ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

পরিবারের কাছে যেতে চায় মারুফা

মামুন খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৫০, ২৪ এপ্রিল ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
পরিবারের কাছে যেতে চায় মারুফা

মারুফা

নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকা শহর দেখতে বাবার সঙ্গে চাচার বাসায় যাচ্ছিল। বাস থেকে নেমে হঠাৎ হারিয়ে ফেলে বাবাকে। এরপর আর খুঁজে পায়নি বাবাকে। আর যাওয়া হয়নি চাচার বাসায়। এরপর থেকে তার স্থান হয়েছে গাজীপুরের কোনাবাড়ির কিশোরী উন্নয়ন কেন্দ্রে।

মারুফা, বয়স ১২ বছর। দুই বছর আগে যখন তার বয়স দশ বছর তখন সে তার বাবার সঙ্গে কুমিল্লা থেকে ঢাকায় চাচা সাইদুলের বাসায় বেড়াতে যাচ্ছিল। গাড়ি ঢাকা এসে পৌঁছালে নেমে পড়ে। সামনের দিকে হাঁটতে থাকে। হঠাৎ পিছনে তাকিয়ে দেখে তার বাবা নেই। এরপর অনেক খোজাখুঁজির পরও আর খুঁজে পায়নি বাবাকে।

বাবাকে খুঁজতে খুঁজতে চলে যায় মোহাম্মদপুর থানা এলাকায়। সেখানে সে কান্নাকাটি করছিল। তার কান্না দেখে এলাকার লোকজন মারুফাকে মোহাম্মদপুর থানায় দিয়ে আসে। মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ মারুফার কাছে তার ঠিকানা জানতে চায়। বাবা দেলোয়ার হোসেন এবং মা লাইলী বেগমের নাম বলে মারুফা। বাড়ি বাগেরহাটের মোড়লগঞ্জ বলতে পারলেও গ্রামের নাম বলতে পারেনি। ঢাকায় চাচার বাসা কোথায় সেটাও বলতে পারেনি। মারুফার এই তথ্যের ভিত্তিতে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ তার বাবাকে খুঁজতে থাকে।  বাবাকে না পেয়ে তাকে আদালতে হাজির করে গাজীপুরের কোনাবাড়ি  কিশোরী উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানোর আবেদন করে। আদালত তাকে সেখানে পাঠিয়ে দেন। এরপর থেকে মারুফার ঠিকানা হয়েছে গাজীপুরের কোনাবাড়ির কিশোরী উন্নয়ন কেন্দ্রে।

সোমবার মারুফাকে ঢাকার কিশোর আদালতে হাজির করা হয়। সেখানে কথা হয় এই প্রতিবেদকের সঙ্গে। কীভাবে হারিয়ে গেলে জানতে চাওয়া হলে মারুফা বলে, কুমিল্লা থেকে বাবার সঙ্গে  আমার চাচ্চু সাইদুলের বাসায় বেড়াতে আসি। গাড়ি থেকে নেমে সামনের দিকে হাঁটতে থাকি। কিছুক্ষণ পর পিছনে তাকিয়ে দেখি আমার বাবা নেই। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও বাবাকে আর পায়নি। গ্রামের বাড়ির বিষয়ে সে বলে, আমাদের গ্রামের বাড়ি বাগেরহাটের মোড়লগঞ্জের হাসপাতালের পাশের গ্রাম। তবে তারা কুমিল্লায় বাস করছে বলে জানায় মারুফা। সেখানে তার বাবা কৃষিকাজ করেন।

পরিবারের আর কে কে আছে জানতে চাইলে মারুফা বলেন, ‘মা-বাবা আর আমার চার বোন।’ চার বোনের নাম বলে দেয় মারুফা। তারা হলেন, বড় বোন কারিমা, এরপর হালিমা তারপর সে। আর তারপর তার দুই বোন রুবি ও স্বপ্না। কে বেশি আদর করে জানতে চাইলে, আম্মু সবচেয়ে বেশি আদর করে।

এরপর মারুফা বলেন, ‘আমি আমার মা-বাবা কাছে যেতে চাই। মা-বাবা ছাড়া আমি কখনো একা থাকি না। দুই বছর ধরে আমি আমার মা-বাবা বোনদের ছেড়ে একা আছি। তাদেরকে ছেড়ে থাকতে আমার খুব কষ্ট হয়, খারাপ লাগে। আমি আমার পরিবারের কাছে যেতে চাই।’

মারুফাকে সোমবার অপরাজেয় বাংলাদেশ নামে একটি সংস্থার জিম্মায় দেওয়ার বিষয়ে শুনানির জন্য দিন ধার্য ছিল। কিন্তু এদিন অপরাজেয় বাংলাদেশ এর পক্ষ থেকে কেউ আদালতে হাজির হননি। এজন্য ঢাকার শিশু আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক জাহিদুল কবির আগামিকাল জিম্মার দরখাস্ত শুনানির জন্য দিন ধার্য করেন।

অপরাজেয় বাংলাদেশ এর পক্ষের আইনজীবী মধু সূদন দেব বলেন, আদালত যদি মারুফাকে অপরাজেয় বাংলাদেশ এর কাছে জিম্মায় দেয়। তাহলে সংস্থাটি সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে তাকে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য। যতদিন না মারুফাকে পরিবারের লোকজনের কাছে ফিরিয়ে দিতে পারবে ততদিন সে অপরাজেয় বাংলাদেশ এর কাছেই থাকবে।

প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালের ২৩ মার্চ রাতে রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানাধীন আল্লাহ করিম মসজিদের পাশে কান্নারত অবস্থায় মারুফাকে দেখতে পায় এলাকাবাসী। এরপর এলাকাবাসী মারুফাকে মোহাম্মদপুর থানায় ডিউটিরত অফিসার এএসআই মিলন কুমার বিশ্বাসের কাছে তুলে দেয়।

এদিকে পুলিশ বলছে, মারুফা থানা ও জেলার নাম বলতে পারলেও গ্রামের নাম বলতে পারেনা। মারুফাকে তার বাবা ঢাকায় নিয়ে আসার পর তাকে রেখে বাস কাউন্টারে যাওয়ার কথা বলে গেলে সে হারিয়ে যায়। মারুফা হারিয়ে গেলেও তার বাবা কোনো খোঁজখবর নেননি বলে পুলিশ আদালতকে জানায়।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৪ এপ্রিল ২০১৭/মামুন খান/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়