ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

আয় চলে আয়রে ধূমকেতু

শাহ মতিন টিপু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৩:১৫, ২৫ মে ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
আয় চলে আয়রে ধূমকেতু

নিজস্ব প্রতিবেদক : নজরুল নিয়ে এসেছিলেন দ্রোহ, প্রেম, সাম্য, মানবতা ও শোষিত বঞ্চিত মানুষের মুক্তির বার্তা। তার কবিতা, গান ও সাহিত্য কর্ম বাংলা সাহিত্যে নবজাগরণ সৃষ্টি করেছিল। বাংলা কবিতায় নজরুলের আর্বিভাব একেবারেই ধুমকেতুর মত।

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার সম্পর্কে বলেছেন, ‘কাজী নজরুল ইসলাম কল্যাণীয়েষু, আয় চলে আয়রে ধূমকেতু/ আঁধারে বাঁধ অগ্নিসেতু, দুর্দিনের এই দুর্গশিরে উড়িয়ে দে তোর বিজয় কেতন।’

আজ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১১৮তম জন্মবার্ষিকী ।১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দের ২৪ মে (জ্যৈষ্ঠ ১১, ১৩০৬ বঙ্গাব্দ) তিনি পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

নজরুল ছিলেন অসাম্প্রদায়িকতা ও জাতীয়তাবোধের মূর্ত প্রতীক। অত্যাচার, নিপীড়ন ও শোষণের বিরুদ্ধে ছিলেন উচ্চকণ্ঠ। বিদ্রোহী কবি তার অন্য পরিচয়। তার শিকল ভাঙ্গার গানে জেগে উঠেছিল ঝিমিয়ে পড়া বাঙালি জাতি।

ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে তার লেখনী এ উপমহাদেশের মানুষকে উজ্জীবিত করেছিল।  বিদ্রোহী কবির অগ্নিঝরা কবিতা ও গান আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে ছিল অনন্ত প্রেরণার উৎস। শৌর্য-বীর্য ও স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের মন্ত্রে উজ্জীবিত কবির গান ‘চল্ চল্ চল্’ বাংলাদেশের রণসংগীত ।

আবার নজরুল ছিলেন মানবতা ও সাম্যের কবি। কবি নজরুল ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী, তিনি একাধারে ছিলেন গল্পকার, ঔপন্যাসিক, নাট্যকার, প্রাবন্ধিক, সাংবাদিক, সম্পাদক ও অনুবাদক। তিনি অনন্যসাধারণ লেখনীর মাধ্যমে আমাদের সাহিত্য, সংগীত ও সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করেছেন।

জাতি আজ তার জন্মদিনে জাতীয় কবিকে বিশেষভাবে স্মরণ করছে। বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানে কবিকে নিয়ে আয়োজন করেছে স্মরণ অনুষ্ঠানের।বেতার ও টিভি-চ্যানেলেও বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচারিত হচ্ছে।রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় কবির জন্মদিন উপলক্ষে বাণী প্রদান করেছেন।

রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ প্রদত্ত বাণীতে বলেন, সাম্য ও মানবতার কবি কাজী নজরুল ইসলাম বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতির ইতিহাসে একজন উজ্জ্বল নক্ষত্র। তার সাহিত্য সম্ভার যেমন বিশাল তেমনি বর্ণাঢ্য। তার কালজয়ী লেখায় ঋদ্ধ হয়েছে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য। তিনি একাধারে কবি, সংগীতজ্ঞ, কথা সাহিত্যিক, নাট্যকার, প্রাবন্ধিক ও সমাজ-সংস্কারক। কবির লেখনী শোষিত-নির্যাতিত ও বঞ্চিতদের অধিকার আদায়ে সকলকে সোচ্চার করে, শিক্ষা দেয় অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে।

রাষ্ট্রপতি নজরুল চর্চার মাধ্যমে দেশপ্রেম, সততা ও নিষ্ঠা দিয়ে সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠন করার অঙ্গীকার নিতে নতুন প্রজন্মের প্রতি আহবান জানিয়েছেন।

প্রদত্ত বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের প্রকৃতি, মানুষ ও মানুষের অকৃত্রিম ভালোবাসা নজরুলকে গভীরভাবে আকর্ষণ করেছিল।কবির কৈশোর কাটে ময়মনসিংহের ত্রিশালে। তিনি কুমিল্লা ও ঢাকায় থেকেছেন। এদেশের মানুষের সাথে ঘনিষ্ঠ ও প্রীতিপূর্ণ আত্মিক সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কবি নজরুল ইসলামকে জাতীয় কবি হিসেবে ঘোষণা করেন এবং তাকে সপরিবারে বাংলাদেশে এনে নাগরিকত্ব দেন। জাতির পিতা অসুস্থ নজরুলের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। এ মাটিতেই কবি চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন।

আজ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১১৮তম জন্মবার্ষিকী উদযাপনের উদ্বোধন অনুষ্ঠান বাংলাদেশ বেতার সরাসরি সম্প্রচার করবে। বিকাল সাড়ে ৩টায় রাজধানী ঢাকার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠান হবে। এতে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। অনুষ্ঠানটি বিটিসিএল লাইনের মাধ্যমে বাংলাদেশ বেতার ঢাকা-ক অর্থাৎ ৬৯৩ কিলোহার্জে ও এফএম ১০৩ দশমিক ২ মেগাহার্জে এবং ওয়েবসাইট www.bctar.gov.bd থেকে সরাসরি সম্প্রচার করবে।

আজ সকালে  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ প্রাঙ্গনে কবির সমাধিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করবে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মদিন যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের জন্য আওয়ামী লীগ, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সকল স্তরের নেতা-কর্মী, সমর্থক, শুভানুধ্যায়ী ও দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহণ করেছে। এ উপলক্ষে আজ সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী এবং ছাত্রী-ছাত্রীরা কলা ভবন প্রাঙ্গণে অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে সমবেত হবেন এবং সেখান থেকে উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের নেতৃত্বে শোভাযাত্রা সহকারে কবির মাজারে গমন করবেন।উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে কবির মাজারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।

মাজার প্রাঙ্গণে উপাচার্যের সভাপতিত্বে এক স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত হবে। এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় “সাম্রাজ্যবাদ ও উপনিবেশবাদ বিরোধী সৈনিক নজরুল।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তঃধর্মীয় ও আন্তঃসাংস্কৃতিক সংলাপ কেন্দ্র (সিআইআইডি) এবং বিশ্ব ধর্ম ও সংস্কৃতি বিভাগের যৌথ উদ্যোগেও সকালে অপরাজেয় বাংলার পাদদেশ থেকে জাতীয় কবির মাজার পর্যন্ত র‌্যালি অনুষ্ঠিত হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবের উদ্যোগে সন্ধ্যা ৭টার দিকে ‘রবীন্দ্র-নজরুল সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা’র আয়োজন করা হয়েছে । এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে প্রো-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. নাসরীন আহমাদ, প্রো-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো: আখতারুজ্জামান ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো: কামাল উদ্দীন উপস্থিত থাকবেন।

স্বাগত বক্তব্য রাখবেন ক্লাবের সম্পাদক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বাহাউদ্দিন এবং সমাপনী বক্তব্য রাখবেন ক্লাবের সভাপতি অধ্যাপক ড. এ বি এম শহিদুল ইসলাম। সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় থাকবে সঙ্গীত, আবৃত্তি, মূকাভিনয় ও নৃত্য পরিবেশন।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৫ মে ২০১৭/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়