ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

পাসপোর্টে ঘুষ দিতে হয় গড়ে ২২২১ টাকা

এম এ রহমান মাসুম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:১৪, ২১ আগস্ট ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
পাসপোর্টে ঘুষ দিতে হয় গড়ে ২২২১ টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক : পাসপোর্ট অফিসের সেবায় একজন নাগরিককে গড়ে ২ হাজার ২২১ টাকা ঘুষ বা নিয়ম-বহির্ভূত টাকা দিতে হয়। এছাড়া শুধু পুলিশ ভেরিফিকেশনে গড়ে ৭৯৭ টাকা ঘুষ দিতে হয় সেবাগ্রহীতাকে।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এর ‘পাসপোর্ট সেবায় সুশাসন : চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণে করণীয়’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।

সোমবার রাজধানীর মাইডাস সেন্টারে টিআইবির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, জরিপের অন্তর্ভুক্ত পাসপোর্ট সেবা নেওয়ার ক্ষেত্রে অনিয়ম, হয়রানি ও দুর্নীতির শিকার হয়েছে সেবাগ্রহীতাদের ৫৫.২ শতাংশ। পাসপোর্ট আবেদনপত্র, আবেদনপত্র জমা ও প্রি-এনরোলমেন্ট, বায়ো-এনরোলমেন্ট, পাসপোর্ট বিতরণ ও দালালের সঙ্গে চুক্তি করার সময় প্রধানত হয়রানি ও দুর্নীতির শিকার হন নাগরিকরা।

এতে বলা হয়, পাসপোর্ট অফিসের সেবায় একজন নাগরিককে গড়ে ২ হাজার ২২১ টাকা ঘুষ বা নিয়ম-বহির্ভূত টাকা দিতে হয়। এছাড়া শুধু পুলিশ ভেরিফিকেশনে গড়ে ৭৯৭ টাকা ঘুষ দিতে হয় সেবাগ্রহীতাকে।

পাসপোর্ট তৈরিতে ভেরিফিকেশনের সময় ৭৫.৩ শতাংশ গ্রাহকের কাছ থেকে এসবি (স্পেশাল ব্রাঞ্চ) পুলিশ ঘুষ বা নিয়ম-বহির্ভূত অর্থ নেয় বলে উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে। নতুন পাসপোর্টের জন্য আবেদনে পুলিশ ভেরিফিকেশন ব্যবস্থা সাধারণ আবেদনকারীদের হয়রানি ও দুর্নীতির শিকার হওয়ার একটি অন্যতম মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে।

জরিপে দেখা গেছে, নতুন পাসপোর্ট আবেদনের ক্ষেত্রে ৭৬ দশমিক ২ শতাংশ সেবাগ্রহীতা পুলিশি তদন্তে অনিয়ম ও দুর্নীতির শিকার হয়েছে। এছাড়া ৭৫ দশমিক ৩ শতাংশ গ্রহীতাকে ঘুষ বা নিয়ম-বহির্ভূত অর্থ দিতে হয়েছে।

যেখানে বলা হয়েছে, পুলিশি প্রতিবেদন প্রণয়নে এসব পুলিশ কর্তৃক আবেদনকারীদের হয়রানি করার অভিযোগ রয়েছে। যেমন, আবেদনপত্রে অযথা ত্রুটি খুঁজে বের করার চেষ্টা, আবেদনকারীদের জঙ্গি কার্যক্রম বা অন্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ততার ভয় দেখানো, বাড়িতে না এসে চায়ের দোকান বা থানায় ডেকে পাঠানো, নিয়ম-বহির্ভূত অর্থ বা ঘুষ দাবি করা এবং ক্ষেত্রবিশেষে তা বিকাশের মাধ্যমে পাঠাতে বলা ইত্যাদি।

সংবাদ সম্মেলেনে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘সম্প্রতি পাসপোর্ট সেবায় ইতিবাচক কিছু পরিবর্তন সাধিত হলেও সেবার মান এখনো প্রত্যাশিত পর্যায়ে পৌঁছায়নি। পাসপোর্ট অফিসগুলোতে দালালচক্র এখনো সক্রিয়। এ ছাড়া পুলিশ ভেরিফিকেশন এবং আবেদন ফরম সত্যায়ন করতে সেবাগ্রহীতারা হয়রানির শিকার হচ্ছে।’ কোনো প্রয়োজন না থাকা সত্ত্বেও পুলিশ ভেরিফিকেশন ও আবেদনপত্র সত্যায়নের নিয়ম চালু রেখে সেবাগ্রহীতাদের হয়রানি করা হচ্ছে। এ নিয়ম দুটি বন্ধ করা উচিত।

অন্যদিকে সংস্থাটির চেয়ারপারসন সুলতানা কামাল বলেন, ‘পাসপোর্ট কার্যালয়গুলোর ভেতরের কিছু কর্মকর্তার প্রশ্রয় না থাকলে দালালদের দৌরাত্ম্য থাকত না।’

তিনি আরো বলেন, ‘পাসপোর্ট খাতে অনিয়মের সবচেয়ে বড় কারণ হলো সাধারণ মানুষের অভিগম্যতায় বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধকতা।’ পুলিশ ভেরিফিকেশন ও আবেদন ফরম সত্যায়নের বিধানটি রাষ্ট্র ও জনগণের মধ্যে বিশ্বাসহীনতার একটি ঔপনিবেশিক সংস্কৃতিরই বহিঃপ্রকাশ।

গবেষণা প্রতিবেদনে বেশকিছু সুপারিশ করা হয়।

সুপারিশসমূহের উল্লেখযোগ্য হলো : পাসপোর্টের আবেদনপত্র পূরণ আরও ব্যবহার-বান্ধব এবং ফি জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের অন্তর্ভুক্তি; আবেদনপত্র পূরণের নিয়মাবলি এবং সেবা-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন তথ্য নির্দেশিকা ও সর্বাধিক জিজ্ঞাসিত প্রশ্নসমূহের উত্তর অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে প্রকাশ এবং বিনামূল্যে বিতরণ; বিদ্যমান পুলিশ প্রতিবেদন সংক্রান্ত জটিলতা নিরসনে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে মাসিক ভিত্তিতে সমন্বয় সভা আয়োজন এবং পাসপোর্ট বিতরণে বিলম্ব এড়াতে নির্ধারিত তারিখের পূর্বে যৌক্তিক কারণসহ এসএমএসের মাধ্যমে অবহিতকরণ। এছাড়া, পাসপোর্ট অফিস ও এসবি পুলিশের যেসব অসাধু কর্মচারীর যোগসাজশে দালালচক্র তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রাখছে তাদের শাস্তির আওতায় আনা এবং দালালের সহযোগিতা নেওয়ার বিরুদ্ধে প্রচারণা এবং পাসপোর্ট অফিসের কর্মচারীদের অফিস সময়ে নির্ধারিত পোশাকের ব্যবস্থা এবং পরিচয়পত্র ব্যবহার বাধ্যতামূলক করার সুপারিশ করা হয়। পাসপোর্ট ইস্যুর ক্ষেত্রে পুলিশ ভেরিফিকেশনের বিধান বাতিল এবং সব নাগরিকের জন্য ‘বায়োমেট্রিক ডাটা ব্যাংক’ তৈরির পাশাপাশি স্মার্ট কার্ড তৈরি ও বিতরণ, ‘অপরাধী তথ্যভাণ্ডার’ আধুনিক ও যুগোপযোগী করে এই তথ্য ভাণ্ডারের সঙ্গে পাসপোর্ট অফিস ও ইমিগ্রেশন চেকপোস্টের সংযোগ স্থাপন; নাগরিক সংগঠনগুলোর সম্পৃক্ততায় সেবার মান যাচাই ও উন্নতিকল্পে নির্দিষ্ট সময় অন্তর মূল্যায়ন ব্যবস্থার প্রবর্তন; চাহিদার সঙ্গে সংগতি রেখে পাসপোর্ট কার্যালয়গুলোতে জনবল, অবকাঠামো ও লজিস্টিকসের সরবরাহ ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতকরণ; পাসপোর্ট আবেদনে প্রি-এনরোলমেন্ট ও বায়ো-এনরোলমেন্টের তথ্যাদি ব্যবহারে জাতীয় পরিচয়পত্র (স্মার্ট কার্ড) সংরক্ষিত তথ্য ব্যবহার পর্যায়ক্রমে শুরু এবং পাসপোর্টের মেয়াদ পাঁচ বছরের পরিবর্তে ১০ বছর করার সুপারিশ করা হয়।

 

আরো পড়ুন :


রাইজিংবিডি/ঢাকা/২১ আগস্ট ২০১৭/এম এ রহমান/মুশফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়