নতুন ঠিকানা পাচ্ছে শিশু ফাতেমা
নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজধানীতে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ফেলে যাওয়া আট-নয় মাসের কন্যা ফাতেমা নতুন ঠিকানা পেতে যাচ্ছে।
বুধবার ঢাকার শিশু আদালতের বিচারক (অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ) মো. হাফিজুর রহমান শিশু ফাতেমাকে আইনজীবী সেলিনা আক্তারের কাছে দেওয়ার সিদ্ধান্ত দিয়েছেন।
আগামী ২২ আগস্টের মধ্যে ওই দম্পতি শিশুটির নামে ৫ লাখ টাকা এফডিআর করে আদালতে সে সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিল করলে ওইদিন শিশুটিকে তাদের হাতে তুলে দেওয়া হবে।
আইনজীবী সেলিনা আক্তার ঢাকা আইনজীবী সমিতির সদস্য এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) সিনিয়র ‘ল’ অফিসার হিসেবে কর্মরত আছেন। তার স্বামী মো. আলমগীর হোসেন একজন ব্যবসায়ী। দশ বছর বিবাহিত জীবনে ওই দম্পতি নিঃসন্তান।
আদালত আদেশের পর ওই দম্পত্তি জানান, তারা দশ বছর বিবাহিত জীবনে নিঃসন্তান। শিশুটিতে পেলে মাতৃত্বের স্বাদ পূরণ হবে। এ সময় সবার দোয়া চেয়েছেন তারা।
এর আগে নয়জন দম্পত্তি শিশুটির হেফাজত পাওয়ার জন্য আদালতে আবেদন করেন। এদিন বিচারক সবার বক্তব্য পৃথকভাবে খাসকামরায় বসে শোনেন। এরপর আদেশ দেন।
বিচারক বলেন, আপনারা যারা শিশুটিকে নেওয়ার জন্য আবেদন করেছেন তারা সবাই শিশুটিকে হেফাজতে পাওয়ার যোগ্য। অনেক দম্পতি শিশুটির নামে বাড়ি-গাড়ি পর্যন্ত লিখে দিতে চেয়েছেন। তবে আদালত শুধু অর্থসম্পদ বিবেচনায় আদেশ দিচ্ছে না। শিশুটির সার্বিক মঙ্গল বিবেচনায় নিয়ে আদেশ দিচ্ছেন। আর ভবিষ্যতে যদি শিশুটির পিতা-মাতা পাওয়া যায় এবং তারা দাবি করেন তাদের হাতে তখন শিশুটিকে তুলে দিতে হবে।
শিশুটিকে নেওয়ার জন্য সেলিনা আক্তার, শ্যামলী আক্তার, লায়লা নূর, নিঝুম আক্তার, শাহনাজ বিনতে হান্নান, দুলশাদ বেগম বিথী দম্পতি, শামীমা আক্তার দম্পতি এবং আ খ ম আতিকুর রহমান আবেদন করেছিলেন।
বুধবার শিশুটিকে আদালতে হাজির করা হয়। গায়ের রং উজ্জল ফর্সা, মাথার চুল কোকড়ানো। সবার দৃষ্টি কেড়ে নেয় শিশুটি।
শিশুটিকে কোলে করে আদালতে নিয়ে আসেন পুলিশের উইমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন ডিভিশনের নারী কর্মকর্তা সখিনা খাতুন। তিনি বলেন, অন্য বাচ্চাদের তুলনায় শিশুটি অনেক শান্ত। ওর খাবার ঠিক থাকলে বিরক্ত করে না।
প্রায় চার-পাঁচ ঘণ্টা শিশু আদালতের এজলাস কক্ষে বসে ছিল। মাঝে মাঝে সে সখিনা খাতুনকে মা বলে ডাকে। মাঝে মাঝে দাদা বলেও ডাকাডাকি করে।
এর আগে ফাতেমার প্রকৃত বাবা-মাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি উল্লেখ করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা বিমানবন্দর থানার উপপরিদর্শক আবু সাঈদ।
প্রসঙ্গত, গত ৯ জুলাই বিজি-০০৮৫ বিমানে জর্ডান থেকে দুবাই হয়ে ঢাকা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসা একটি ফ্লাইটে স্বপ্না নামের এক যাত্রীর কোলে শিশু ফাতেমাকে রাখার অনুরোধ করেন তার মা। স্বপ্নাও মায়াবশত শিশুটিকে কোলে নেন। শিশুটিকে কোলে নিয়ে স্বপ্না শিশুটির মায়ের সঙ্গে খোশগল্প করতে থাকেন। রাত ৯টায় বিমানটি বিমানবন্দরে পৌঁছালে শিশুটির মা স্বপ্নাকে শিশুকে নিয়ে গোলচত্বরের ওভারব্রিজের কাছে দাঁড়াতে বলেন এবং তিনি কিছুক্ষণের মধ্যে বুকিংকৃত মালামাল গ্রহণ করে ওই স্থানে আসবেন বলে আশ্বাস দেন। ওইদিন ওই নির্দিষ্ট স্থানে দুই-তিন ঘণ্টা অপেক্ষা করে স্বপ্না তার বাসায় শিশুটিকে নিয়ে যান। পরের দিন বিকেল ৩টার দিকে শিশুটিকে নিয়ে বিমানবন্দরের এপিবিএন পুলিশের কাছে আসেন। পরে এ ব্যাপারে বিমানবন্দর থানায় জিডি করা হয় (জিডি নম্বর ৪০৪)। পরবর্তী সময়ে শিশুটিকে পুলিশের উইমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন ডিভিশনে (ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার) পাঠানো হয়।
রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৬ আগস্ট ২০১৭/মামুন খান/সাইফ
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন