ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

‘কোলাহলমুক্ত নগরীতে বেড়ানোর এটিই উপযুক্ত সময়’

আহমদ নূর || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:১২, ২৬ জুন ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘কোলাহলমুক্ত নগরীতে বেড়ানোর এটিই উপযুক্ত সময়’

আহমদ নূর : রাজধানীর শাহবাগের শিশুপার্কে তিন বছরের মেয়ে নাদিয়াকে নিয়ে ঘুরতে এসেছেন বাবা মশিউর রহমান। পুরান ঢাকার কামরাঙ্গীর চর থেকে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে শাহবাগে খুব দ্রুত এসেছেন; যেখানে অন্যান্য দিনে রাস্তায় সময় নষ্ট হতো দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা। তাই আজ মেজাজও ফুরফুরে। মেয়ের পছন্দমতো বিভিন্ন রাইডে চড়াচ্ছেন তিনি। এতে মেয়ে নাদিয়া খুব আনন্দিত। মেয়ের আনন্দেই যেন ঈদের খুশি অনুভব করছেন মশিউর রহমান।

শিশুপার্কের ভেতর মশিউর রহমান রাইজিংবিডিকে জানান, ফাঁকা ঢাকা। তাই ঈদের নামাজ শেষ করেই স্ত্রী আর মেয়েকে নিয়ে ঘুরতে বের হয়েছি। অন্যান্য দিনে ইচ্ছে থাকলেও প্রচণ্ড যানজটের কারণে তাদের নিয়ে বের হতে পারি না। কোলাহলমুক্ত এক নীরব নগরীতে তাদের নিয়ে বেড়াতে ভালই লাগছে। এটিই আসলে উপযুক্ত সময়।

পরিবার ও স্বজনদের নিয়ে রমনা পার্কে এসেছেন বয়ঃজ্যেষ্ঠ খায়রুল আলম। মশিউর রহমানের কথার সূত্র পাওয়া যায় তার কথায়ও। জানালেন, জন্ম ও বেড়ে ওঠার সুবাধে প্রতি ঈদ তিনি ঢাকায় করেন। ছেলেদের চাকরি ও মেয়েদের বিয়ে দেওয়ায় অনেকে বছরের অন্যান্য সময় ঢাকার বাইরে থাকেন। তবে ঈদে তারা সবাই একত্র হন। তাদের নিয়ে ঈদের কয়েকদিন আনন্দময় মুহূর্ত কাটান তিনি।

খায়রুল আলম বলেন, ছেলে-মেয়েদের সবাই ঢাকার বাইরে থাকে। ঈদের সময় সবাই একত্র হয়। তাই তাদের নিয়ে ঘুরতে বের হই। এটি তারা যখন ছোট ছিল তখন থেকেই করতাম।

তিনি বলেন, আগের ঢাকা তো আর এখন নাই। আগে ছিল যানজট ও কোলাহলমুক্ত। এখন তো মানুষ বেড়েছে, যানজট বেড়েছে, কোলাহলও বেড়েছে। এজন্য ঈদের অপেক্ষা করি। এ সময় শান্তিতে ঢাকায় ঘুরে বেড়ানো যায়।

শুধু মশিউর রহমান বা খায়রুল আলম নয়, ঈদের ছুটিতে ঢাকায় থাকা ও ঢাকার স্থানীয়রা ঈদ আনন্দের অবসর সময় কাটাতে এখন ভিড় জমাচ্ছেন বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্রে। ঈদের নামাজ আদায় করে অনেকে পরিবার-পরিজন নিয়ে ছুটে যাচ্ছেন আত্মীয়-স্বজনদের বাসায়। আবার অনেকে আসছেন বিভিন্ন পার্ক ও দর্শনীয় স্থানে। সকালের দিকে রাজধানীর বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে ভিড় হওয়া শুরু হলেও এটি লোকসমাগমে পরিপূর্ণ হয়েছে দুপুরের দিকে।

 


সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, ঈদের দিন বিকেলের দিকে ভিড় আরো বাড়বে। এছাড়া ঈদের যে ক’দিন ছুটি রয়েছে, সেসব দিনেও ভিড় থাকবে।

সরেজমিনে রাজধানীর শিশুপার্কে গিয়ে দেখা যায়, দর্শনার্থীদের চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। নিরপত্তা রক্ষীরা তাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছেন দর্শনার্থীদের সুশৃঙ্খলভাবে ভেতরে প্রবেশ করাতে।

দর্শনার্থীদের অনেকে বলছেন, মানুষের চাপে পার্কে প্রবেশের কিছুটা সমস্যা হলেও এতে ঈদ আনন্দে কোনো ভাটা পড়বে না। বরং তারা এটি উপভোগই করছেন।

নগরবাসীর বিনোদনের জন্য আগে থেকেই নতুনভাবে সাজানো হয়েছিল শিশুপার্ক, চিড়িয়াখানা, জাতীয় জাদুঘরসহ বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্রগুলো। এছাড়া  ডিএনসিসি ওয়ান্ডারল্যান্ড পার্ক দর্শনার্থীদের স্বাগত জানাতে প্রস্তুত করা হয়েছে নতুন করে।

শাহবাগ জাতীয় শিশুপার্কের সহকারী প্রকৌশলী মোহাম্মদ নুরুজ্জামান জানিয়েছেন, ঈদকে কেন্দ্র করে সবগুলো রাইড নতুন করে রঙ ও পরীক্ষা-নিরিক্ষা করা হয়েছে। এছাড়া পার্কে আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পার্কে ১১টি রাইড রয়েছে। ঈদের দিন থেকে শুরু করে প্রথম চার দিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত পার্ক খোলা থাকবে।

চিড়িয়াখানা সূত্রে জানা গেছে, ঈদের দিন সকাল ৮টা থেকে চিড়িয়াখানা খুলে দেওয়া হয়েছে। প্রবেশ মূল্য ৩০ টাকা। চিড়িয়াখানায় প্রায় দুই হাজারের বেশি প্রাণি রয়েছে।

এদিকে ঈদের দিন জাতীয় জাদুঘর খোলা হবে না। তবে পরদিন বিকেল ৩টা থেকে জাদুঘর খুলে দেওয়া হবে; যা রাত ৮টার পর বন্ধ করে দেওয়া হবে। এছাড়া অন্য দিনগুলোতে সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত জাদুঘরের গ্যালারি পরিদর্শন করা যাবে।

এছাড়া ঢাকার বিভিন্ন সিনেমা হলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সেখানেও বিনোদনপ্রেমীদের উপচেপড়া ভিড় রয়েছে। বিশেষ করে ঈদে মুক্তি পাওয়া নতুন চলচ্চিত্র দেখতে দর্শকরা উন্মুখ হয়ে আছেন। টিকিট পাওয়ার জন্য অনেকে আগে আগে সিনেমা হলে পৌঁছেছেন বলে আমাদের প্রতিবেদকরা জানিয়েছেন। 

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৬ জুন ২০১৭/নূর/মুশফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়