেই পরিকল্পিত হামলা করে এবং নিরস্ত্র মানুষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। এই গণহত্যাকে ধিক্কার জানাতে স্বাধীনতার ৪৬ বছর পর গণহত্যা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এজন্য সরকারকে অভিনন্দন।’

তিনি আলো বলেন, ‘আমরা ৪৫ বছরে পারিনি, সেটা আমাদের ব্যর্থতা। তাই বিষয়টিকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে যেতে রাষ্ট্রদূত ও প্রবাসীদের ভূমিকা রাখতে হবে।’

জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে রাজধানীর আরমানিটোলার বাসিন্দা মো. আবদুর রহিমের সঙ্গে কথা হয়। তিনি রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘পাকিস্তানিরা ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে যে ভয়াবহ গণহত্যা চালায় তা ইতিহাসে কালো অধ্যায় হিসেবে পরিচিত। স্বাধীনতার দীর্ঘদিন পর রাজাকারদের বিচার হয়েছে। এটা আমাদের স্বাধীনতার চেতনার নতুন আলোকবর্তিকা। এর পাশাপাশি  ২৫ মার্চ  গণহত্যা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এটা একটি যুগান্তকারী ঘোষণা। এ ঘোষণায় বঙ্গবন্ধু কন্যা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন। এ ঘোষণা শুধু শেখ হাসিনার পক্ষে সম্ভব।’

এ ব্যাপারে কথা হয় আশিকুর রহমানের সঙ্গে। তিনি রাইজিংবিডকে বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের ৪৬ বছর পর হলেও ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস ঘোষণা করা হয়েছে। কেন এত বছর পর ঘোষণা করা হলো না, তা বোধগম্য নয়। অথচ দেশে কত দিবসই না আছে। যেমন: হাসি দিবস, ডিম দিবস, হাত ধোয়া দিবস, মীনা দিবস, কণ্ঠ দিবস, ইত্যাদি।’

পল্টনে কথা হয় এম ইয়ানুর হোসেন তুষারের সঙ্গে। তিনি   রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘কীভাবে ভুলব ২৫ মার্চের ভয়াল রাতের ইতিহাস। সে রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী নিরস্ত্র বাঙালির ওপর হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে। ২৫ মার্চকে তাই গণহত্যা দিবস ঘোষণায় সরকারকে মোবারকবাদ জানাই।’

গুলিস্তানে এ ব্যাপারে কথা হয় কেরানীগঞ্জের বাসিন্দা নুর হোসেনের সঙ্গে। তিনি রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা সংগ্রামের ডাক দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্ষমতা হস্তান্তর নিয়ে টালবাহানা যেন আরো বেড়ে যায়। উল্টো প্রণয়ন করা হয় সশস্ত্র হামলার নকশা। নকশা অনুযায়ী ২৫ মার্চ রাতে গণহত্যা চালানো হয়। দীর্ঘদিন পর একাত্তরের ২৫ মার্চ পাকিস্তানি বাহিনীর বর্বর হামলার কালো রাতকে ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে পালনের ঘোষণা দেয়ায় সরকারকে ধন্যবাদ।’

সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের ছাত্র সাগর রায় রাইজিংবিডকে বলেন, ‘২৫ মার্চকে কেবল গণহত্যা দিবস ঘোষণা করায় সরকারকে অভিনন্দন। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সব শ্রেণিতে পাঠ্য করা উচিত। পাকিস্তান আর বাংলাদেশ এ দুয়ের মধ্যে পার্থক্য সবার সামনে তুলে ধরা উচিত।’

তিনি বলেন, ‘খুবই দুঃখ লাগে, যখন দেখি জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান মুক্তিযোদ্ধারা বিভিন্ন জায়গায় নাজেহাল হচ্ছেন। দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে যাই, কারণ জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছেন অথচ আজ পথে ঘাটে নাজেহাল হচ্ছেন। তাদের সঠিক মর্যাদা দিতে আমরা পারিনি।’

এ ব্যাপারে পল্টনে কথা হয় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের জালাল আহমেদের সঙ্গে। তিনি রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘৭১ সালের ২৫ মার্চ দিনটি তো ভালোই ছিল। সারা দিন মানুষ উত্তাল থেকেছে। কিন্তু দিবাগত রাতে ঘটল নারকীয় ঘটনা।বাংলার মুক্তিকামী মানুষের আকাঙ্ক্ষাকে স্তব্ধ করে ২৫ মার্চ রাতে পৈশাচিকতা নেমে এলো। বাংলাদেশের অভ্যূদয়ের দীর্ঘ ৪৬ বছর পর হলেও দিনটিকে সরকার গণহত্যা দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছে- এ জন্য ধন্যবাদ।’

তিনি বলেন, ‘বাঙালিরা এদিন মোমবাতি জ্বালিয়ে তাদের শহীদ পূর্বপুরুষদের স্মরণ করবে। কবরখানা ও বধ্যভূমিতে গিয়ে তাদের জন্য দোয়া করবে। শোক পালন শেষে পরদিন ২৬ মার্চ বাঙালি জাতি স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করবে।’

বায়তুল মোকাররমে ফুটপাতের ব্যবসায়ী শাহরিয়ার খান শুভন বলেন, ‘একাত্তরের ২৫ মার্চ পাকিস্তানি বাহিনীর বর্বর হামলার কালো রাতকে গণহত্যা দিবস পালনের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। তাই এখন ২৫ মার্চের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির জন্য কাজ করতে হবে। এ জন্য বিশেষ কমিটি গঠন করা যেতে পারে। সরকারি সব কার্যক্রম সচল রেখেই ব্যাপক আকারে দিনটিকে পালন করা সম্ভব। আমাদের জাতীয় দিবসগুলো পালনে নতুন ধারার সংযোজন করেছে বর্তমান সরকার।’

ফকিরাপুলের বাসিন্দা শিক্ষার্থী আবিদ হাসান মিলন বলেন, ‘বাঙালির স্বাধীনতা আন্দোলনকে নিঃশেষ করে দিতে ২৫ মার্চ গণহত্যা চালায় পাক বাহিনী। নতুন প্রজন্মকে ১৯৭১ সালের ইতিহাস জানাতে ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস ঘোষণা করায় সরকারকে ধন্যবাদ। গণহত্যা দিবস নতুন প্রজন্মকে পথ দেখাবে।’

উল্লেখ্য, ২৫ মার্চ পাকিস্তানি বাহিনীর বর্বর হামলার কালো রাতকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে পালনের প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। পাশাপাশি বিষয়টিকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারি করা পরিপত্রে ‘ক’ শ্রেণিভুক্তকরণের প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে এই অনুমোদন দেয়া হয়। এর আগে গত ১১ মার্চ ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে পালনের প্রস্তাব সংসদে সর্বসম্মতভাবে পাস হয়।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৫ মার্চ ২০১৭/আসাদ/হাসান/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়