ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

শহরাঞ্চলে ৬০ লাখ গৃহের সঙ্কট এসডিজি অর্জনে বড় বাধা

হাসান মাহামুদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:২৪, ১৫ অক্টোবর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
শহরাঞ্চলে ৬০ লাখ গৃহের সঙ্কট এসডিজি অর্জনে বড় বাধা

নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশের শহরাঞ্চলে প্রায় ৬০ লাখ গৃহের সঙ্কট রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে টেকসই উন্নয়ন (এসডিজি-১১) লক্ষ্যমাত্রা অর্জন, পরিকল্পিত নগরায়ন এবং বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় নগরের দরিদ্রদের আবাসন নিশ্চিত করা জরুরি।

রোববার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত নগরের দরিদ্রদের জন্য গৃহায়নে অর্থায়ন বিষয়ক জাতীয় সম্মেলনে বিশিষ্টজনরা এ অভিমত ব্যক্ত করেন। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের নগর উন্নয়ন কর্মসূচি দিনব্যাপী এ সম্মেলনের আয়োজন করে।

সহআয়োজক হিসেবে ছিল জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ, নগর উন্নয়ন অধিদপ্তর, মিউনিসিপ্যাল অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ম্যাব), বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি) এবং ব্র্যাক ইনস্টিটিউ অব গভর্নেন্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট।

অনুষ্ঠানে নগর দরিদ্রদের আবাসন সঙ্কট মোকাবেলার লক্ষ্যে তৈরি ব্র্যাকের কমিউনিটি লিড হাউজিং মডেল, ইউএনডিপির ও জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ’র লো-ইনকাম হাউজিং মডেল তুলে ধরে আলোচনা করা হয়। দারিদ্র্যবান্ধব নগর পরিকল্পনা ও নগর-দরিদ্রদের গৃহায়ন ঋণের জন্য সরকারি-বেসরকারিসহ বিভিন্ন পর্যায়ে অংশীদারিত্ব জোরদারকরণ এবং মেয়র ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ নগর উন্নয়ন সংশ্লিষ্টদের সম্পৃক্তকরণের লক্ষ্যে এ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সম্মেলনে দেশের সবগুলো সিটি কর্পোরেশনসহ প্রায় ৭৫ জন পৌর মেয়র এবং ইউএনডিপি ও বেসরকারি সংস্থা, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন পর্যায়ের তিন শতাধিক প্রতিনিধি অংশ নেন।   

ব্র্যাকের স্ট্র্যাটেজি, কমিউনিকেশন্স অ্যান্ড এমপাওয়ারমেন্ট কর্মসূচির ঊর্ধ্বতন পরিচালক আসিফ সালেহ্’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. শহীদ উল্লা খন্দকার, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন, রাজশাহীর মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, বরিশালের মেয়র আহসান হাবিব কামাল, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স-এর জেনারেল সেক্রেটারি অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আক্তার মাহমুদ, ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্নেন্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট-এর নির্বাহী পরিচালক ড. সুলতান হাফিজ, মিউনিসিপ্যাল এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-এর প্রেসিডেন্ট আলহাজ্ব মোহাম্মদ আব্দুল বাতেন, আরবান ডেভেলপমেন্ট ডিরেক্টরেট-এর পরিচালক ড. খুরশীদ জাবিন হোসেন তৌফিক এবং ন্যাশনাল হাউজিং অথরিটির চেয়ারম্যান এবং অতিরিক্ত সচিব খন্দকার আখতারুজ্জামান। সম্মেলনে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন ব্র্যাকের নগর উন্নয়ন কর্মসূচির প্রধান হাছিনা মোশরফা।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘দেশে মোট গৃহের ৮১ ভাগ গ্রামে, এর মধ্যে ৮০ ভাগই নিম্নমানের। জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে প্রতিদিন ২৩৫ হেক্টর কৃষি জমি নষ্ট হচ্ছে। তাই শুধু নগরীতে বসবাসের জন্য নয়, গোটা দেশের জন্য পরিকল্পিত আবাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলা দরকার। তবে যেভাবে নগরীতে জনসংখ্যার চাপ বাড়ছে, তাতে দেখা যাচ্ছে বেশি বেশি বস্তি গড়ে তোলা হচ্ছে। এভাবে আবাসন সমস্যার মোকাবেলা সম্ভব নয়। এটা বন্ধ করতে হবে। এই লক্ষ্যে জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের অধীনে সরকার গ্রামাঞ্চলে শিগগিরই ১০ হাজার নতুন অ্যাপার্টমেন্ট নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছে। ব্র্যাক এক্ষেত্রে এগিয়ে আসতে পারে।

ব্র্যাকসহ বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধিবৃন্দের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আপনারা স্থানীয় জনগণকে সচেতন করুন, ন্যাশনাল হাউজিংয়ের অধীনে ফ্ল্যাট নির্মাণে আমরা টাকা দিব। শুধু ব্র্যাক নয়, অন্যান্য যে কোন বেসরকারি সংস্থা এ সংক্রান্ত কাজে এগিয়ে আসলে আমরা তাদের সঙ্গেও কাজ করব।’

তিনি বলেন, ‘আগামীতে মহানগরের বাইরেও যে কেউ চাইলেই যত্রতত্র বাড়ি নির্মাণ করতে পারবে না। এজন্য একটি পরিকল্পনা আইন চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে। এ আইন পাস হলে পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদ ও উপজেলা পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট যারা দায়িত্বে আছেন তাদের অনুমতি নেওয়া লাগবে। ফলে রক্ষা পাবে গ্রামের বিপুল পরিমাণ আবাদী জমি। অন্যান্য সিটি করপোরেশনের মেয়রবৃন্দ খাস জমি দিলে তিনি দরিদ্রদের গৃহ নির্মাণ করে দেওয়ার আশ্বাস দেন।

মো. শহীদ উল্লা খন্দকার আবাসন সঙ্কট মোকাবেলায় পরিকল্পিত আবাসনের ওপর গুরুত্ব তুলে ধরেন।

অনুষ্ঠানে সাঈদ খোকন বলেন, দ্রুত নগরায়ন, ত্রুটিপূর্ণ পরিকল্পনা, জমির অপ্রতূলতার কারণে ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরগুলোতে স্বাস্থ্যকর ও নিরাপদ বাসস্থান গড়া এই সময়ে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। ছোট টিনের ঘরের পরিবর্তে উঁচু ভবন নির্মাণের তাগিদ দেন তিনি।

তিনি বলেন, ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরে নদী ভাঙন, দারিদ্র্য ও জীবিকার তাগিদে মানুষ প্রতিনিয়ত ছুটে আসছে। এজন্য ২০০ পরিবারকে একটি মডেল হিসেবে ধরে নিয়ে টোকিও, সিঙ্গাপুর ও দক্ষিণ কোরিয়ার আদলে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা, হাউজিং কোম্পানি, রাজধানী উন্নয়ন কর্র্তৃপক্ষ, ন্যাশনাল হাউজিং অথরিটিসহ সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানকে সমন্বয় করে আবাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলা যেতে পারে।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, সার্বিকভাবে দেশে দারিদ্র্যের হার কমলেও নগর দারিদ্র্য সেভাবে কমেনি। বরং ১৯৯৭ সাল থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে শহরাঞ্চলে দারিদ্র্যের হার বেড়েছে ৬০ দশমিক ৪৩ শতাংশ। শহরাঞ্চলে দারিদ্র্য বাড়লেও চাকুরি, চিকিৎসা, শিক্ষা ও অন্যান্য সুযোগসুবিধা তুলনামূলক বেশি থাকায় গ্রাম থেকে শহরে আসা মানুষের ঢল থামানোই যাচ্ছে না। বরং আশঙ্কা করা হচ্ছে, ২০২০ সালের মধ্যে ঢাকা বিশ্বের দ্বিতীয় জনবহুল নগরে পরিণত হবে।

অনুষ্ঠানে আরো জানানো হয়,বাংলাদেশে নগরমুখী মানুষের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। প্রতি বছর সারা দেশ থেকে শুধু ঢাকায় ৫ লক্ষাধিক মানুষ বসবাসের জন্য আসে। লোকসংখ্যা দিন দিন বাড়লেও এখনও ঢাকার প্রতি তিনজনে একজন মানুষ মৌলিক সুযোগ-সুবিধাহীন বস্তিতে বাস করে।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৫ অক্টোবর ২০১৭/হাসান/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়