ঢাকা     মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৩ ১৪৩১

ট্যানারির বর্জ্যে খাবার : বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি

আরিফ সাওন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:১৬, ৩১ জানুয়ারি ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ট্যানারির বর্জ্যে খাবার : বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি

নিজস্ব প্রতিবেদক : পোল্ট্রি ও মাছের খাবারে (ফিড) পাওয়া যাচ্ছে ট্যানারির বিষাক্ত বর্জ্য। চামড়ার বর্জ্যে রয়েছে অত্যন্ত ক্ষতিকর উপাদান। এসব বর্জ্য দিয়ে মাছ ও মুরগির খাবার তৈরি হচ্ছে, আর এই খাবার খাওয়ানোর ফলে মাছ ও মুরগির শরীর হচ্ছে বিষাক্ত। অসাধু ব্যবসায়ীদের এই অনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্য দেশবাসীর স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে।

বুধবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ‘পোল্ট্রি ফিডে বিষাক্ত ট্যানারি বর্জ্য: গভীর সংকটে জনস্বাস্থ্য! মুক্তির উপায় কী?’ বিষয়ে এক আলোচনা সভা হয়। সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এ আলোচনা সভার আয়োজন করে।

তারা বলেন, আগে হাজারিবাগের বিভিন্ন স্থানে হতো এই অপকর্ম। এখন ভাকুর্তার মোগড়াকান্দির চকে বিষাক্ত ট্যানারির বর্জ্য থেকে তৈরি হচ্ছে পোল্ট্রি ও মাছের খাবার (ফিড) তৈরির প্রাথমিক কাজ।

বাপা’র প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক ও বাংলাদেশ ফুড সেফটি নেটওয়ার্ক-এর চেয়ারম্যান মহিদুল হক খানের সভাপতিত্বে এবং বাপা’র যুগ্ম সম্পাদক মিহির বিশ্বাসের সঞ্চালনায় এতে মূল বক্তব্য রাখেন বাপা’র যুগ্ম সম্পাদক ও নিরাপদ খাদ্য-পানীয় ও ভোক্তা অধিকার কর্মসূচির সদস্য সচিব জাহেদুর রহমান।

নির্ধারিত আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রাক্তন প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এম আব্দুল মমিন, পশুসম্পদ ও পোল্ট্রি বিশেষজ্ঞ বিধান চন্দ্র দাস, ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টের পরিচালক গাউস পিয়ারী এবং মিডিয়া অ্যাডভোকেসি কর্মকর্তা পরিবেশকর্মী সৈয়দ সাইফুল আলম শোভন।

মহিদুল হক খান বলেন, আগামী ২ ফেব্রুয়ারি ‘জাতীয় নিরাপদ খাদ্য দিবস’ সারাদেশে পালিত হবে। তবে শুধু দিবস পালন করলেই চলবে না, নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে সরকারকে আন্তরিক হতে হবে। হাইকোর্টের আদেশ মেনে নিষিদ্ধ বিষাক্ত ট্যানারি বর্জ্য দিয়ে তৈরি ফিড বর্জন করার জন্য তিনি এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানান। পাশাপাশি এ বিষয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে যথাযথ দায়িত্ব পালনে সজাগ থাকারও আহ্বান জানান।

জাহেদুর রহমান বলেন, অসাধু ব্যবসায়ীদের এই অনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্য দেশবাসীর স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে। চামড়ার বর্জ্য থেকে পোল্টি ফিড তৈরি পুরো প্রক্রিয়াটি এতটা ভয়াবহ যে, না দেখলে বিশ্বাস হবে না। এতে বাড়ছে শ্রমিকদের স্বাস্থ্যঝুঁকি এবং দূষিত হচ্ছে স্থানীয় কৃষিজমি, নদীর পানি, বাতাস ও পরিবেশ।

তিনি বলেন, চামড়া প্রক্রিয়াজাত করার জন্য শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কমপক্ষে শতাধিক ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয়। চামড়া ফিনিশিং প্রক্রিয়ার শেষ স্তর পর্যন্ত কমপক্ষে ২০ ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয়। এর মধ্যে সবেচেয় ভয়াবহ হলো ক্রোমিয়াম। এটি আগুনে জ্বালালেও কোনো ক্ষয় নেই। মাটিও হজম করতে পারে না। কিন্তু সেই কেমিক্যাল আমাদের দেহে প্রবেশ করে।

তিনি আরো জানান, ক্রোমিয়াম এবং সীসা মানবদেহে সহনীয় মাত্রার চেয়ে বেশি প্রবেশ করলে মানুষের লিভার, কিডনি, ব্রেন ও নার্ভাস সিস্টেম অচল হয়ে যায়। এতে একদিকে বিকলাঙ্গ শিশুর জন্মহার বৃদ্ধি পাচ্ছে, অন্যদিকে নারীর প্রজনন ক্ষমতাও হ্রাস পাচ্ছে।

বিষাক্ত ট্যানারির বর্জ্যে পোল্টি ফিড তৈরিতে নিয়োজিত সব অবৈধ প্রতিষ্ঠান বন্ধে মহামান্য আদালতের রায় দ্রুত বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য কর্তৃপক্ষের প্রতি জোর আহ্বান জানান তিনি।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩১ জানুয়ারি ২০১৮/সাওন/মুশফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়