ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

রাজধানীতে বেড়েছে পকেটমারদের দৌরাত্ম্য

আসাদ আল মাহমুদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
রাজধানীতে বেড়েছে পকেটমারদের দৌরাত্ম্য

ফাইল ফটো

আসাদ আল মাহমুদ: রাজধানী ঢাকার নয়াবাজার থেকে সকাল ৯টার দিকে বাসে করে কারওয়ান বাজার এলাকায় যাচ্ছিলেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী জিএম আল মাহমুদ (৩৫)। কর্মস্থলমুখী মানুষের ভিড়ের চাপে একরকম লড়াই করে বাসে ওঠেন। বাসটি প্রেসক্লাব এলাকায় এলে প্যান্টের পকেটে হাত দিয়ে দেখেন মানিব্যাগ নেই। মানিব্যাগে ৩ হাজার ৪৯০ টাকা ছিল। দিনটি ছিলো ১০ ফেব্রুয়ারি।

একইভাবে গত ৩ ফ্রেব্রুয়ারি পল্টন আসার জন্য রায়েরবাগ থেকে শ্রাবন পরিবহনের একটি বাসে উঠেন গণমাধ্যমকর্মী মাসুদ রায়হান। গন্তব্যস্থল পল্টন হলেও গুলিস্তান যাওয়ার পর তার পকেটে থাকা স্যামসাং ব্র্যান্ডের মোবাইল ফোনটি হারিয়ে যায়।

শুধু মাহমুদ ও মাসুদ নয়, এভাবেই প্রতিনিয়ত বাস চলাচলকারী যাত্রীরা পকেটমারদের টার্গেটে পড়ছেন। তাদের কবলে পড়ে টাকা ও মোবাইল ফোন খুইয়ে চলেছেন তারা। ভিড়ের সুযোগে চক্রের সদস্যরা হাতিয়ে নিচ্ছে টাকা ও মোবাইল ফোন।

রাজধানীর সদরঘাট থেকে মিরপুরগামী ইউনাইটেড পরিবহন, বিহঙ্গ পরিবহন, কেরানীগঞ্জ থেকে মিরপুরগামী এভারেস্ট, দিশারী, ৭, ৮, ৩ এবং ৬ নম্বরসহ বিভিন্ন গাড়িতে পকেটমারদের দৌরাত্ম বেড়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। যাত্রীবেশে গাড়িতে উঠে তারা এই অপকর্ম করে চলেছে।

বিভিন্ন সূত্র জানায়, সাধারণত অফিস শুরু বা ছুটির সময়ে নগর পরিবহনের বাসে ভিড়ের মধ্যে চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী ও ছাত্ররাই বেশিরভাগ পকেটমারদের শিকারে পরিণত হয়ে থাকেন। পকেটমাররা মূলত অফিসগামী ও অফিসফেরত লোকদের টার্গেট করে। সদরঘাট, নয়াবাজার, বংশাল, গুলিস্তান অথবা মতিঝিলে এরা যাত্রীর মতো বাসে উঠে। সুযোগ বুঝে কাজ করে গাড়ি থেকে নেমে যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ‘সদরঘাট, মতিঝিল, রায়েরবাগ থেকে বাস ছেড়ে আসলেও পকেটমারদের মূল তৎপরতা শুরু হয় নয়াবাজার, বংশাল, গুলিস্তান, পল্টন ও ফার্মগেট থেকে। কেননা, এখান থেকে সবচেয়ে বেশি যাত্রীরা বাসে উঠে। এ কারণে বাসগুলোতেও ভিড় থাকে। আর এ সুযোগটিই পকেটমাররা কাজে লাগিয়ে থাকে। 

জানতে চাইলে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী মো. সাইফুল্লাহ নীরব বলেন,  ‘গত ১০ ফ্রেব্রুয়ারি অফিস শেষে সন্ধ্যায় ফার্মগেট থেকে গুলিস্তানগামী খাজাবাবা নামের পরিবহনের একটি বাসে ভিড় ঠেলে উঠি। বাস থেকে গুলিস্তান নেমে পকেটে হাত দিয়ে দেখি মানিব্যাগ নেই। মানিব্যাগে ১ হাজার  ২৯০ টাকা, জাতীয় পরিচয়পত্র, এটিএমকার্ডসহ গুরুত্বপূন্ন কাগজপত্র ছিলো। জিনিষ হারানোর পর এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট থানায় অভিযোগ দায়ের করতে গেলে পুলিশের জেরার মুখে পড়তে হয়। তাদের প্রশ্নের মুখে অভিযোগ না করেই থানা থেকে চলে এসেছি।’

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) এক কর্মকর্তা না প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘রাজধানীতে হঠাৎকরেই বেড়েছে পকেটমারদের দৌরাত্ম্য। একটি সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারী ও পকেটমার চক্র রাজধানীর বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড, রেল স্টেশন ও গলিপথে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। এতে করে বিভিন্ন যানবাহনের চালক ও যাত্রীরা প্রতিনিয়ত ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। সাধারণ মানুষের কষ্টে উপার্জিত নগদ টাকা, মোবাইল ফোন, স্বর্ণালঙ্কারসহ মূল্যবান জিনিসপত্র পকেটমাররা নিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে সহজেই।’

তিনি আরো বলেন, ‘পুলিশের বিভিন্ন টিম বাস টার্মিনাল এবং অভ্যন্তরীণ রুটের কাউন্টারগুলোতে থাকে। পকেটমাররা লোকজনের হাতে ধরা না পড়লে আসলে চিহ্নিত করা কঠিন ব্যাপার।’ এলাকা ভিত্তিক পকেটমারদের তালিকা করে গোয়েন্দা পুলিশ অভিযান পরিচালনা করে বলে জানান তিনি। 

বিহঙ্গ পরিবহণের চেকার (সুপারভাইজার) সজিব বলেন, ‘বাস স্বল্পতার কারণে যাত্রীরা ঠেলে গাড়িতে ওঠেন। আর এই সুযোগে পকেটমারদের শিকার হন তারা।’ তিনি ভিড়ের সময় যাত্রীদের গুরুত্বপূর্ণ মালামাল নিয়ে সাবধানে থাকার পরামর্শ দেন।

ঢাকা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান বলেন, ‘যেকোনো ধরনের অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আমরা তৎপর রয়েছি। ইতোমধ্যে পুলিশ ও গোয়েন্দাদের তৎপরতায় অজ্ঞান ও মলম পার্টি এবং ছিনতাইকারীসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধীরা নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছে। টানা পার্টির বিরুদ্ধেও আমাদের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। নগরবাসীর আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।’

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮/আসাদ/হাসান/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়