ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

‘ন্যায়বিচারের বদলে সৃষ্টি হয়েছে নাই বিচারের পরিবেশ’

মামুন খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:১৪, ১৬ নভেম্বর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘ন্যায়বিচারের বদলে সৃষ্টি হয়েছে নাই বিচারের পরিবেশ’

নিজস্ব প্রতিবেদক : বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, দেশে এখন ন্যায়বিচারের বদলে সৃষ্টি হয়েছে নাই বিচারের পরিবেশ। দেশে বিচার-ন্যায়বিচারের কোনো সুযোগ ও পরিবেশ আজ আর নেই।

বৃহস্পতিবার পুরান ঢাকার বকশিবাজারে কারা অধিদপ্তরের প্যারেড মাঠে স্থাপিত অস্থায়ী ঢাকার পাঁচ নম্বর বিশেষ জজ ড. মো. আকতারুজ্জামানের আদালতে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থনের বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।

খালেদা জিয়া বলেন, আমার বিরুদ্ধে ৩৬টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। জনগণের কাছে এটা পরিষ্কার প্রতিটি মামলা দায়ের করা হয়েছে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে। সবগুলো মামলা দায়ের করা হয়েছে অসত্য, ভিত্তিহীন, অভিযোগের ভিত্তিতে। আমার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় আইনগত ভিত্তি নেই। আমি রাজনীতিতে সক্রিয় বলেই এবং আমাকে ক্ষমতাসীনরা সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে বিবেচনা করেই এই মামলাগুলো দায়ের করেছে। অথচ শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দায়ের করা দুর্নীতির মামলাগুলো তুলে নেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, অসত্য ও ভিত্তিহীন অভিযোগে আমার বিরুদ্ধে ক্রমাগত অপপ্রচার চালিয়ে ও জনগণ থেকে আমাকে বিচ্ছিন্ন করতে ব্যর্থ হয়েই তারা এসব মিথ্যা মামলার আশ্রয় নিয়েছে। এসব মামলা দায়ের করার উদ্দেশ্য হচ্ছে আমাকে হেনস্থা করা এবং জনগণের সামনে হেয় করা। কিন্তু তাদের সেই উদ্দেশ্য সফল হয়নি এবং হবেও না ইনশাআল্লাহ। বরং এসব করে তারাই জনগণের কাছে হেয় হচ্ছে এবং জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হচ্ছে। কারণ এদেশের মানুষ অনেক সচেতন এবং তারা সত্য ও মিথ্যার ফারাক খুব সহজেই বুঝতে পারে। তাই আমাদেরকে যতবেশি মামলায় জর্জরিত করা হচ্ছে আমরা ততবেশি দেশবাসীর সহানুভূতি ও সমর্থন পাচ্ছি। জনগণ আরো বেশি করে আমাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত হচ্ছে।

প্রাক্তন এ প্রধানমন্ত্রী বলেন, মাননীয় আদালত, সে কারণে আমরা অসত্য ও ভিত্তিহীন অভিযোগ দায়ের করা মামলা-মোকাদ্দমা নিয়ে মোটেই ভিত নই। তবে দেশবাসী ও আমাদের আশঙ্কার কারণ অন্য জায়গায়। সেটা হচ্ছে, অত্যন্ত সুপরিকল্পিত ও ন্যাক্কারজনকভাবে দেশ থেকে ন্যায়বিচারের পরিবেশ ও সুযোগ বিলুপ্ত করা হয়েছে। শাসকমহল তাদের এ অপকর্ম ও এই অসৎ উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য সবরকম কারসাজির আশ্রয় গ্রহণ করেছে। বিচার-বিভাগকে সম্পূর্ণভাবে আতঙ্কগ্রস্ত করে ফেলা হয়েছে। সে কারণে অনেকেই বলছেন, শাসকমহলের বেপরোয়া কর্মকাণ্ডে দেশে এখন ন্যায়বিচারের বদলে সৃষ্টি হয়েছে নাই বিচারের পরিবেশ। অর্থাৎ দেশে বিচার-ন্যায়বিচারের কোনো সুযোগ ও পরিবেশ আজ আর নেই।

প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকে তার পদ থেকে সরে যেতে বাধ্য করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন খালেদা জিয়া।

এদিকে এর আগে দুই মামলায় হাজিরা দিতে বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে আদালতে হাজির হন খালেদা জিয়া। তবে খালেদা জিয়া আদালতে হাজির হওয়ার আগে বেলা ১১টা ৫ মিনিটে আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়। শুরুতে আবহাওয়ার কারণে খালেদা জিয়া আদালতে আসতে দেরি হচ্ছে বলে আদালতকে অবহিত করেন সানাউল্লাহ মিয়া। এরপর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার কার্যক্রম শুরু হয়। খালেদা জিয়ার আইনজীবী আমিনুল ইসলাম আদালতকে বলেন, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপপরিচালক হারুন অর রশিদের জেরা শেষ হয়নি। কয়েকটি প্রশ্ন বাকি রয়েছে। তিনি কোর্টে আছেন। খালেদা জিয়ার পক্ষে আমরা তাকে জেরা শেষ করতে চাই। তবে প্রস্তুতির জন্য কিছু সময় চান তিনি। এরপর ১১টা ১৫ মিনিটে বিচারক ১৫ মিনিটের বিরতিতে যান। বেলা সাড়ে ১১টায় পুনরায় আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়। আমিনুল ইসলাম তদন্ত কর্মকর্তাকে জেরা শুরু করেন। জেরা চলাকালীন সময়ে ১১টা ৪০মিনিটে আদালতে হাজির হন খালেদা জিয়া। ১১টা ৪৫ মিনিটে তদন্ত কর্মকর্তার জেরা শেষ হয়।

খালেদা জিয়া বক্তব্য শুরুর করা আগে দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন আদালতকে বলেন, মামলাটি খালেদা জিয়ার আত্মপক্ষ শুনানির জন্য ধার্য রয়েছে। তিনি মামলার প্রাসঙ্গিক বিষয়ে, ৩২ সাক্ষীর সাক্ষ্যের আলোকে বক্তব্য দিবেন। কিন্তু তিনি রাজনৈতিক, অপ্রাসঙ্গিক বক্তব্য দিচ্ছেন। মামলার প্রাসঙ্গিক বিষয়ে বক্তব্য দেওয়ার জন্য আদালতকে জানান তিনি।

খালেদা জিয়ার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন এর বিরোধিতা করে বলেন, পিপি সাহেব এটা বলতে পারেন না। তিনি গাইডলাইন দিচ্ছেন। কিন্তু তার গাইডলাইন দেওয়ার অধিকার নেই, এটা সমীচিন নয়। মোশাররফ হোসেন কাজলের বিরুদ্ধে আদেশ এ রুল জারির আবেদন করেন তিনি।

প্রতি উত্তরে মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, তিনি (খালেদা জিয়া) মামলা সম্পর্কিত বিষয়ে বক্তব্য দিবেন, আমি সেটা বলেছি। আমি গাইডলাইন দিচ্ছি না। আর গাইডলাইন দ্বারা তিনি কী বুঝাতে চেয়েছেন তা আমার বোধোগম্য নয়।

জয়নুল আবেদীন বলেন, পিপি সাহেব সবসময় বলেন আত্মপক্ষ শুনানি বিচারক ও আসামির মধ্যে কথোপকথন। তিনি এর ভিতর হস্তক্ষেপ করবেন কেন? বিচারককে এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে অনুরোধ করেন তিনি।

এ বিষয়ে কিছু না বলে খালেদা জিয়াকে বক্তব্য শুরু করতে বলেন বিচারক। বেলা ১১টা ৫০মিনিটে খালেদা জিয়া তার বক্তব্য শুরু করেন। টানা একঘণ্টা ৫ মিনিট বক্তব্য দেন খালেদা জিয়া। তবে তার বক্তব্য শেষ হয়নি। এরপর তিনি সময় চান।

বিচারক সময় দিয়ে আগামী ২৩ নভেম্বর দুই মামলার পরবর্তী দিন ধার্য করেন।

এরপর ১টা পাঁচ মিনিটে আদালতে ছেড়ে যান খালেদা জিয়া। এর আগে গত ১৯ ও ২৬ অক্টোবর এবং ২ ও ৯ নভেম্বর বক্তব্য দেন খালেদা জিয়া।

এদিকে খালেদা জিয়ার আদালতে আসাকে কেন্দ্র করে সিনিয়র নেতারা আদালতে হাজির হন। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, রুহুল কবীর রিজভী, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, আব্দুল আউয়াল মিন্টু, বরকত উল্লাহ বুলু, আফরোজা আব্বাস, খায়রুল কবীর খোকন, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, শায়রুল কবীর খান প্রমুখ আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

আইনজীবীদের মধ্যে ছিলেন-ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, জয়নুল আবেদীন, এজে মোহাম্মদ আলী, আব্দুর রেজ্জাক খান, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, সানাউল্লাহ মিয়া, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, জাকির হোসেন ভূইয়া, হান্নান ভূঁইয়া, ওমর ফারুক ফারুকী, হান্নান ভূঁইয়া, হেলাল উদ্দিন, নুরুজ্জামান তপনসহ শতাধিক আইনজীবী।




রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৬ নভেম্বর ২০১৭/মামুন খান/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়