ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

শাওয়ালের ছয় রোজায় সারা বছরই রোজা রাখার সওয়াব

আসিফ খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:২৭, ২৪ জুন ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
শাওয়ালের ছয় রোজায় সারা বছরই রোজা রাখার সওয়াব

আসিফ খান : মাসব্যাপী সিয়াম সাধনা শেষ হতে চলেছে। রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের মাসের পর শুরু হবে শাওয়াল মাস। দীর্ঘ এক মাস রমজানের রোজা পালনকালে রাব্বুল আলামিনের অফুরন্ত নেয়ামত বর্ষিত হয়েছে আমাদের ওপর। আগামী বছর আমরা আবার এই নেয়ামত ও ফজিলতপূর্ণ মাস পাব কি না, সে পর্যন্ত বেঁচে থাকব কি না জানি না। এজন্য হয়তো অনেকের মনে আফসোস হতে পারে।

তবে মোমিন-মুসলমানের জন্য সারা বছর রোজা রাখার সওয়াব পাওয়ার একটি সুবর্ণ সুযোগ রয়েছে। সেটি হচ্ছে শাওয়াল মাসে ছয় রোজা রাখা। যে ব্যক্তি এই ছয়টি রোজা রাখবেন সারা বছর তিনি রোজা রাখার সওয়াব পাবেন।

এ সম্পর্কে রাসূল (সা.) তাঁর সাহাবিদের শাওয়াল মাসের এই ছয় রোযা রাখার প্রতি উৎসাহ দিতেন। তিনি বলেছেন- ‘যে ব্যক্তি রমজান মাসের রোজা রাখলো অতঃপর শাওয়াল মাসের ছয় রোজাও রাখল ওই ব্যক্তি যেন সারা বছরই রোজা রাখল। (মুসলিম)

এ হাদিসের ব্যাখ্যায় ইমাম নববী (র.) বলেন, আলেম সম্প্রদায় বলেন, ‘এই ছয় রোজাকে পূরো এক বছরের রোজার ছোয়াবের পর্যায়ভূক্ত করা হয়েছে এই জন্য যে,বান্দার প্রতিটি ভাল আমলকে আল্লাহ তায়ালা দশগুন সওয়াব দান করেন। এ হিসেবে রমজান মাসের রোজা দশ মাসের সওয়াব এবং এই ছয় রোজা দুমাসের সওয়াবের অন্তর্ভূক্ত মনে করা হয়।’

শাওয়াল মাসের ছয় রোজা রাখা হলো, আল্লাহ তাআলা রমজান মাসের রোজা রাখার তাওফিক দান করেছেন সে জন্য শাওয়াল মাসের ছয়টি রোজা রাখার মাধ্যমে তাঁর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা। এমনিভাবে সৎ আমলের ওপর প্রতিষ্ঠিত ও অবিচল থাকারও প্রমাণ স্বরূপ।

হাফেয ইবনু রজব (র.) বলেন, ‘রমজান মাসের রোজা রাখার তাওফিক পাওয়ার পর আবার গুনাহে লিপ্ত হওয়ার উদাহরণ হলো নেয়ামতের এমন কুফরি করা যেমন ঈমান আনার পর মুরতাদ হয়ে যাওয়া।’

প্রকৃতপক্ষে ইবাদতের জন্যে কোন সময় নির্ধারিত নেই যে, কেবল ওই সময়েই ইবাদত করতে হবে। আর সময় শেষ হয়ে গেলে আবার গুনাহের কাজে লিপ্ত হবে। বরং মানুষ দুনিয়াতে যত দিন বেঁচে থাকবে ততদিন তাকে ইবাদত করতে হবে। এমনকি এ ইবাদত মৃত্যুর পূর্ব মূহূর্ত পর্যন্ত চালু থাকবে।

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘এবং তুমি তোমার মৃত্যু উপস্থিত হওয়া পর্যন্ত তোমার প্রতিপালকের ইবাদত কর। (সূরা হিজর: ৯৯)

বাসির আল হাফিকে (র.) বলা হলো, কিছু লোক শুধু রমজান মাসেই ইবাদত করে। একথা শুনে তিনি বললেন, ‘তারাই নিকৃষ্ট লোক যারা শুধু রমজান মাস এলে আল্লাহকে ডাকে। প্রকৃত সৎ লোক তো তারাই যারা সারা বছর ধরে আল্লাহকে ডাকে।’

তবে শাওয়াল মাসের প্রথম দিন অর্থাৎ ঈদুল ফিতরের দিন রোজা রাখা নিষিদ্ধ। তাই ওই দিন বাদে এই রোজা রাখার নিয়ম হচ্ছে ঈদুল ফিতরের পর দিন থেকে মাসের শেষ দিন পর্যন্ত কোনো বিরতি না দিয়ে অথবা ভেঙ্গে ভেঙ্গে এই রোজা রাখা যায়।

শাওয়াল মাসের ছয় রোজা এবং শাবানের রোজা রাখা হলো ফরজ নামাযের আগে ও পরে সুন্নাত নামাযের মত। ফরজ ইবাদতে যে সমস্ত ত্রুটি- বিচ্যুতি হয়ে যায় তা নফলের মাধ্যমে পূর্ণতা লাভ করে। অনুরূপ রমজানের রোজা পালন করতে গিয়ে ভুল-ত্রুটি হলে শাওয়ালের এ ছয় রোজা পালনের মাধ্যমে তাকে পূর্ণতা দেওয়া হয়। কেননা অধিকাংশ মানুষকেই লক্ষ্য করা যায় তাদের রোজাতে ভুল-ত্রুটি রয়েছে এবং কিয়ামতে যখন ফরজ দ্বারা তার হিসাব পূর্ণ হবে না তখন নফল দ্বারা তা পূর্ণ করা হবে।

রমজান মাসের পর শাওয়াল মাসের রোজা রাখা হলো রমজান মাসের রোজা কবুল হওয়ার আলামত। কেননা আল্লাহ যখন কোন ভাল আমল কবুল করেন তখন পরবর্তীতে তাকে আরো ভাল আমল করার তাওফিক দান করেন। ঈমানের সাথে এবং সওয়াবের আশায় রমজান মাসের রোজা পালন করলে নিশ্চিতভাবে বান্দার গুনাহসমূহ বিদূরিত হয়।

রমজান মাসে রোজাদার ব্যক্তি বছরের অন্যান্য দিনসমূহের সওয়াব লাভ করবে। আর সেই দিনগুলি হলো রোজা ভাংগার বৈধ দিনসমূহ। সুতরাং ওইদিনগুলির পর পূনরায় রোজা রাখা হলো আল্লাহ তাআলার নেয়ামতের শুকরিয়া করা। গুনাহ মাফ হওয়ার নেয়ামতের চেয়ে আর বড় নেয়ামত কিছু নেই।

আল্লাহ স্পষ্ট ভাষায় তাঁর বান্দাদের রমজান মাসের রোজার শুকরিয়া আদায় করার আদেশ করেছেন। তিনি বলেন- ‘এবং যেন তোমরা নির্ধারিত সংখ্যা পূরণ করে নিতে পার এবং তোমাদের যে সুপথ দেখিয়েছেন, সেজন্য তোমরা আল্লাহর বড়ত্ব বর্ণনা কর আর যেন তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। (সূরা বাক্বারা ১৮৫)

রাসূল (সা.) রাতে দাঁড়িয়ে এমনভাবে নামাজ পড়তেন যে, তাঁর পা ফুলে যেতো। তাঁকে বলা হলো, হে আল্লাহর রাসূল! (সা.) আপনি এত নামাজ পড়েন যে আপনার পা ফুলে যায় অথচ আল্লাহপাক আপনার পূর্বের এবং পরের সব প্রকার গুনাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন? রাসূল সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘আমি কি আল্লাহর শুকরিয়া আদায়কারী বান্দাদের অন্তর্ভূক্ত হব না?’ (বোখারি)

সুতরাং আল্লাহ তাঁর বান্দাকে রমজান মাসের রোজা রাখার শক্তিদান করেছেন এবং তার গুনাহ সমূহ ক্ষমা করেছেন। তাই রমজান মাসের শেষে পূনরায় রোজা রাখার অর্থ হলো, তাঁর শুকরিয়া আদায় করা। সালফে সালেহিনদের মধ্যে কেউ যদি রাত্রি জাগরণ করার তাওফিক লাভ করতেন তাহলে শুকরিয়া স্বরূপ দিনের বেলায় রোজা রাখতেন।

শাওয়াল মাসের ছয় রোজা রাখার নিয়ম হচ্ছে  রমজানের কাজা রোজা পূরণের পর শাওয়ালের রোজা রাখা।

রমজান মাসের কাজা রোজাকে শাওয়ালের রোজা এবং অন্যান্য নফল রোজার ওপর প্রাধান্য দিবে। কেননা রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রমজান মাসের রোজা রাখবে অতঃপর শাওয়াল মাসের ছয় রোজা রাখবে সে যেন সারা বছরই রোজা রাখলো। (মুসলিম)

সুতরাং প্রত্যেক মুসলমানের বেশি বেশি ভাল আমল করার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য ও সন্তুষ্টি লাভের চেষ্টা করা উচিৎ। রাব্বুল আলামিনের কাছে প্রার্থণা  তিনি যেন আমাদের উত্তম কর্ম সম্পাদনের শক্তি দেন এবং তার ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকার পূর্ণ তাওফিক দান করেন। -আমিন।




রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৪ জুন ২০১৭/আসিফ/এনএ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়