ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

‘ফেলানী হত্যার বিচার না হলে সীমান্ত হত্যা বন্ধ হবে না’

হাসিবুল ইসলাম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৫৩, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘ফেলানী হত্যার বিচার না হলে সীমান্ত হত্যা বন্ধ হবে না’

ফাইল ফটো

নিজস্ব প্রতিবেদক : ফেলানী হত্যার বিচার না হলে সীমান্ত হত্যা বন্ধ হবে না বলে উল্লেখ করেছেন নাগরিক পরিষদের নেতারা।

ফেলানী হত্যার বিচার দাবি এবং সীমান্ত হত্যা ও সার্বভৌমত্ব লংঘন বন্ধের দাবিতে এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের নেতারা এ কথা উল্লেখ করেন।

সংবাদ সম্মেলনে নাগরিক পরিষদের আহ্বায়ক মোহাম্মদ শামসুদ্দীন বলেন, ‘বিলম্বিত বিচার অবিচারের নামান্তর মাত্র। ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টে বিচারের দীর্ঘসূত্রতা আমাদের মর্মাহত করে। আমরা মনে করি ফেলানী হত্যার বিচার না হলে সীমান্ত হত্যা বন্ধ হবে না। বাংলাদেশের নাগরিকদের বিএসএফ বিনা বিচারে হত্যা করে যা অমানবিক। এ হত্যা বন্ধ করতে হলে ফেলানী হত্যাকারী অমিয় ঘোষকে ফাঁসি দিতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘আপনারা জানেন গত ২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি নিষ্পাপ কিশোরী ফেলানীকে তার বাবা নুরুল ইসলামের সামনে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) সদস্য অমিয় ঘোষ বিনা উস্কানিতে, বিনা কারণে গুলি করে হত্যা করে। গুলিবিদ্ধ ফেলানি সীমান্তের কাঁটাতারের সাথে আটকে মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করছিল আর পানি পানি বলে চিৎকার করছিল। নিষ্ঠুর বিএসএফ তাকে একগ্লাস পানি দেয়নি। ফেলানী মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে, তার নিথর দেহ ঝুলতে থাকে সীমান্তের কাঁটা তারের সাথে।’

তিনি আরো বলেন, ‘ফেলানীর ঝুলন্ত মৃতদেহের ছবি বিশ্ব বিবেককে নাড়া দেয়, ঘৃণা ও প্রতিবাদের ঝড় উঠে সারা পৃথিবীতে। মামলা শুরু হয়। বিএসএফ তাদের আদালতে বিচারের নামে প্রহসন করে খুনি অমিয় ঘোষকে নির্দোষ ঘোষণা করে। বাংলাদেশ বিচার পায়নি। আপিল হয় ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টে। অদ্যাবধি বিচার সম্পন্ন হয়নি।’

সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আপনারা জাতির বিবেক। অবাধ তথ্য প্রবাহের যুগে সকলেই জানেন বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অস্ত্রহাতে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীরা ঢুকে পড়ে বারবার। যা আমাদের সার্বভৌমত্বের সুস্পষ্ট লংঘন। ভারতের সঙ্গে চীন, মিয়ানমার, নেপাল, ভূটান, পাকিস্তানের সীমান্ত থাকলেও শুধু বাংলাদেশ সীমান্তে তারা অমানবিক ভাবে সীমান্ত হত্যা করে। যা খুবই দুঃখজনক ও ন্যাক্কারজনক। স্বাধীনতার পর থেকে পানি আগ্রাসন, মাদক প্রেরণ, নারী ও শিশু পাচার, মানব অঙ্গপ্রত্যঙ্গের অমানবিক ব্যবসার ফলে আধিপত্যবাদী ভারতের সাথে বাংলাদেশের বিশ্বস্ততার ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠে নি। ভারত আধিপত্যবাদী আচরণ করছে এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে সুসংহত করর ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করছে। যা আমাদের জাতীয় উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির অন্তরায়। আমরা ৭ জানুয়ারি ফেলানী দিবস পালনের জন্য ২০১৫ সালে জাতিসংঘ মহাসচিব বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেছি।’

সীমান্ত হত্যা ও সার্বভৌমত্ব লংঘনের বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্য গড়তে নাগরিক পরিষদ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে এবং সক্রিয় আন্দোলন সংগ্রাম করছে।

তিনি বলেন, ‘ফেলানী হত্যাকারী বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষের ফাঁসি, ফেলানীর পরিবারকে কমপক্ষে ত্রিশ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ, সীমান্ত হত্যা ও সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন বন্ধ, কুড়িগ্রামের অনন্তপুর সীমান্তের নাম ফেলানী সীমান্ত, ঢাকার গুলশান-১ থেকে তেজগাঁও রাস্তার নামকরণ ফেলানী সরণি, বাংলাদেশ ও সারাবিশ্বে ৭ জানুয়ারি সীমান্ত হত্যা বিরোধী নিরাপদ সীমান্ত দিবস ‘ফেলানী দিবস’ পালনের দাবিতে এ বছর ২০১৭ সালে ৭ জানুয়ারি আমরা ফেলানী দিবস পালন করি। আমরা দাবি জানাচ্ছি, জাতীয়ভাবে ফেলানী দিবস পালন করা হোক। আমাদের রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ফেলানী দিবস পালনের প্রস্তাবনা জাতিসংঘে উত্থাপন করা হোক।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলাম, দার্শনিক আবু মহি মুসা, কবি কমরেড শামসুজ্জামান মিলন, দুর্নীতি প্রতিরোধ আন্দোলনের আহ্বায়ক মোঃ হারুন-অর-রশিদ খান, সাবেক ছাত্রনেতা আকবর হোসেন বাহার, শেখ নাসির উদ্দিন (ভূমিহীন) মুঠোফোন গ্রাহক এসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দীন আহমেদ, এনডিপি নেতা কাজী আমানুল্লাহ মাহফুজ, নারী নেত্রী তানিয়া সুলতানা প্রমুখ।



রাইজিংবিডি/ ঢাকা/২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭/হাসিবুল/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়