ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

সাজেকে খাদ্যের তীব্র সংকট

নুরুচ্ছাফা মানিক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৫০, ২৬ এপ্রিল ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সাজেকে খাদ্যের তীব্র সংকট

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি : রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ইউনিয়নে জুমিয়া পরিবারগুলোতে তিন মাস ধরে খাদ্য সংকট চলছে।

পাহাড়ের পাদদেশে জুম চাষ, বাঁশ ও বনজ সম্পদ আহরণ করে জীবিকা নির্বাহ করে সাজেকের দুর্গম গ্রামগুলোর বাসিন্দারা। কিন্তু এ বছর জুম চাষে বিপর্যয় হওয়ায় এবং প্রাকৃতিক সম্পদের উৎস হ্রাস পাওয়ায় প্রাক-বর্ষা মৌসুম থেকে সাজেকের ১৫-২০টি দুর্গম গ্রামে অভাব দেখা দিয়েছে। যার প্রভাব পড়ছে খাদ্যে।

সাজেকের অধিকাংশ গ্রামে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা নেই। যার কারণে পায়ে হাঁটা পথে মাচালং বাজার থেকে কোনো পণ্য ক্রয় করে এ সব গ্রামে নেওয়া পর্যন্ত খরচ পড়ে ক্রয়মূল্যের তিনগুণ। যার কারণে সাজেকের অধিকাংশ গ্রামের মানুষ খাদ্য ক্রয় করতে পাচ্ছে না। এতে করে তীব্র খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে।

সাজেকের কজতলী পাড়ার গ্রাম্য প্রধান কালা চাঁন ত্রিপুরা জানান, তার গ্রামের বাসিন্দারা তীব্র খাদ্য সংকটে পড়েছে। তারা জুম চাষ ও পাহাড় থেকে বনজ সম্পদ আহরণ করে জীবিকা চালায়। কিন্তু বিগত সময়ে জুম চাষে কম ফসল আসায় গত চৈত্র মাস থেকে কজতলী গ্রামসহ অনেক গ্রামে খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে।

সাজেক ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার ডহিন্দ্র লাল ত্রিপুরা জানান, সাজেকের পুরান জোপুই, নতুন জোপুই, উদলছড়ি, পুরান থাঙনঙ, নতুন থাঙনঙ থারুম পাড়াসহ ২০টির মতো গ্রামের মানুষ অভাবের কারণে চাল কিনতে পারছে না। এসব গ্রামে প্রতি কেজি চাল বিক্রি হচ্ছে ৯০-১১০ টাকায়। জরুরি ভিত্তিতে যদি দুর্গত এলাকায় ত্রাণ সরবরাহ করা না যায় তাহলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে।

সংরক্ষিত মহিলা মেম্বার সুশীলা চাকমা জানান, প্রতিবছর সাজেকের দুর্গম গ্রামগুলোতে খাদ্য সংকট দেখা দেয়। এবার তীব্রভাবে সংকট হওয়ার কারণ হচ্ছে জুমের ফসল কম হওয়া। খাদ্যের অভাবে দুর্গম গ্রামের মানুষগুলো কলা গাছের নরম অংশ খেয়ে আছে বলে শোনা যাচ্ছে। এ সংকটে সবচেয়ে বেশি  ভুগছে নারী ও শিশুরা।

বাঘাইহাট বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. জুয়েল বলেন, বাঘাইহাট ও মাচালং বাজারে পণ্যের মূল্য স্বাভাবিক। কিন্তু কিছু এলাকায় পণ্যের মূল্য অস্বাভাবিক বলে শুনেছেন। যার মূল কারণ সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকা। পায়ে হাঁটা পথে মাচালং বাজার থেকে ব্যাটলিং কিংবা অন্যান্য বাজারে পণ্য নিয়ে যেতে খরচ পড়ে ক্রয়মূল্যের ৩-৪ গুণ। যার কারণে সেসব ব্যবসায়ীরা বেশি দামে পণ্য বিক্রি করছেন।

সাজেক ইউপি চেয়ারম্যান নেলসন চাকমা বলেন, খাদ্য সংকটের কথা শুনে গত ২১ এপ্রিল দুর্গত এলাকার ৪১০ পরিবারকে ১০ কেজি করে চাল বিতরণ করা হয়। এর দুই মাস আগে খাদ্য সংকটের কথা উপজেলা পরিষদে মাসিক সমন্বয় সভায় ইউএনওকে অবগত করা হয়। জরুরিভিত্তিতে দুর্গত এলাকার জন্য ৬০০ মেট্টিক টন ত্রাণ চেয়ে আবেদন করা হয়েছে এবং সমস্যরা স্থায়ী সমাধানের জন্য দ্রুত সময়ের মধ্যে সাজেকে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা ত্বরান্বিত করার পক্ষে জোর দেন তিনি। 

রাঙামাটির জেলা প্রশাসক (ভারপ্রাপ্ত) প্রকাশ কান্তি চৌধুরী জানান, দুর্গত এলাকার জন্য সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান-মেম্বারদের মাধ্যমে পাঁচ মেট্টিক টন খাদ্যশস্য বিতরণ করা হয়েছে। ইউএনওকে তালিকা তৈরি করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।   



রাইজিংবিডি/খাগড়াছড়ি/২৬ এপ্রিল ২০১৭/নুরুচ্ছাফা মানিক/বকুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়