ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

সন্ত্রাস জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে : প্রধানমন্ত্রী

মো. মনিরুল ইসলাম টিটো || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৩১, ২৯ মার্চ ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সন্ত্রাস জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে : প্রধানমন্ত্রী

ফরিদপুর প্রতিনিধি : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে ২০১৯ সালের নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে দেশের উন্নয়ন হয়। আওয়ামী লীগ মানেই দেশের উন্নয়ন, আওয়ামী লীগ মানেই মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন।

বুধবার বিকেলে ফরিদপুর সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ মাঠে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, নৌকায় ভোট দিয়ে আপনারা উন্নয়ন পেয়েছেন।   বঙ্গবন্ধুর অনেক স্মৃতি বিজড়িত এই ফরিদপুর। এই ফরিদপুর ছিল অবহেলিত।২০০৮ সালে যখন ফরিদপুরে আসি তখন দেখেছি এখানে বিদ্যুৎ নেই, রাস্তা নেই, চারদিকে  সন্ত্রাসের রাজত্ব। বিএনপি ক্ষমতায় থেকে এই এলাকায় উন্নয়ন না করে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করেছে। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এসে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে এবং জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটায়।

শেখ হাসিনা বলেন, আমরা যখন উন্নয়ন নিয়ে ব্যস্ত থাকি, বিএনপি তখন জ্বালাও-পোড়াও রাজনীতি ও সন্ত্রাস আর জঙ্গিবাদ নিয়ে ব্যস্ত থাকে।

জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইসলাম শান্তির ধর্ম, ভ্রাতৃত্বের ধর্ম। ইসলাম কখনোই আত্মহননকে সমর্থন করে না। ২০১৩, ১৪ ও ১৫ সালে বিএনপি বাংলার মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে। আন্দোলনের নামে তারা মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে। ৩ হাজার ৬০০ জন নিরীহ মানুষকে আগুনে পুড়িয়ে দগ্ধ করেছে। ৩ হাজার ২৫২টি গাড়ি পুড়িয়েছে। তাদের হাত থেকে নারী-শিশু কেউই রক্ষা পায়নি। বায়তুল মোকাররমে পবিত্র কোরান শরীফ পুড়িয়েছে তারা। বিএনপির রাজনীতি পেট্রোল বোমা দিয়ে মানুষকে পুড়িয়ে হত্যার রাজনীতি। তাদের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষই প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল।

প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু বিধ্বস্ত একটি দেশ পেয়েছিলেন, যার কোনো রিজার্ভ ছিল না। কিন্তু তিন মাসেই দেশকে উন্নয়নের দিকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। বঙ্গবন্ধু একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ জাতি গড়তে চেয়েছিলেন। এরপর  ২১ বছর আওয়ামী লীগ ক্ষমতার বাইরে ছিল। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ পুনরায় ক্ষমতায় আসার পর দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা হয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি সরকারের আমলে সার চাওয়ায় ১৮ জন কৃষককে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল। আর আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে তিন দফায় সারের মূল্য কমিয়েছে। দুই কোটি কৃষককে কৃষি উপকরণ কার্ড দিয়েছে, যার মাধ্যমে তারা সরাসরি ভর্তুকি পেয়ে থাকে। ৫০ লাখ দরিদ্র পরিবারকে ৩ কেজি করে ১০ টাকা মূল্যের চাল দেওয়া হচ্ছে। আমাদের সরকার বয়স্কভাতা, বিধবাভাতা ও মুক্তিযোদ্ধাভাতা চালু করেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে কোনো মানুষ গৃহহীন থাকবে না। প্রত্যেক গৃহহীনকে চিহ্নিত করে  গৃহ নির্মাণ করে দেওয়া হবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ঢাকাকে ভেঙে আরো একটি বিভাগ করা হবে। ফরিদপুর, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, রাজবাড়ী ও গোপালগঞ্জকে নিয়ে বিভাগটি গঠন করা হবে।

ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সুবল চন্দ্র সাহার সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন- সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, দলের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন, প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফরুল্লাহ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও প্রাক্তন পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি, নৌপরিবহনমন্ত্রী শাহজাহান খান, প্রাক্তন বাণিজ্যমন্ত্রী ফারুক খান, ফরিদপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুর রহমান প্রমুখ।

এর আগে প্রধানমন্ত্রী ২০টি প্রকল্পের উদ্বোধন এবং আরো ১২টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।  যে ২০টি প্রকল্পের উদ্বোধন করা হয়েছে সেগুলো হচ্ছে- ফরিদপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের নতুন ভবন, পল্লীকবি জসীম উদদীন সংগ্রহশালা, ফরিদপুর ইনস্টিটিউট অব মেরিন টেকনোলোজি, শিশু একাডেমি, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের উপ-মহাপরিদর্শকের কার্যালয়, জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন, আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস, ফরিদপুর ৫০ মেগাওয়াট পিকিং পাওয়ার প্লান্ট, সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের একাডেমিক কাম পরীক্ষা হল, সদর উপজেলার চরকমলাপুর খেয়াঘাট থেকে বিলমামুদপুর স্কুল সড়কে কুমার নদীর ওপর আরসিসি ব্রিজ, ভাঙ্গা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন, মধুখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীতকরণ, আঞ্চলিক নির্বাচন অফিস, বিএসটিআই ভবন, ভাঙ্গা থানা ভবন, মধুখালী ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন, সদর উপজেলা হতে বাখুন্ডা জিসি হয়ে রসুলপুর ভায়া চরনিখুরদি সড়ক, ফরিদপুর সদর উপজেলার ডিক্রিরচর ইউনিয়নের মুন্সিডাঙ্গী কমিউনিটি ক্লিনিক, ৩৩/১১ কেভি হারুকান্দি বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র।

যে ১২টি উন্নয়ন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী সেগুলো হচ্ছে- কুমার নদ পুনঃখনন, কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, আলফাডাঙ্গা থানা ভবন নির্মাণ, ফরিদপুর পুলিশ সুপারের কার্যালয়, পুলিশ হাসপাতাল, পুলিশ অফিসার্স মেস, সালথা টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজের একাডেমিক কাম প্রশাসনিক ভবন, চন্দ্রপাড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র, ফরিদপুর সরকারি সারদা সুন্দরী মহিলা কলেজের ছাত্রী নিবাস, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবন, ১৫০০ আসন বিশিষ্ট মাল্টিপারপাস হল রুম নির্মাণ, সালথা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন, সদরপুর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন প্রকল্প।  



রাইজিংবিডি/ফরিদপুর/২৯ মার্চ ২০১৭/মো. মনিরুল ইসলাম টিটো/রিশিত

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়