ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

ফুপুর কোলে ফিরলো বাক প্রতিবন্ধী রানু

মামুন খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:১৪, ৩০ এপ্রিল ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ফুপুর কোলে ফিরলো বাক প্রতিবন্ধী রানু

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজধানী ঢাকার একটি রাস্তা থেকে উদ্ধার হওয়া বাক প্রতিবন্ধী শিশু রানু সাদিয়া তার স্বজনকে ফিরে পেয়েছে।

রোববার রানুকে তার পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তরের জন্য দিন ধার্য ছিল। এজন্য রানুকে গাজীপুরের কিশোরী উন্নয়ন কেন্দ্র থেকে ঢাকায় শিশু আদালতে হাজির করা হয়। এদিকে রানুকে নেয়ার জন্য তার ফুফু গুলবাহার আদালতে প্রমাণপত্র দাখিল করেন। তারই পরিপ্রেক্ষিতে আদালত রানু সাদিয়াকে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তরের আদেশ দেন।

রানুর ফুফু গুলবাহার বলেন, ‘এতদিন পর রানুকে কাছে পেয়ে শান্তি পেলাম। আমি খুব খুশি। আর ওকে চোখের আড়াল করবো না। আপনারা সবাই ওর জন্য দোয়া করবেন।’

তিনি আরো বলেন, ‘ফেসবুকের মাধ্যমে রানুর কথা জানতে পারি। এরপর টঙ্গী কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে গিয়ে খবর নেই। সেখান থেকে আমাদের গাজীপুরের কিশোরী উন্নয়ন কেন্দ্রে যোগাযোগ করার কথা বলা হয়। এরপর আমরা সেখানে যোগাযোগ করি।’

গুলবাহার জানান, রানুরা দুই বোন এবং দুজনই বাক প্রতিবন্ধী। তাদের বাবা দানা মিয়া মালয়েশিয়া যাওয়ার পর তার কোন সন্ধান পাওয়া যায় নি। বেঁচে আছেন কি না, তা-ও জানা যায়নি। দুই মেয়ে বাক প্রতিবন্ধী হওয়ায় তাদের মা সুফলা বেগম তাদের ফেলে রেখে অন্যত্র বিয়ে করেছেন। মেয়েদের কোনো খোঁজ খবর নেন না।

গুলবাহার বলেন, ‘ছোট থেকেই রানুকে পালন করে বড় করছি আমি। রানু হারিয়ে যাওয়ার পর অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তাকে পাইনি। রানুর ছোট বোন আনু আমার আরেক বোন ফাতেমার কাছে বড় হচ্ছে।’

এদিকে রানু ইশারা ইঙ্গিতে বোঝানোর চেষ্টা করেছে যে, গুলবাহারই তার ফুফু। সে তার কোলে ফিরে যেতে চায়।

রানুর আইনজীবী ফারুক আহমেদ জানান, মেয়েটির বাবা নেই। মায়ের অন্যত্র বিয়ে হয়ে গেছে। তার ফুফু গুলবাহার তাকে নিতে এসেছেন। আদালত প্রমাণপত্র দেখে রানুকে তার ফুফুর কাছে দিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘আমার আইন পেশার ২৪ বছরের মধ্যে আমি আজকে সবচেয়ে বেশি খুশি। নিজেকে ধন্য মনে হয়েছে। নিজের মধ্যে তৃপ্তি কাজ করছে, রানুকে তার পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিতে পেরে। আপনারা সবাই ওর জন্য দোয়া করবেন যেন ও ভালো থাকে।’

জানা গেছে, রানুকে আদালতে নিয়ে আসার পর আদালতের অনুমতি নিয়ে রানুর আইনজীবী ফারুক আহমেদ তাকে কেউ চেনেন কি না- এ ধরনের একটি পোস্ট ফেসবুকে দেন। পোস্ট দেয়ার কিছুদিন পর রানুর এক সৌদি প্রবাসী আত্মীয় তাকে চিনতে পারেন। এরপর ওই আত্মীয় রানুর ফুফু গুলবাহারকে বিষয়টি অবহিত করেন। এরপর তারা যোগাযোগ করে রানুকে জিম্মায় নেয়ার আবেদন করেন।

এদিকে যখন রানু জানতে পারে যে, সে তার ফুফুর সাথে যেতে পারছে, তখন সে আনন্দে কেঁদে ফেলে। তার ফুফুর চোখেও এসময় আনন্দাশ্রু দেখা যায়।

মামলার নথি থেকে জানা যায়, ২০১৬ সালের ১৯ আগস্ট রাত ১১টার দিকে রাজধানীর খিলগাঁও চৌরাস্তায় মুসলিম হোটেলের সামনে সবুজ নামের এক ছেলে রানুকে দেখতে পান। পরে তিনি তাকে নিয়ে খিলগাঁও থানায় যান এবং সাধারণ ডায়েরি করেন। পরিবারের কোনো সন্ধান না পাওয়ায় রানুকে আদালতের নির্দেশে গাজীপুরে কিশোরী উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩০ এপ্রিল ২০১৭/মামুন খান/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়