ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

সানজামুল-মুস্তাফিজ-রুবেলকে জয়ের কৃতিত্ব দিলেন তামিম

ইয়াসিন হাসান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:১৬, ২৩ জানুয়ারি ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সানজামুল-মুস্তাফিজ-রুবেলকে জয়ের কৃতিত্ব দিলেন তামিম

ক্রীড়া প্রতিবেদক : এক ম্যাচে দুই কীর্তি। প্রথম বাংলাদেশি ক্রিকেটার হিসেবে ৬ হাজার রান এবং নির্দিষ্ট মাঠে সবথেকে বেশি রান। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে মিরপুরে আজ ৭৬ রানের ইনিংস খেলার পথে দুই মাইলফলক ছুঁয়েছেন তামিম।

বড় কীর্তি গড়লেও তামিমের ইনিংসের বড় করে বাংলাদেশ পায় লড়াকু পুঁজি। পরবর্তীতে অসাধারণ বোলিংয়ে ম্যাচ সহজেই জিতে নেয় বাংলাদেশ। ম্যাচসেরা তামিম ইকবাল নিজের কীর্তি থেকেও সন্তুষ্ট দলের জয় নিয়ে। প্রত্যাশিত জয় পাওয়ায় তার মুখের হাসিও হয়েছে চওড়া। ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে ম্যাচ নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন তামিম। রাইজিংবিডি’র পাঠকদের জন্য তা দেয়া হল :

প্রশ্ন : অবশেষে ম্যাচ সেরার পুরস্কার পেলেন?
তামিম ইকবাল :
আমি আগের সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলাম, আমি প্রাপ্তিতে বিশ্বাসী পুরস্কারে নয়! আজও আমার ও সাকিবের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই (ম্যাচ সেরার পুরস্কারের জন্য) হয়েছিল। কারণ সেও হাফসেঞ্চুরি করেছিল এবং শুরুতেই দুটি উইকেট তুলে নিয়েছিল। এটা যদি ওর কাছেও যেত আমি মন খারাপ করতাম না। কারণ, আমি মনে করি সেও সমানভাবে এটার যোগ্য।

প্রশ্ন : উইকেট ব্যাটিংয়ের জন্য কেমন ছিল? ভালো ইনিংস খেলেছেন তারপরও আউট হয়ে যাওয়ায় কতটুকু আফসোস হচ্ছিল?
তামিম ইকবাল :
আমরা সত্যি বলতে সেরাটা খেলতে পারিনি। কারণ উইকেটটা সহজ ছিল না। প্রথম ১০-১৫ ওভার বলের সিম মুভমেন্ট হচ্ছিল। এরপর যখন স্পিনাররা আসল, তখন ব্যাট করাটা আসলেই অনেক কঠিন হয়ে গিয়েছিল। একটা বল টার্ন করছিল তো পরের বলটি সোজা আসছিল। সত্যিই ব্যাট করাটা কঠিন ছিল। আমার কাছে মনে হয় যে আমি ও সাকিব অনেক ভালো খেলেছি। যদিও আমরা দুজনে অনেক বেশি রান করতে পারিনি। তারপরও আমরা উইকেট অনুযায়ী ব্যাট করতে পেরেছি।

প্রশ্ন : আর নিজের ব্যাটিং…
তামিম ইকবাল :
হ্যাঁ, আমি অনেকক্ষণ চাচ্ছিলাম যে একটু আক্রমণাত্মক খেলি। কারণ আমি ফিফটি করতে চাচ্ছিলাম তখন আসলে উইকেটটা লুজ হচ্ছিল। আর আমি যে সময়ে মারতে গিয়ে আউট হলাম ওটা আসলে সঠিক সময় ছিল না বলে আমার মনে হয়। আরও পাঁচ-ছয়টা ওভার যদি আমি পার্টনারশিপ গড়ে যদি তারপর আক্রমণে যেতাম তাহলে মনে হয় ভালো কিছু হতে পারত। যদি এরকমটা করতে পারতাম তাহলে হয়তোবা আমরা ২৩০-২৩৫ করতে পারতাম সবমিলিয়ে। যে শটটা খেলে আউট হয়েছি সেটাও ভুল ছিল, সময়টাও ঠিক ছিল না।

প্রশ্ন : ২১৬ রানের মতো রান করে হারের শঙ্কা ছিল কিনা...
তামিম ইকবাল :
আমরা একটা জিনিস বুঝতে পারছিলাম যে, ২০০ রানের উপরে যা-ই হোক না কেনো সেটা তাড়া করা কঠিন হবে। উইকেট অতো সহজ ছিল না। স্পিনারদের বিপক্ষে ব্যাট করাটাই বিশেষ করে কঠিন ছিল। একই সঙ্গে ফাস্ট বোলারদের জন্য বলে সিম মুভমেন্ট ছিল। এজন্য বুঝতে পারছিলাম ২০০ এর উপরে করলে একটা সুযোগ থাকবে। আর দ্রুত উইকেট নিতে পারাটা হবে চাবিকাঠি। প্রথমেই আমরা তিন-চারটি উইকেট নিতে পেরেছি। এটা আসলে কাজে দিয়েছে।

প্রশ্ন : আজ লোয়ার অর্ডার ব্যাটসম্যানরা বড় অবদান রেখেছে...
তামিম ইকবাল :
হ্যাঁ, তাদের কথা আপনাকে বলতেই হবে। আমাকে আবারও এখানে টিম ম্যানেজমেন্টের কথা বলতে হয়। কৃতিত্বটা অবশ্যই টিম ম্যানেজমেন্টকে দিতে হবেই। কারণ গেল এক দেড় মাসে তাদেরকে যেভাবে টিম ম্যানেজমেন্ট ব্যাট করার সুযোগ করে দিয়েছে এটা আপনারা যারা গভীরভাবে দেখেছেন তারাই বুঝবেন। এরা অনেকদিন নেটে ব্যাট করেছে। আর আজকে কিন্তু ৯, ১০, ১১ নাম্বারের ব্যাটসম্যানরা মিলেই ৫০ রান (আসলে ৪৫) করেছে। তারাই আসলে আজকের ম্যাচের পার্থক্য গড়ে দিয়েছে।

প্রশ্ন : সেঞ্চুরি হলো না, রানরেটের কথা মাথায় ছিল কিনা...
তামিম ইকবাল :
অবশ্যই ওই সময়ে আক্রমণে যাওয়ার ভুল সময় ছিল। তাছাড়া লেগস্পিনার, আমি বাঁহাতি। আমাদেরই সফল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। আমি অনেকক্ষণ থেকেই তাকে (গ্রায়েম ক্রেমার) টার্গেট করছিলাম। কারণ, তখন আমাদের উইকেটের উপর উইকেট পড়ছিল। তো ভাবছিলাম এই সময়ে…যদি আমি ওকে এক দুইটা মেরে দিতে পারি তাহলে ঠিক আছে।

প্রশ্ন : সেঞ্চুরি…
তামিম ইকবাল :
হ্যাঁ, সেঞ্চুরি করতে পারলে তো অবশ্যই ভালো হতো। কারণ শেষ তিন ম্যাচে এতোদূর এসেও রান করতে না পারাটা সবসময়ই হতাশার। আজ ভালো সুযোগ ছিল। খুব বিশেষ কিছু না, আমি যদি আরও ৬-৭ ওভার ব্যাট করতে পারতাম তাহলে আমি সেঞ্চুরি করতে পারতাম।

প্রশ্ন : সাব্বির ও নাসিরের তো আজ বড় কিছু করার সুযোগ ছিল?
তামিম ইকবাল :
অবশ্যই। এই ধরণের সুযোগের জন্য সব খেলোয়াড়রাই অপেক্ষা করে। আজকে তাদের সামনে একটা সুযোগ ছিল। আমার কাছে মনে হয়, সাব্বির আসলে দূর্ভাগা। কারণ, অসাধারণ ক্যাচ ছিল তার। তার খেলা শটটিতে (আউট হওয়া শট) আমি খারাপ কিছুই দেখিনি। নাসির হয়তো হতাশ। পরের ম্যাচগুলোতে হয়তো রান পাবে এবং নিজের আত্মবিশ্বাস ফিরে পাবে।

প্রশ্ন : আজ তো দুটি মাইলফলক ছুঁয়েছেন। কেমন লাগছে? আর কোন রেকর্ডটিকে এগিয়ে রাখবেন?
তামিম ইকবাল :
অবশ্যই ভালো লাগছে। আমি জানতাম অবশ্য আজকে ম্যাচের আগে যে আমার দুইটা রেকর্ডের জন্য কত রান লাগবে। মাইলফলকছুঁতে পারলে সবসময়ই ভালো লাগে। একই মাঠে এতো রান আরেকটা হল ছয় হাজার রানের মাইলফলক। আমি আগের সংবাদ সম্মেলনেই বলেছিলাম আমি এটা উদযাপন করব। যেকোনো অর্জনই উদযাপন করা উচিত। তবে আমি মনে করি, একই ভেন্যুতে বেশি রান করার রেকর্ডটি একজন বাংলাদেশি হিসেবে আমার কাছে বেশি এগিয়ে থাকবে।

প্রশ্ন : ফাইনালের উইকেট কেমন প্রত্যাশা করছেন?
তামিম ইকবাল :
আশা করি, এ ধরণের উইকেটে ফাইনাল হবে না। হলেও কিভাবে আরও ভালো করা যায় সেই পথ খুঁজে বের করতে হবে।

প্রশ্ন : ধারাবাহিক রান করার রহস্য...?
তামিম ইকবাল :
আমার কাছে মনে হয় যে আমার মানসিক শক্তি, যেভাবে আমি অনুশীলন করছি, আমার দৃষ্টি, আমি জানি আমি কি করতে চাই, কতদূর যেতে চাই। আমি সবসময় বলছি যে কোনো ব্যাটসম্যানের জন্য বিশেষ করে প্রথম ২-৩ ব্যাটসম্যানের জন্য প্রথম ২০-২৫ বল সবসময় খুব কঠিন। যখন ২০-২৫ বল খেলে ফেলবেন তখন আপনি স্বস্তি অনুভব করবেন এবং বড় রান করার জন্য এগোতে পারবেন। আমিসেটাই চেষ্টা করছি। আমি এখন খুব ভালো সময় কাটাচ্ছি। এটাকে যতদূর পারা যায় বড় করতে চাই। কারণ, আপনি কখনই বলতে পারবেন না কখন খারাপ সময় আসবে।

প্রশ্ন : এনামুল হকের বিজয়ের পারফরম্যান্স…
তামিম ইকবাল :
আমার কাছে মনে হয় ওর আজকের ম্যাচটা বাদ দিলে বাকি দুইটি ম্যাচ ভালোই লেগেছে। ব্যক্তিগতভাবে মনে হয় সে বড় রান করার খুব কাছেই আছে। আর সত্যি কথা বলতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ও আমার উপর থেকে অনেকখানি চাপ সরিয়ে নিয়েছে। আর এই সিচুয়েশনে এটা যদিও যথেষ্ট নয়। তবে আমি মনে করি সে ভালো করবে।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৩ জানুয়ারি ২০১৮/ইয়াসিন/আমিনুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়