ঢাকা     বুধবার   ১৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৪ ১৪৩১

শবে মিরাজের শিক্ষা, গুরুত্ব ও করণীয়

শাহেদ হোসেন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:২২, ২৪ এপ্রিল ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
শবে মিরাজের শিক্ষা, গুরুত্ব ও করণীয়

শাহেদ হোসেন : মহানবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নবুওতের সুদীর্ঘ ২৩ বছরের জীবনের এক অসামান্য মোজেজা হচ্ছে মেরাজ। আভিধানিকভাবে মেরাজ অর্থ উর্দ্ধারোহন। নবুওতের দশম বর্ষের রজব মাসের ২৭ তারিখের রাতের কিছু অংশে মহান আল্লাহ তার বন্ধুকে নিজের কাছে ডেকে নিয়েছিলেন। ইসলামের ইতিহাসে একেই বলা হয় শবে মেরাজ।

রজবের ২৭ তারিখের রাতের যে অংশটুকু মহানবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহকে দর্শনের জন্য মক্কা থেকে যাত্রা করেছিলেন সেই রাতটিকে দুটি অংশে ভাগ করা হয়েছে। এর প্রথম অংশটিকে বলা হয়েছে ইসরা। আর দ্বিতীয় অংশটুকুকে বলা হয়েছে মেরাজ।

কুরআনেরপরিভাষায় ‘ইসরা’শব্দ দিয়ে মেরাজের ঘটনা ব্যাখ্যা করা হয়েছে। আর হাদিসের পরিভাষায় ‘উরজুন’শব্দ দিয়ে মেরাজের ঘটনার বর্ণনা করা হয়েছে। ‘ইসরা’ধাতু থেকে ‘আসরা’শব্দটি উৎসারিত। এর আভিধানিক অর্থে রাতে নিয়ে যাওয়া।আর সফরটি রাতের একাংশে সম্পাদিত হয়েছে বিধায় ঘটনাকে ইসরা বলা হয়।

‘উরজুন’ধাতু থেকে মেরাজ শব্দ উদগত হয়েছে।তার শাব্দিক অর্থ সিঁড়ি। যেহেতু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মসজিদুল আকসা থেকে সিঁড়ির মাধ্যমে (রফরফ বা বোরাক) আরোহণ করে বায়তুল মামুর এবং সিদরাতুল মুনতাহা পর্যন্ত পৌঁছেছিলেন। তাই তাঁর এই সফরকে মেরাজ বলা হয়।

ইসরা সম্পর্কে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, ‘পরমপবিত্র ও মহিমাময় সত্তা তিনি, যিনিস্বীয় বান্দাকে রাতের বেলা ভ্রমণ করিয়েছিলেন মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসা পর্যন্ত, যার চারদিকে আমি পর্যাপ্ত বরকত দান করেছিলাম যেন আমি তাঁকে আমার নিদর্শনাবলী (কুদরতিভাবে) দেখাতে পারি। নিশ্চয়ই তিনি অধিক শ্রবণকারী ও দর্শনশীল’ (সূরা বনি ইসরাইল :১)।

মেরাজ সম্পর্কে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সুরা আন নজমে বলেছেন, ‘তাঁর (মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দৃষ্টিভ্রম হয়নি এবং তিনি সীমালঙ্ঘনও করেননি।নিশ্চয়ই তিনি তাঁর পালনকর্তার মহান নিদর্শনাবলি অবলোকন করেছেন’ (আয়াত: ১৭-১৮)।

সীরাতে ইবনে ইসহাকে হাসান বসরী সূত্রে বলা হয়েছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লা্ল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘ আমি কা’বার হিজরের মাঝে শায়িত ছিলাম। হঠাৎ জিবরাইল (আ.) আমার কাছে উপস্থিত হলেন। তিনি আমাকে খোঁচা মেরে জাগালেন। আমি উঠে বসলাম। কিন্তু কিছুই দেখতে পেলাম না। আবার শুয়ে পড়লাম। তিনি আবারও জাগালেন। এবারও উঠে কিছু দেখতে পেলাম না। আমি তৃতীয়বার শুয়ে পড়লাম। তখন তিনি আগের মতো আমার ঘুম ভাঙালেন। এবার উঠে বসলে তিনি আমার হাত ধরলেন। আমি তার সাথে উঠে দাঁড়ালাম। তিনি আমাকে মসজিদের দরজার কাছে নিয়ে গেলেন।’

এরপরই বোরাকের পিঠে সওয়ার হয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যাত্রা শুরু হয়। যাত্রাপথে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে হিজরতের স্থান দেখানো হয়। পরে বিভিন্ন পয়গম্বরের স্মৃতিবিজড়িত স্থান অতিক্রম করে ‘বায়তুল মোকাদ্দাসে’পৌঁছান মহানবী ও জিবরাইল । এখানে তিনি পূর্ববর্তী সব নবী-রাসূলকে নিয়ে মসজিদে দু’রাকাত নামাজ পড়েন এবং তিনি নামাজের ইমামতি করেন।

নামাজ শেষে জিবরাইলের (আ) সাথে বোরাকের মাধ্যমে ঊর্ধ্বাকাশে যাত্রা করলেন মহানবী। সাত আকাশ, সিদরাতুল মোনতাহা, লাওহে মাহফুজ অতিক্রম করে পরম স্রষ্টার সান্নিধ্যে যেয়ে একান্ত আলাপ করেন মুহাম্মদ মুস্তাফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। বন্ধুর সঙ্গে আলাপ শেষে উম্মতের জন্য পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ নিয়ে পৃথিবীতে ফিরে আসেন তিনি।

ইসলামের ইতিহাসে মেরাজ অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। যখন সবদিক থেকে মহানবী মারাত্মক সঙ্কটের সম্মুখীন, সেই চরম দুঃসময়ে আল্লাহপাক তাঁর প্রিয় বন্ধুকে তাঁর সান্নিধ্য লাভের সুযোগ দিয়েছিলেন।

শবেমেরাজ উপলক্ষে বিশেষ কোনো এবাদতের দলিল হাদিসে পাওয়া যায় না। তবে রজব বরকতময় একটি মাস। রজব ও শাবান মাসকে আল্লাহর রাসুল রমজানের প্রস্তুতি মাস হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তাই রজব মাসকে যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে বেশি বেশি নফল রোজা ও নফল নামাজসহ অন্যান্য নেক আমলের প্রতি মনোনিবেশ করা উচিৎ।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৪ এপ্রিল ২০১৭/শাহেদ/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়