ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

রানা প্লাজার জায়গা এখন কচুরিপানা-মাদকে সয়লাব

আহমদ নূর || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৪০, ২৪ এপ্রিল ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
রানা প্লাজার জায়গা এখন কচুরিপানা-মাদকে সয়লাব

আহমদ নূর, সাভার থেকে ফিরে : চার বছর আগে যে রানা প্লাজা কর্মচাঞ্চল্য ও শ্রমিকদেরে আনাগোনায় মুখর থাকত, সময়ের বিবর্তনে সে জাগায় এখন পরিণত হয়েছে মাদসেবীদের আড্ডাখানা আর কচুরিপানার আবাসস্থলে। বছরের একটি দিন ছাড়া এখানে আর লোকসমাগম হয় না।

ধসে পড়া রানা প্লাজার ৫২ শতাংশ জায়গা ‍জুড়ে তৈরি হয়েছে একটি জলাভূমি। সেখানে স্থানীয়রা আবর্জনা ফেলেন। পুকুরে জন্মেছে কচুরিপানা; যা গবাদি পশুর জন্য সংগ্রহ করেন স্থানীয়রা। দিনের একটি নির্দিষ্ট সময়ে এখানে চলে মাদকসেবীদের আড্ডা। এখানে বসে নিরাপদে মাদক সেবন করেন আসক্তরা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পুরো জলাভূমি কচুরিপানার দখলে। গবাদি পশুর জন্য কচুরিপানা সংগ্রহ করার জন্য রয়েছে ডিঙি নৌকা। জলাভূমির চারপাশে ময়লার ভাগাড়। রয়েছে কিছু টং দোকান। কচুরিপানার ওপর দেখা গেছে ফেনসিডিল আর সিরিঞ্জ। দেখেই বোঝা যায়, এখানে মাদক সেবন করা হয়।



স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রাতের আঁধারে এ জায়গায় মাদকসেবীরা জড়ো হন। মাদকসেবীদের উৎপাত ঠেকাতে কয়েকবার টিন ও কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া হয়েছিল। তবে তাতে কোনো লাভ হয়নি।

স্থানীয় সাইফুর রহমান রাইজিংবিডিকে বলেন, ওই দিনের (২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল) কথা মনে পড়লে এখনও গা শিউরে ওঠে। এ জায়গা সংরক্ষণ করে রাখা হচ্ছে না। রাত হলেই মাদকসেবীরা এখানে আসর জমায়। সবাই বিষয়টি দেখে, কিন্তু কেউ কিছু বলে না।

এদিকে রানা প্লাজার সামনে নিহত শ্রমিকদের স্মরণে একটি স্থায়ী স্মৃতি স্তম্ভ তৈরি করার কথা থাকলেও তা এখনো হয়নি। অস্থায়ীভাবে একটি স্তম্ভ তৈরি করা হয়েছিল, তা এখন খুবই জরাজীর্ণ অবস্থায় আছে।

আরেক স্থানীয় মিজানুর রহমান বলেন, গত চার বছরে অনেক কিছু বদলে গেছে। কিন্তু স্বজন হারানোদের বুকচাপা আর্তনাদ আর কান্না এখনো থামেনি।



২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ডে অবস্থিত রানা প্লাজা ধসে পড়ে। ভয়াবহ এ দুর্ঘটনায় প্রাণ হারায় ১ হাজার ১৩৬ শ্রমিক। আহত অবস্থায় ধ্বংসস্তুপ থেকে উদ্ধার করা হয় ২ হাজার ৪৩৮ জনকে।

আগের দিন ফাটল চিহ্নিত হওয়ায় ২৪ এপ্রিল সকালে কাজে যোগ দিতে চাননি রানা প্লাজার পাঁচটি কারখানার শ্রমিকরা। কিন্তু ভবন মালিক ও যুবলীগ নেতা সোহেল রানার চাপেই তারা কাজে যোগ দিতে বাধ্য হন। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘটে স্মরণকালের ভয়াবহ প্রাণহানির ঘটনা।

ভবনটি ধ্বসে পড়ার পর সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস, র‌্যাব, পুলিশসহ সাধারণ জনগণ উদ্ধার তৎপরতায় নামেন। ধীরে ধীরে দীর্ঘ হয় উদ্ধার অভিযান। প্রথমবারের মতো এত বড় বিপর্যয়ের মুখোমুখি হন উদ্ধারকর্মীরা। টানা ২০ দিন ধরে চলে উদ্ধার তৎপরতা। সেনাবাহিনীর নবম পদাতিক ডিভিশনের তত্ত্বাবধায়নে একে একে ভবন থেকে বের করে আনা হয় লাশ। সাভার পৌর এলাকা লাশের নগরীতে পরিণত হয়। ১৭তম দিনে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় রেশমা নামের এক নারী শ্রমিককে।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৪ এপ্রিল ২০১৭/নূর/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়