ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

রোহিঙ্গা ও সংশ্লিষ্টদের জন্য আচরণবিধি

কেএমএ হাসনাত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:১৯, ৭ অক্টোবর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
রোহিঙ্গা ও সংশ্লিষ্টদের জন্য আচরণবিধি

কেএমএ হাসনাত : বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকরা বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ার পর থেকে নানা ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। এ অবস্থায় নানা দিক বিবেচনা করে রোহিঙ্গাদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিতের পাশাপাশি জাতীয় নিরাপত্তার জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে দায়িত্ব দিয়েছে সরকার। সংশ্লিষ্টদের জন্য অবশ্য পালনীয় আচরণবিধি প্রণয়ন করেছে সেনাবাহিনী।

স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, কক্সবাজারে বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা আশ্রয় নেওয়ার পর শুরুতে ওই এলাকায় নানা  ধরনের বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। সেনাবাহিনী দায়িত্ব নেওয়ার পর পুরো ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা ফিরে এসেছে। সেনাবাহিনীর অংশগ্রহণে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ, আশ্রয়স্থল ও পয়ঃনিষ্কাশনের ব্যবস্থা, নিবন্ধনের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পন্ন হচ্ছে।

সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত উখিয়া-কুতুপালংয়ের বিভিন্ন ক্যাম্প পরিদর্শন করেন। তিনি স্থানীয় অধিবাসী এবং রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় ১০ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল মুহাম্মদ মাকসুদুর রহমান এবং সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে অর্থমন্ত্রীকে রোহিঙ্গাদের সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে অবহিত করা হয়।

২৫ আগস্ট থেকে ২৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট ৬ লাখ ৯১ হাজার ৪৭৮ জন রোহিঙ্গা বাংলাদেশে হিসেবে আশ্রয় নিয়েছেন। এদের মধ্যে শিশু যেমন আছে তেমনই সন্তানসম্ভবা নারীর সংখ্যাও অনেক।

সেনাবাহিনী প্রণীত আচরণবিধিতে রোহিঙ্গাদের প্রতি বলা হয়েছে, আপনারা আমাদের অতিথি। আপনাদের সব সমস্যা সমাধানে আমাদের সহযোগিতা গ্রহণ করছেন। আপনাদের যেন আমরা সহযোগিতা করতে পারি এজন্য ধৈর্য্য ধরুন এবং আমাদের দায়িত্ব পালনে সুযোগ দিন। যেখানে-সেখানে না ঘুরে আমাদের দেওয়া ত্রিপলে ক্যাম্পের ভিতর অবস্থান করুন। আমরা আপনাদের শেল্টার প্রদান করব।

আশ্রয়গ্রহণকারীদের উদ্দেশে বলা হয়েছে, আপনারা কেউ কোনো প্রকার জমি, ঘর বা তাবুর জন্য এলাকার কোনো মানুষকে ভাড়ার টাকা দেবেন না কিংবা ক্রয় করবেন না। এমনকি কোনো প্রকার চাঁদা প্রদান করবেন না। আপনারা সকল প্রকার সহায়তা পেতে দ্রুত রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করুন। পয়লা নভেম্বরের পর থেকে আর রেজিস্ট্রেশন হবে না। আমাদের সব প্রকার সহায়তার জন্য জরুরি ভিত্তিতে রেজিস্ট্রেশন করুন।

রোহিঙ্গাদের সতর্ক করে বলা হয়েছে, ক্যাম্পের বাইরে আপনি বিপদগ্রস্ত বা প্রতারিত হতে পারেন। তাই প্রলোভনে এলাকা ত্যাগ করবেন না। কোনোরূপ প্রতারণার শিকার হলে দ্রুত আমাদের জানান। আপনারা অবশ্যই টয়লেট ব্যবহার করুন। যত্রতত্র পয়ঃনিস্কাশন করলে রোগ মহামারী আকারে ছড়িয়ে যেতে পারে। টিউবওয়েল থেকে কিংবা আমাদের প্রদানকৃত বিশুদ্ধ খাবার পানি গ্রহণ করুন। অন্য কোনো উৎস থেকে খাবার পানি সংগ্রহ করবেন না। অসুখ চাপিয়ে রাখবেন না, আমাদের মেডিক্যাল টিমের নজরে আনুন।

ক্যাম্পের বাইরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়া থেকে সতর্ক করে বলা হয়েছে, আপনারা কোনো অবস্থাতেই উখিয়া-টেকনাফ প্রধান সড়কে অবস্থান করবেন না এবং রাস্তায় সহায়তার জন্য অপেক্ষা করবেন না। কুতুপালংয়ের পূর্বে অবস্থান করবেন এবং কুতুপালং পাহাড় অতিক্রম করে পূর্ব দিকে যাবেন না। যদি কুতুপালং অতিক্রম করেন তবে আপনাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সকল এলাকা পরিষ্কার রাখুন। পলিথিন এবং ময়লা যত্রতত্র ফেলবেন না।

রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি স্থানীয় অধিবাসীদেরও কয়েকটি বিষয় পালনের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে,  রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কোনো প্রতারণামূলক আচরণ করবেন না। রোহিঙ্গাদের সঙ্গে মানবিক আচরণ করুন এবং তাদের যথাসম্ভব সহায়তা করুন। রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে কোনো জমি বা ঘর-ভাড়া বাবদ টাকা গ্রহণ করা যাবে না। এলাকার কিংবা বহিরাগত ব্যক্তি বা সংস্থা কর্তৃক প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ডের ক্ষেত্রে আমাদের জরুরি ভিত্তিতে অবহিত করুন। প্রতিদিন বিকেল ৫টার পর স্থানীয় জনসাধারণ এবং রোহিঙ্গা ব্যতিত বহিরাগত কোনো লোক টেকনাফ থেকে উখিয়া পর্যন্ত এলাকায় অবস্থান করবেন না। রোহিঙ্গাদের গাড়িতে ওঠাবেন না এবং অত্র এলাকা থেকে কাউকে বের করে নেবেন না। প্রধান সড়কে কোনো প্রকার জটলা করবেন না এবং নিজ নিজ এলাকার প্রধান সড়ক পরিষ্কার ও জটমুক্ত রাখুন। কোনো প্রতারণামূলক আচরণ কিংবা জমি ও ঘর-ভাড়া বাবদ টাকা গ্রহণ করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

ঘোষিত সব আদেশ কঠোরভাবে মেনে চলার জন্য সকলকে অনুরোধ করেছে সেনাবাহিনী।

এলাকার বাস-ট্রাক-সিএনজি-রিকশার চালক ও মালিক সমিতির সদস্যদের মেনে চলার জন্যও কয়েকটি বিধান প্রণয়ন করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে- বাজার এলাকা কিংবা ক্যাম্পের সন্নিকটে সুনির্দিষ্ট পার্কিং লটে গাড়ি থামবে। বাজারের মধ্যে ও রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে গাড়িতে যাত্রী ওঠা-নামা করা যাবে না। গাড়ি কোনো অবস্থাতেই রাস্তা কিংবা রাস্তার পাশে পার্কিং করা যাবে না। প্রতিদিন বিকেল ৫টার পর স্থানীয় জনসাধারণ এবং রোহিঙ্গা ব্যতিত বহিরাগত কোনো লোক টেকনাফ থেকে উখিয়া পর্যন্ত এলাকায় অবস্থান করবেন না। ঘোষিত সব আদেশ কঠোরভাবে মেনে চলার জন্য সকলকে অনুরোধ করা হয়েছে।

আচরবিধিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী/সরকারি বেসরকারি প্রতিনিধির দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলা হয়েছে, রাস্তায় গাড়ি ও অন্যান্য বিষয়ে কোনো শৃঙ্খলাভঙ্গের বিষয় দৃষ্টিগোচর হলে ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। সবার সঙ্গে মানবিক আচরণ করুন। চলমান গাড়ি থেকে কেউ রিলিফ বা টাকা ছুঁড়ে দিলে থামান। মোবাইল কোর্টের নোটিশে আনুন। রোহিঙ্গাদের সঙ্গে যেকোনো প্রতারণামূলক আচরণের ক্ষেত্রে শক্ত অবস্থান গ্রহণ করুন কিংবা সমন্বয় সেলে রিপোর্ট করুন।





রাইজিংবিডি/ঢাকা/৭ অক্টোবর ২০১৭/হাসনাত/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়