ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

সমৃদ্ধির অংশীদার হতে ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

সাইফ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:২৪, ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সমৃদ্ধির অংশীদার হতে ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

ডেস্ক রিপোর্ট : যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতাদের বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির অংশীদার হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বুধবার নিউইয়র্কের গ্রান্ড হায়াত হোটেলে বিজনেস কাউন্সিল ফর ইন্টারন্যাশনাল আন্ডারস্ট্যান্ডিং (বিসিআইইউ) আয়োজিত মধ্যাহ্নভোজে তিনি এ আহ্বান জানান।

শীর্ষ ব্যবসায়ীদের এ সভায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, অভিন্ন স্বার্থ ও মূল্যবোধের ভিত্তিতে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র সময়ের পরীক্ষিত বন্ধু। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের অর্থনীতি, বাণিজ্য এবং উন্নয়নের অন্যতম অংশীদার।

শেখ হাসিনা বলেন, তার দল ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে আজ পর্যন্ত দুই দেশের সম্পর্ক বিকশিত হয়ে চলেছে। বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র সর্বোত্তম সম্পর্ক উপভোগ করছে।

তিনি বলেন, ‘সরকার ব্যাপক আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন প্রত্যক্ষ করছে এবং এ বিষয় আপনাদের কাছে তুলে ধরতে চাই।’

এনুয়াল পার্টনারশিপ ডায়ালগ, টিকফা (ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কো-অপারেশন ফোরাম এগ্রিমেন্ট) স্বাক্ষর এবং এসব ফোরামে নিয়মিত আলোচনা হচ্ছে। নিরাপত্তা, সামরিক ও কাউন্টার টেররিজম নিয়ে আলোচনা দুই দেশের সম্পর্কের উচ্চতা নির্দেশ করে।

তিনি বলেন, সন্ত্রাসবাদ ও চরমপন্থার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যুক্তরাষ্ট্র এখন আমাদের ঘনিষ্ঠ অংশীদার।

শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য গত বছর মোট ৭ বিলিয়ন ডলার দাঁড়িয়েছে, এতে দুই দেশের বাণিজ্য সম্পর্ক প্রতিফলিত হয়। তবে এই সম্পর্ক সম্প্রসারণের পূর্ণ সম্ভাবনা রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, কিছু ক্ষেত্রে হোঁচট খাওয়ায় এই সম্ভাবনা প্রত্যাশিত পর্যায়ে পৌঁছানো বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশি পোশাকের ওপর অত্যন্ত উচ্চ শুল্ক আরোপ।

তিনি বলেন, এলডিসিভুক্ত বেশিরভাগ দেশ বিভিন্ন অগ্রাধিকার স্কিমের আওতায় যুক্তরাষ্ট্রে শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা পাচ্ছে। উচ্চ শুল্কের কারণে শুল্কমুক্ত সুবিধাপ্রাপ্ত এলডিসি দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশ তীব্র প্রতিযোগিতার মুখে পড়েছে। এমনকি কিছু উন্নয়নশীল দেশ এজিওএর অধীনে শুল্কমুক্ত সুবিধা ভোগ করছে। এই ক্ষেত্রে সব প্রতিযোগীদের সমতার সুযোগ দিতে হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, দোহা রাউন্ডের অঙ্গীকার অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া সব উন্নত দেশ এমনকি অনেক উন্নয়নশীল দেশ এলডিসিভুক্ত দেশগুলোর জন্য শুল্কমুক্ত বাণিজ্য সুবিধা দিয়েছে।

তিনি বলেন, দারিদ্র্য নিরসন পুষ্টি, মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্য, প্রাথমিক শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন ইত্যাদি ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক অর্জন প্রশংসিত হচ্ছে। ২০০৯ সালে আমাদের সরকার ক্ষমতায় আসার পরে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ গড়ে ৬ দশমিক ২ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রেখেছে। গত দুই বছরে এই প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, মাথাপিছু আয় ৮০ শতাংশ বেড়ে ১৬০০ মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে, মুদ্রাস্ফীতি ৫ দশমিক ৭ শতাংশে ধরে রেখেছে, রপ্তানি আয় দ্বিগুণ বেড়ে ৩৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে, বৈদেশিক মুদ্রার মজুত দাঁড়িয়েছে ৩৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (যা ৮ মাসের আমদানি ব্যয়ের সমতুল্য), খাদ্য ও জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ রিপোর্ট-২০১৬ অনুযায়ী বাংলাদেশ লিঙ্গসমতার দিক থেকে দক্ষিণ এশিয়ার শীর্ষস্থানীয় দেশ এবং নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে বিশ্বে ৭ম স্থানে আছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পরপর ৬ষ্ঠ বছরের মতো বিএ৩ (মুডি) এবং বিবি (স্ট্যান্ডার্ড ও পুয়োর) অর্জন করেছে। স্থিতিশীল জিডিপি প্রবৃদ্ধি এবং শক্তিশালী এক্সটার্নাল ব্যালান্স স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে ফিচ রেটিংস থেকে চতুর্থবারের মতো বিবি রেটিং অর্জনে সহায়তা করেছে। যা গোল্ডম্যান স্যাশ, সিটি গ্রুপ, জেপি মরগানসহ অনেকের স্বীকৃত পেয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ বিশ্বে বর্তমানে ৩২তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ (পিপিপি ভিত্তিক) এবং এ দেশের বার্ষিক জিডিপিতে বৈদেশিক সাহায্যের পরিমাণ ১ দশমিক ৫ শতাংশের কম। বাংলাদেশ আজ অর্থনৈতিক উন্নয়নের রোল মডেল।

তিনি বলেন, প্রগতিশীল, ধর্মনিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক এই বাংলাদেশের অভিন্ন জনগোষ্ঠীর ৬০ শতাংশের বয়স ৪০ বছরেরও কম এবং তাদেরকে প্রতিযোগী মজুরিতে পাওয়া যায়। ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধির সাথে বাংলাদেশে মধ্যবিত্ত শ্রেণির ভোক্তার সংখ্যাও দ্রুত বাড়ছে।

শেখ হাসিনা বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশেই অতি উদার বিনিয়োগ নীতি রয়েছে। এখনে বিদেশি বিনিয়োগ আইন দ্বারা সুরক্ষিত। এ ছাড়া ট্যাক্স হলিডে, মেশিনারি আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক ছাড়, লভ্যাংশ ও মূলধন সম্পূর্ণ ফেরত নেওয়াসহ বিভিন্ন সুবিধা রয়েছে।

তিনি বলেন, এখানে বৈদেশিক বিনিয়োগ আইন এবং দ্বিপক্ষীয় বিনিয়োগ চুক্তির শর্তাবলি দ্বারা সুরক্ষিত। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে দ্বিপাক্ষিক বিনিয়োগ চুক্তি (বিটি) এবং ‘ডাবল ট্যাক্সেশন’ পরিহারের চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।

শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার দেশে ১০০ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। যেখানে বিনিয়োগকারীরা একই স্থান থেকে সব ধরনের সেবা পাবেন।

তিনি বলেন, বিদেশি বেসরকারি বিনিয়োগকারীদের শিল্প স্থাপনে সকল সুযোগ-সুবিধাসহ অর্ধ ডজনেরও বেশি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (ইইজেড) প্রস্তুত হয়েছে। দেশে দ্রুত নগরায়নে বিদ্যুতের চাহিদা বৃদ্ধি ও মধ্যবিত্তের উত্থানে এটাই নির্দেশ করে যে এদেশে বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি সম্ভাবনাময় বাজার রয়েছে। বাংলাদেশ চীন, জাপান, ভারত ও দক্ষিণ কোরিয়াসহ বিশ্বের প্রায় সব উন্নত ও ঊন্নয়নশীল দেশে শুল্কমুক্ত এবং কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার সুবিধা ভোগ করে। এসব দেশে পণ্য রপ্তানি করে বিনিয়োকারীরা লাভবান হতে পারেন।

শেখ হাসিনা বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে দ্বিতীয় বৃহত্তম বিনিয়োগকারী দেশ এবং ২০০৯ সালে আমার সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধির ধারায় গত বছর বিদেশি বিনিয়োগ ২০০ কোটি ডলার অতিক্রম করেছে। এর মাধ্যমে বিদেশিদের বিনিয়োগকারীদের আস্থা প্রতিভাত হয়েছে। গত ৭ বছরে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগও ১০০ কোটি ডলার অতিক্রম করেছে।

তিনি বলেন, বিদেশি বিনিয়োগ সহজতর করতে আমরা অবকাঠামো এবং বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নে ব্যাপক পদক্ষেপ নিয়েছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, অস্ত্র ও গোলাবারুদ, পারমাণবিক শক্তি, বনায়ন ও সিকিউরিটি প্রিন্টিং ছাড়া অন্য সব খাত বেসরকারি উদ্যোক্তাদের জন্য উন্মুক্ত।

তিনি বলেন, আমরা বিদ্যুৎ ও জ্বালানি শক্তি, বিশেষভাবে নবায়নযোগ্য জ্বলানি, জাহাজ নির্মাণ, অটোমোবাইল এবং হালকা প্রকৌশল, রাসায়নিক সার, কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ, ওষুধ, সিরামিক ও প্লাস্টিক পণ্য, আইসিটি, সামুদ্রিক সম্পদ আহরণ, পর্যটন, চিকিৎসা সরঞ্জাম, টেলিকমিউনিকেশন এবং হাইটেক শিল্পসহ সম্ভাবনাময় খাতগুলোতে বিনিয়োগ আহ্বান করি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের রূপকল্প-২০২১ মোতাবেক এ দেশ এখন একটি শিল্পোন্নত, ডিজিটাল, মধ্যম আয়ের দেশে এবং ২০৪১ সাল নাগাদ উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে ওঠার পথে রয়েছে। ইতিমধ্যেই বাংলাদেশ নিম্নমধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের এই লক্ষ্যে অর্জনে বাংলাদেশের প্রয়াসে বিনিয়োগ, বাণিজ্য, এবং সমৃদ্ধির অংশীদার হতে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগকারী ও ব্যবসায়ীদের কাছে আহ্বান  জানাচ্ছি। আমাদের পারষ্পরিক লাভজনক ব্যবসা দুই দেশের বন্ধুত্বকে আরো জোরদার করে চমৎকার পর্যায়ে উন্নীত করবে।

অনুষ্ঠানে ইউটিসি অ্যাসোসিয়েটসের সিইও আজিজ আহমেদ, ওয়ালমার্টের ভাইস প্রেসিডেন্ট পল ডাইক, ওআরবিআইএসের প্রধান উন্নয়ন কর্মকর্তা (সিডিও), গভর্নমেন্ট রিলেশনস অ্যান্ড কমিউনিকেশনস অফিসার টেমার ইউনিস, ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব স্টেটের ভারপ্রাপ্ত বিশেষ প্রতিনিধি অ্যালিস জি ওয়েলস, স্কাইপাওয়ারের সিনিয়র পরিচালক মারিয়া বোরোবিয়েভা, পাওয়ারপ্যাকের রন সিকদার, এফইডিএকসের ডেভিড শর্ট, স্কট প্রাইস অব ওয়ালমার্ট ইন্টারন্যাশনালের জে প্রেয়র, কোকা কোলা পরিচালক মিসি ওয়েনস, শেভরন ম্যানেজার জে জে অঙ, কর্ণফুলী শিপ বিল্ডার্সের চৌধুরী নাফেজ শরাফত, ডেনহাম ক্যাপিটালের সৌরভ আনন্দ, ম্যালারটি অ্যাসোসিয়েটসের রবার্ট ও ব্লেক (জেআর), ইল্লিকট ড্রিডগেজের পিটার বোওয়ি, মটোরোলা সলিউশনের রিচার্ড ব্রেচার, এপিআর এনার্জির জন চ্যাম্পিয়ন, উবার টেকনোলজির আশহাউনি চানপরা উপস্থিত ছিলেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী, প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ, যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়কারী আবুল কালাম আজাদ, এফবিসিসিআই সভাপতি শফিউল ইসলাম এবং প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী ব্যবসায়ী নেতারা মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেন।

তথ্যসূত্র : বাসস



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২১ সেপ্টেম্বর ২০১৭/সাইফ/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়