ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানের দায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের

হাসান মাহামুদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:২৫, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানের দায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের

নিজস্ব প্রতিবেদক : ‘রোহিঙ্গা সমস্যার টেকসই সমাধানে এগিয়ে না এলে উদ্ভূত দায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কেই বহন করতে হবে’ বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিব মো. শহীদুল হক।

বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনে জাতিসংঘে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের স্থায়ী প্রতিনিধিদের সঙ্গে এক মতবিনিময় অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন। বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে বৃহস্পতিবার নিউইয়র্ক সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

অনুষ্ঠানে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে বিতাড়িত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে বাংলাদেশের মানবিক সহায়তা প্রদান, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভূমিকা এবং এর টেকসই সমাধানের ওপর ‘রোহিঙ্গা হিউম্যানিটারিয়ান ক্রাইসিস : বাংলাদেশ রেসপন্স’ শীর্ষক একটি বক্তব্য দেন পররাষ্ট্র সচিব। এতে ওঠে আসে অসহায় রোহিঙ্গাদের পাশে উদার মানবিক সহায়তা দেওয়া ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভূমিকা এবং দেশবাসীকে রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানসহ অন্যান্য বিষয়গুলো।

এই মানবিক আশ্রয় দেওয়ায় বাংলাদেশ যে নিরাপত্তা, আর্থ-সামাজিক ও পরিবেশগত ঝুঁকির মুখে পড়েছে তা সবিস্তারে তুলে ধরেন পররাষ্ট্রসচিব। কোনো বিশেষ মহল যাতে রোহিঙ্গাদের দুর্বলতার সুযোগ নিতে না পারে, সেদিকে বাংলাদেশ সরকার সর্বোচ্চ সতর্ক রয়েছে বলে তিনি বক্তব্যে উল্লেখ করেন।

তিনি এ সংকটের সমাধানে সাধারণ পরিষদের ৭২তম অধিবেশনে দেওয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাষণে উল্লিখিত ৫ দফা সুপারিশের পুনরুল্লেখ করেন। এই সমস্যার সমাধানে বাংলাদেশ মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে বলেও তিনি জানান। এ সংক্রান্ত বিভিন্ন দ্বিপাক্ষিক চুক্তির বাস্তবায়নে মিয়ানমারকে আন্তরিকতার সঙ্গে এগিয়ে আসতে হবে বলে তিনি দাবি করেন।

পররাষ্ট্রসচিব জানান, বতর্মানে এক মিলিয়নের বেশি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী বাংলাদেশে অবস্থান করছে এবং তা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ চায় বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী নিজ ভূমিতে নিরাপদে, নিরাপত্তার সঙ্গে এবং পূর্ণ মর্যাদা নিয়ে প্রত্যাবর্তন করবে। নিজ ভূমিতে প্রত্যাবর্তন, বিদ্যমান চ্যালেঞ্জসমূহ মোকাবিলা এবং এই সমস্যার টেকসই সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে মিয়ানমারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান পররাষ্ট্রসচিব শহীদুল হক।

 


প্রত্যাবাসন, রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব এবং এ সংক্রান্ত সম্ভাব্য বিভিন্ন সমস্যার বিষয়ে উপস্থিত রাষ্ট্রদূতদের প্রশ্নের উত্তরে পররাষ্ট্রসচিব বলেন, মিয়ানমারকে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে হবেই কারণ এ সমস্যা তাদেরই সৃষ্টি এবং মিয়ানমারই রোহিঙ্গাদের নিজ ভূমি।

অনুষ্ঠানে ভারত, রাশিয়া, চীন, নেদারল্যান্ড, পেরু, পাকিস্তান, সৌদি আরব, কানাডা, যুক্তরাজ্য, ওমান, সিঙ্গাপুর, ভ্যাটিক্যান, মালদ্বীপ ও মালয়েশিয়াসহ প্রায় ৫০টিরও বেশি দেশের রাষ্ট্রদূত এবং প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। উপস্থিত ছিলেন জাতিসংঘে নিযুক্ত ওআইসির রাষ্ট্রদূত ড. আগশিন মেহ্দিয়েভ।

এর আগে দুপুরে নিউ ইয়র্কস্থ ইন্টারন্যাশনাল পিস ইনস্টিটিউটের আয়োজনে একই বিষয়ে এক আলোচনায় অংশ নেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিব। প্রতিষ্ঠানটির ভাইস প্রেসিডেন্ট ড. অ্যাডাম লুপেলের সঞ্চালনায় এই আলোচনা ও মতবিনিময় অনুষ্ঠানে অংশ নেন জাতিসংঘ সদস্য রাষ্ট্রসমূহ, জাতিসংঘ ও এর সহযোগী সংস্থা, আন্তর্জাতিক সংস্থা, এনজিও, গবেষণা প্রতিষ্ঠান, ও বিশ্ববিদ্যালয়সমুহের প্রায় দেড় শতাধিক প্রতিনিধি।

এই অনুষ্ঠানে আলোচনা ও আলোচনা পরবর্তী প্রশ্নোত্তর পর্বের মাধ্যমে ওঠে আসে মিয়ানমার সংকট সমাধানের বিভিন্ন দিক এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের করণীয় বিষয়গুলো।

উভয় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী বিদেশি রাষ্ট্রদূত, জাতিসংঘ ও এর সংস্থাসমূহ এবং আন্তর্জাতিক অন্যান্য সংস্থার প্রতিনিধি সীমিত সম্পদ ও ক্ষুদ্র আয়তনের দেশ হয়েও রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা প্রদানের যুগান্তকারী দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করার জন্য বাংলাদেশের সরকার ও জনগণকে ধন্যবাদ জানান।

বিকেলে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে ‘ইন্টারন্যাশনাল মাইগ্রেশন : এ টুল ফর গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট’ বিষয়ক এক প্যানেল আলোচনায় মডারেটরের দায়িত্ব পালন করেন পররাষ্ট্রসচিব শহীদুল হক।

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভাপতি (পিজিএ) মিরোস্লাভ ল্যাজাক এর সঙ্গে বৈঠক: বৈঠককালে সাধারণ পরিষদের সভাপতি রোহিঙ্গা সমস্যা মোকাবিলায় বাংলাদেশের ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করেন। এই সংকটের টেকসই সমাধানে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সম্ভাব্য সহযোগিতার বিষয়টি বৈঠকে গুরুত্ব পায়।

পিজিএ আগামী এপ্রিল মাসে টেকসই শান্তিবিষয়ক জাতিসংঘের উচ্চ পর্যায়ের সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমন্ত্রণ পুনর্ব্যক্ত করেন। এক্ষেত্রে তিনি আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষায় বাংলাদেশের দৃষ্টিভঙ্গি জানার আগ্রহ ব্যক্ত করেন। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক অভিবাসন ব্যবস্থাপনা বিষয়ে জাতিসংঘের আওতায় একটি গ্লোবাল কম্প্যাক্ট প্রণয়নের ক্ষেত্রে তিনি বাংলাদেশের সক্রিয় ও গঠনমূলক ভূমিকার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

 


পররাষ্ট্রসচিব পিজিএকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, আশা করা যাচ্ছে প্রধানমন্ত্রী এপ্রিল মাসের এই উচ্চ পর্যায়ের সভায় অংশ নেবেন এবং আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার প্রতি বাংলাদেশের অব্যাহত ও সম্প্রসারিত ভূমিকার কথা তুলে ধরবেন।

জাতিসংঘের মানবিক সহায়তাবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল মার্ক লোকক্-এর সঙ্গে বৈঠক: রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে পররাষ্ট্রসচিব জাতিসংঘসহ অন্যান্য দাতা সংস্থাসমূহের পক্ষ থেকে সমন্বিত ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ওপর জোর দেন। মার্ক লোকক্ এই সংকটের সমাধানে জাতিসংঘ সংস্থাসমূহের পক্ষ থেকে সম্ভাব্য সব সহযোগিতা অব্যাহত রাখার আশ্বাস দেন।

জাতিসংঘের রাজনৈতিকবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল জেফ্রে ডি ফেল্টম্যানের সঙ্গে বৈঠক: মিয়ানমারসহ আঞ্চলিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে ফেল্টম্যান এ বৈঠকে পররাষ্ট্রসচিবের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের প্রস্তাবনা অনুযায়ী মহাসচিবের মিয়ানমারবিষয়ক বিশেষ দূত নিয়োগের প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন হবে বলে পররাষ্ট্রসচিব প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন। রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে জাতিসংঘ মহাসচিবসহ জাতিসংঘের সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তাদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে কাজ করে যাচ্ছেন মর্মে ফেল্টম্যান পররাষ্ট্রসচিবকে জানান।

বৈঠকসমূহে উপস্থিত ছিলেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮/হাসান/সাইফ/এসএন

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়