ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

পাউবোর বাস্তবায়িত জলবায়ু প্রকল্পে সুশাসনের ঘাটতি

এম এ রহমান মাসুম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:০৭, ২৩ আগস্ট ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
পাউবোর বাস্তবায়িত জলবায়ু প্রকল্পে সুশাসনের ঘাটতি

নিজস্ব প্রতিবেদক : পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কর্তৃক বাস্তবায়িত জলবায়ু প্রকল্পে সুশাসনের ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে বলে মনে করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

বুধবার ধানমন্ডির কার্যালয়ে ‘জলবায়ু অর্থায়ন ও প্রকল্প বাস্তবায়নে সুশাসন : প্রেক্ষিত বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে আসে।

গবেষণা প্রতিবেদন তথ্য তুলে ধরেন ক্লাইমেট ফাইন্যান্স গভর্নেন্স (সিএফজি) ইউনিটের প্রোগ্রাম ম্যানেজার গোলাম মহিউদ্দিন।

টিআইবির গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, পাউবো কর্তৃক বাস্তবায়িত জলবায়ু প্রকল্পসমূহে সুশাসনের ব্যাপক ঘাটতি বিদ্যমান। জলবায়ু প্রকল্পে বরাদ্দের পরিমাণ উন্নয়ন বাজেটের প্রকল্পের তুলনায় অপেক্ষাকৃত কম হওয়ায় ব্যবস্থাপনার দিক থেকে গুরুত্ব কম পাচ্ছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে প্রকল্প বাস্তবায়নে বিভিন্ন অংশীজনদের যোগসাজশে অনিয়ম। অর্থায়নকারী সংস্থা এবং পাউবোর কোনো আইন বা নির্দেশিকায় কার্যকর অভিযোগ ব্যবস্থার নির্দেশনা নেই যা জবাবদিহিতার ক্ষেত্রে একটি বড় চ্যালেঞ্জ।

এছাড়া প্রকল্প প্রণয়ন ও অনুমোদনে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলের তুলনায় অপেক্ষাকৃত কম ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলে প্রকল্প অনুমোদন ও বাস্তবায়ন; তথ্যের স্বপ্রণোদিত উন্মুক্ততা এবং চাহিদাভিত্তিক তথ্য প্রদান উভয় ক্ষেত্রেই ঘাটতি; জবাবদিহিতা নিশ্চিতে সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের নিষ্ক্রিয়তা এবং সমন্বয়ের ঘাটতি; শুদ্ধাচার নিশ্চিতে সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের দায়িত্ব পালনে ঘাটতি পরিলক্ষিত হয়েছে। যার প্রভাব ঠিকাদার নিয়োগ, ঠিকাদার কর্তৃক কাজের মান প্রভৃতির ওপর পড়েছে এবং অনিয়ম ও দুর্নীতির সহায়ক পরিবেশ হিসেবে কাজ করছে; পানিসম্পদ খাতের প্রকল্পসমূহে জনঅংশগ্রহণের আইন ও সুনির্দিষ্ট নীতিমালা থাকা সত্ত্বেও প্রকল্পে স্থানীয় জনসাধারণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়নি।

এ বিষয়ে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন ‘পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক পরিচালিত জলবায়ু প্রকল্পসমূহ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় কিছু ইতিবাচক উদ্যোগ থাকলেও সার্বিক বিবেচনায় শুদ্ধাচার, অনিয়ম ও সুশাসনের ঘাটতি লক্ষ্য করা যায়। তথ্যের উন্মুক্ততার ব্যাপারে আইনি বাধ্যবাধকতা থাকলেও তার যথাযথ প্রয়োগের ক্ষেত্রে ব্যত্যয় পরিলক্ষিত হয়েছে এবং প্রকল্পসমূহের গুণগত মানও নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি।’

তিনি বাংলাদেশ পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও পানি উন্নয়ন বোর্ডকে টিআইবি কর্তৃক প্রদত্ত সুপারিশসমূহ ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতে গ্রহণ করে এ বিষয়ে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান। 

গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফলে দেখা যায় ‘তথ্য অধিকার আইন ২০০৯’এবং বিসিসিটিএফ’র প্রকল্প বাস্তবায়ন নির্দেশিকাতে তথ্যবোর্ডে কোন কোন বিষয় সংযুক্ত করতে হবে এবং তথ্যবোর্ড স্থাপনের সময়সীমা ও রক্ষণাবেক্ষণের কোনো সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা নেই। এছাড়া বিসিসিটিএফ এবং পাউবোর কোনো আইন বা নির্দেশিকায় কার্যকর অভিযোগ ব্যবস্থা ও তৃতীয় পক্ষের স্বাধীন প্রকল্প নজরদারি ব্যবস্থার সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা নেই। সরকারি ক্রয় কার্যক্রমের ক্ষেত্রে প্রচলিত ই-টেন্ডারিং পদ্ধতিকে একটি আদর্শ ব্যবস্থা মনে করা হলেও এর মাধ্যমে শুধু দরপত্র জমা দেওয়া যায়। দরপত্র মূল্যায়ন ও নির্বাচন পূর্বতন পদ্ধতিতে হওয়ায় স্বচ্ছতা ও শুদ্ধাচার নিশ্চিতে এ ব্যবস্থার কার্যকারিতা সীমিত। 

গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, প্রকল্পের জবাবদিহিতা নিশ্চিতে বিদ্যমান ব্যবস্থার যেসব চ্যালেঞ্জসমূহ পাওয়া গেছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- প্রকল্প বাস্তবায়ন এলাকায় পাউবোর একটি স্থানীয় কার্যালয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত তথ্য কর্মকতা নেই; জরিপে অংশগ্রহণকারী প্রায় ৯২% উত্তরদাতা প্রকল্প সংশ্লিষ্ট তথ্যাদি সম্পর্কে জানেন না; প্রকল্প এলাকায় তথ্যবোর্ড স্থাপন ও রক্ষণাবেক্ষণে ত্রুটি এবং তথ্যবোর্ডে অপর্যাপ্ত তথ্য প্রকাশ ইত্যাদি।

গবেষণায় আইনি, স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, শুদ্ধাচার এবং জনঅংশগ্রহণ বিষয়ে ১৪ দফা সুপারিশ উত্থাপিত হয়েছে যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- তথ্যবোর্ডে কোন কোন বিষয় সম্পৃক্ত করতে হবে এবং তথ্যবোর্ড স্থাপনের সময়সীমা প্রভৃতি বিষয়ে একটি সুনির্দিষ্ট নির্দেশিকা তৈরি; বিসিসিটিএফর আইন ও পাউবোর সংশ্লিষ্ট আইন পরিমার্জন করে অভিযোগ নিরসন ব্যবস্থা এবং তৃতীয় পক্ষের তদারকির বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা; পাউবোর ওয়েবসাইটে প্রকল্প প্রস্তাবনা, নিরীক্ষা, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন প্রতিবেদন এবং প্রকল্প এলাকায় দরপত্র, প্রকল্প নকশা, বাস্তবায়নকৃত এলাকা, বাজেট ইত্যাদি তথ্যবোর্ড ও নাগরিক সনদের মাধ্যমে উন্মুক্ত করা এবং চাহিদাভিত্তিক তথ্য প্রদান ব্যবস্থা কার্যকর করার মাধ্যমে প্রতিটি স্থানীয় কার্যালয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত তথ্য কর্মকর্তার উপস্থিতি নিশ্চিতকরণ। এছাড়া জলবায়ু প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব অংশীজনের সমন্বয়ে একটি কার্যকর অভিযোগ নিরসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা; জবাবদিহিতা নিশ্চিতে সংশ্লিষ্ট সব অংশীজনের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা এবং অংশীজনদের মধ্যে কার্যকর সমন্বয় নিশ্চিত করা; জলবায়ু ঝুঁকি ও বিপদাপন্নতা যথাযথভাবে যাচাই করে তার ভিত্তিতে প্রকল্প অনুমোদন নিশ্চিত করার সুপারিশ করা হয়। একই সঙ্গে পাউবোর গঠিত ‘নৈতিকতা কমিটি’কে সক্রিয় করা এবং তাদের কার্যক্রমের প্রতিবেদন প্রকাশ; প্রকল্প কাজে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ করার একটি সহজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা এবং তথ্যদাতার সুরক্ষার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা; প্রকল্প তদারকিতে জনঅংশগ্রহণ নিশ্চিত করা; প্রযোজ্য ক্ষেত্রে স্থানীয় জনসাধারণকে বাস্তবায়নের কাজে সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে প্রকল্পে মালিকানাবোধ ও টেকসই অভিযোজন নিশ্চিত করা; পিআইসিভিত্তিক প্রকল্প ব্যবস্থাপনা (প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট আইন/নীতিমালা পরিমার্জন করে) বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা; প্রকল্পে নির্মিত অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ ও সুষ্ঠু ব্যবহারে উপযুক্ত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে স্থানীয় জনসাধারণের সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং তাদের সম্পৃক্ততা নিশ্চিতের দাবি জানায় টিআইবি।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৩ আগস্ট ২০১৭/এম এ রহমান/মুশফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়