ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

রমজান হলো তাকওয়ার প্রশিক্ষণ

আসিফ খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:৩৮, ২৯ মে ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
রমজান হলো তাকওয়ার প্রশিক্ষণ

রমজান মাসে রোজা রাখা ফরজ। এটা এ মাসের বিশেষ আমল। সব আদব রক্ষা করে পুরো মাস রোজা রাখা প্রত্যেক মুসলিমের কর্তব্য। সিয়াম বা রোজা রাখার উদ্দেশ্যে শেষ রাতে পানাহার করাকে সাহরি বলে। এই সাহরি গ্রহণ করা সুন্নত। রোজাদারকে অবশ্যই রোজার নিয়ত করতে হবে। সাহরি না খেলে রোজা হবে। কিন্তু নিয়ত না করলে রোজা হবে না। যদি কেউ সাহরি খাওয়ার পর নিয়ত না করে তাহলে দুপুর ১২টার আগে যে কোনো সময় নিয়ত করলেও হবে।

সাহরি খাওয়া সম্পর্কে রাসুলে করিম হযরত মোহাম্মদ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা সাহরি খাও; নিশ্চয় সাহরি খাওয়ার মধ্যে বরকত নিহিত আছে।’ ( বুখারি ও মুসলিম)। হজরত আমর ইবনুল আস (রা.) হতে বর্ণিত- রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, ‘আমাদের (মুসলমানদের) রোজা আর আহলে কিতাব (ইহুদি-খ্রিষ্টান)-এর রোজার মধ্যে পার্থক্য হলো সাহরি খাওয়া আর না-খাওয়া।’

রমজান হলো তাকওয়ার প্রশিক্ষণ। লক্ষ্য হলো রমজান ছাড়া বাকি ১১ মাস রমজানের মতো পালন করার সামর্থ্য অর্জন করা, দেহকে হারাম খাদ্য গ্রহণ ও হারাম কাজ থেকে বিরত রাখা এবং মনকে অপবিত্র চিন্তাভাবনা, হারাম কল্পনা ও পরিকল্পনা থেকে পবিত্র রাখা। এ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে সুরা বাকারায় আল্লাহ তাআলা বলেছেন- ‘হে মুমিনগণ! তোমাদের প্রতি রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেরূপ ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের প্রতি; আশা করা যায় যে তোমরা তাকওয়া অর্জন করবে।’

যথাযথভাবে এই তাকওয়া অর্জন করতে হলে আমাদের হালাল উপার্জন এবং হালাল খাবার গ্রহণ করা প্রয়োজন। রমজানে সাহরি ও ইফতারকালে হালাল খাদ্য গ্রহণ করতে হবে। পাশাপাশি ভারসাম্যপূর্ণ পুষ্টিকর খাবারের বিষয়েও লক্ষ রাখতে হবে। স্বাস্থ্যসম্মত খাবার গ্রহণ করতে হবে যাতে সঠিক ও সুন্দরভাবে আমরা ইবাদত করতে পারি। শারীরিক ও মানসিকভাবে যথাযথ প্রস্তুতি না থাকলে রোজা পালন ও তারাবির নামাজ আদায়ে বিঘ্ন ঘটতে পারে।

রমজান মাসে রাব্বুল আলামিন তাঁর বান্দার ইবাদতের প্রতিদান দিবেন অনেক বেশি। এই মাসের নেক আমল অন্য মাসের তুলনায় বহুগুণ বৃদ্ধি করা হয়। তাই বেশি বেশি ইবাদতের জন্য আমাদের সুস্থ থাকা জরুরি। বিভিন্ন কারণে অনেকের নিয়মিত দিনে-রাতে ওষুধ সেবন করতে হয়। এক্ষেত্রে রোজা পালনকারীরা চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ গ্রহণের সময় নির্ধারণ করে নিলে ভাল। শারীরিক ব্যায়াম বা হাঁটাহাঁটি যাদের করতে হয় এ মাসে তাঁদেরও চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী উপযুক্ত সময় নির্দিষ্ট করে নেওয়া প্রয়োজন।

এ মাস কোরআন অবতরণের মাস। হাদিস শরিফে এসেছে- ‘হযরত জিবরাইল (আ.) রমযানের শেষ পর্যন্ত প্রত্যেক রাতে রাসূলুল্লাহ রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন এবং রাসূলুল্লাহ (সা.) তাঁকে কুরআন মজিদ শোনাতেন। -(সহিহ বুখারী, ১৯০২)

অতএব আমাদের প্রত্যেকের উচিত রমজানে অধিক পরিমাণে কুরআন তেলাওয়াত করা এবং অন্তত একবার হলেও কোরআন মজিদ খতম করা।

রমজান মাস রহমত, বরকত, মাগফিরাত, জাহান্নাম থেকে মুক্তি ও জান্নাত লাভের মাস। রাব্বুল আলামিন পবিত্র কোরআনে বলেছেন- রোজা ধৈর্য্যের ফলস্বরূপ। আর ধৈর্যধারণকারীদের জন্য আল্লাহ তাআলার সুসংবাদ হল-‘ধৈর্য্য ধারণকারীগণই অগণিত সওয়াবের অধিকারী হবে।’ –(সূরা জুমার, ১০)

রোজার সওয়াব সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেন- ‘নিশ্চয় রোজা আমার জন্য, আর এর প্রতিদান স্বয়ং আমিই দিব।’ -(সহিহ বুখারী, ১৮৯৪) ও (সহিহ মুসলিম, ১১৫১/১৬৫)

যেহেতু এ মাসে আল্লাহ তা’আলার অধিক নৈকট্য লাভ ও সওয়াব হাসিলের মাধ্যমে পরকালীন পাথেয় অর্জনের সুযোগ রয়েছে। তাই বান্দার উচিত, বেশি বেশি ইবাদত-বন্দেগী, যিকির-আযকারে সময় কাটানো। এভাবে এক মাস রোজা রাখা সম্ভব হলে ইনশাআল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদেরকে তাকওয়া ও সংযমের মহামূল্য সম্পদ দান করবেন, যার মাধ্যমে আমাদের ইহকাল ও পরকালে প্রভূত কল্যাণ সাধিত হবে। আল্লাহ তাআলা আমাদের সে তাওফিক দান করুন। -আমিন।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৯ মে ২০১৭/আসিফ খান/এনএ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়