ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

রাজধানীতে সিটিং সার্ভিসে মনগড়া ভাড়া আদায়

হাসিবুল ইসলাম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:২৭, ২১ এপ্রিল ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
রাজধানীতে সিটিং সার্ভিসে মনগড়া ভাড়া আদায়

হাসিবুল ইসলাম মিথুন : রাজধানীতে পুনরায় চালু হওয়া সিটিং সার্ভিসে আগের মতোই মনগড়া ভাড়া আদায় করা হচ্ছে।

গাড়িতে ভাড়ার চার্ট প্রদর্শনের কথা থাকলেও তা দেখা যায়নি।  তাই সিটিং সার্ভিসের বিরুদ্ধে রয়েছে অধিকাংশ যাত্রী। অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ও বাসে ওঠার সুযোগ সীমিত থাকায় সিটিং সার্ভিস তুলে দেওয়ার পক্ষে তারা। গণপরিবহনের সংখ্যা বাড়ানো হলে লোকাল সার্ভিসেই সবাই নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারবেন বলে জানান যাত্রীরা।

রাজধানীর মিরপুর থেকে মতিঝিলগামী মাইনুল ইসলাম নামে এক যাত্রী বলেন, সিটিং সার্ভিস আবারো শুরু হয়েছে। এভারেস্ট নামে গুলিস্তানগামী বাসে আগের মতোই ভাড়া আদায় করা হচ্ছে।  মিরপুর থেকে ফার্মগেটের ভাড়া নিয়েছে ১৫ টাকা। বাসে ভাড়ার চার্টও নেই।

তিনি বলেন, সিটিং সার্ভিসের নিয়ম হচ্ছে নির্দিষ্ট স্থান থেকে গাড়ি ছাড়ার পরে আর কোথাও থেকে যাত্রী উঠানো যাবে না।  কিন্তু   সিটিং সার্ভিসের বাসগুলো যেখানে সেখানে থামিয়ে যাত্রী উঠাচ্ছে।

এদিকে যাত্রাবাড়ী থেকে গুলিস্তান পর্যন্ত বিআরটিএর নির্ধারিত ভাড়া পাঁচ টাকা। কিন্তু ট্রান্স সিলভা ও ৮ নম্বর বাসে ১০ টাকা করে ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। তবে শিকড় পরিবহন নিচ্ছে ৭ টাকা। অথচ গত চারদিন এসব কোম্পানির বাস কিছুটা কম ভাড়ায় যাত্রী পরিবহন করেছে। এখন প্রকাশ্যেই অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে।

ভাড়া বেশি নেওয়া হচ্ছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে ট্রান্স সিলভা পরিবহনের হেলপার বলেন, ‘মালিকরা যে ভাড়া নির্ধারণ করে দিয়েছে আমরা সেই ভাড়াই আদায় করছি।’

বিভিন্ন বাসে দেখা গেছে, বাসের হেলপারদের সঙ্গে যাত্রীদের ঝগড়া। প্রায় প্রত্যেকেরই অভিযোগ ভাড়া বেশি আদায় করা হচ্ছে।

উত্তরা থেকে এয়ারপোর্ট যাওয়ার জন্য প্রজাপতি পরিবহনের একটি বাসে উঠেছেন ইব্রাহীম হোসেন নামে এক যাত্রী। তিনি পাঁচ টাকা ভাড়া দিতে গেলে বাসের হেলপার ১০ টাকা দাবি করেন। হেলপার বলেন- আপনি এয়ারপোর্ট নামেন আর জসীমউদ্দিন নামেন ভাড়া দিতে হবে শেওড়া পর্যন্ত। শেষ পর্যন্ত ১০ টাকাই ভাড়া দিতে হয়েছে ইব্রাহীম হোসেনকে।

ইব্রাহীম হোসেন বলেন, রাজধানীতে দিন দিন বাসভাড়া নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। তাই খুব দ্রুত সরকারের উচিৎ এই সেক্টরে নজর দেওয়া।

আসিফ খান নামে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র জানান, মালিকদের সিটিং সার্ভিস বন্ধের সিদ্ধান্ত মূলত বাস-মিনিবাসের ভাড়া বাড়িয়ে নেওয়ার কৌশল। কিছুদিন পর এমনিতেই ভাড়া বাড়িয়ে পরিবহন কোম্পানিগুলো পুনরায় সিটিং সার্ভিস চালু করত।

কেউ কেউ আবার সিটিং সার্ভিস চালু হওয়াতে খুশি। তারা বলেন, ৫-৬ টাকা বেশি দিয়ে গন্তব্যে যেতে রাজি, তবুও হয়রানি চাই না। লোকাল করে কি লাভ হয়েছিল? ভাড়া তো আগের মতোই নিত। রাস্তায় বাস বন্ধ করে রেখেছিল। অনেকক্ষণ পর একটা আসলে তার মধ্যে ঠেসে ঠেসে যাত্রী তুলত। আমরা যারা সিটিং সার্ভিস বাসে উঠতাম, তারা জেনে-বুঝেই উঠতাম। সামনে দিয়ে লোকাল বাস অনেক সময় খালি চলে যেত, তবুও অপেক্ষা করতাম সিটিং সার্ভিসের জন্য।

বসুমতি পরিবহনের বাসে শেওড়া থেকে কালসী মোড় পর্যন্ত ২০ টাকা ভাড়া রাখা হচ্ছিল। এই পথের দূরত্ব ৬ কিলোমিটার। প্রতি কিলোমিটার ১ টাকা ৭০ পয়সা হিসেবে ভাড়া ১০ টাকা ২০ পয়সা হয়।

অন্যদিকে মোহাম্মদপুর থেকে মতিঝিলগামী দীপন বাস সার্ভিস আবার সিটিং সার্ভিস চালু করেছে। তবে তারা ভাড়া বাড়ায়নি। শিক্ষার্থীদের জন্য আগে হাফ ভাড়া ছিল, এখন সেই সুযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সর্বনিম্ন ভাড়া নেওয়া হচ্ছে আগের মতো ১০ টাকা।

সিটিং সার্ভিস বন্ধ করার ফলে যাত্রীসেবা না বেড়ে উল্টো দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে শর্তসাপেক্ষে ফের সিটিং সার্ভিস চালুর অনুমতি দেয় বিআরটিএ। শর্ত অনুসারে সিটিং সার্ভিস চালু থাকলেও যাত্রীদের কাছ থেকে বিআরটিএ নির্ধারণ করা ভাড়ার অতিরিক্ত আদায় করা যাবে না। এমন অভিযোগ পাওয়া গেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথা বলেছেন বিআরটিএ চেয়ারম্যান মশিউর রহমান।



রাইজিংবিডি/ ঢাকা/২১ এপ্রিল ২০১৭/হাসিবুল/উজ্জল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়