ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

‘বিধ্বস্তের আগে বিকট শব্দ, যাত্রীদের আর্তনাদ’

এনএ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:০২, ১৩ মার্চ ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘বিধ্বস্তের আগে বিকট শব্দ, যাত্রীদের আর্তনাদ’

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : নেপালে কাঠমান্ডুর ত্রিভূবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের বিমানটি বিধ্বস্তের আগে বিকট শব্দ হয় এবং বিমানের অভ্যন্তরে শোনা গেছে চিৎকার, আর্তনাদ। বিধ্বস্ত বিমানের বেঁচে যাওয়া একাধিক যাত্রী একথা বলেছেন।

ওই বিমানের যাত্রী ছিলেন বাংলাদেশি শাহরিন আহমেদ (২৯)। কাঠমান্ডু মেডিক্যাল কলেজ টিচিং হাসপাতালে তাঁর চিকিৎসা চলছে। তিনি বলেন, ত্রিভূবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিধ্বস্ত বিমানে ‘বিমানটি অবতরণের আগমুহূর্তে বাঁ দিকে কাত হয়ে যায়। যাত্রীরা তখন চিৎকার শুরু করেন।

শাহরীন আরো বলেন, ‘হঠাৎ করে বিমানের পেছন দিকে আমরা আগুন দেখতে পাই। আমার এক বন্ধু আমাকে দৌড়ে সামনে যাওয়ার জন্য বলে। কিন্তু আমরা যখন দৌড়ে সামনে যাচ্ছিলাম, আমার সেই বন্ধুর গায়ে আগুন ধরে যায় এবং সে পড়ে যায়। তখন অনেকের আর্তনাদ শুনতে পাই। জ্বলন্ত বিমান থেকে তিন যাত্রী লাফিয়ে পড়ে। সৌভাগ্যবশতঃ কেউ একজন আমাকে নিরাপদে বের করে নিয়ে এসেছেন।’

এভাবেই ভয়ংকর অভিজ্ঞতার কথা বর্ণনা করেন শাহরীন। নেপালের হিমালয়ান টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কাঁদতে কাঁদতে বিধ্বস্ত হওয়ার আগমুহূর্তের পরিস্থিতির বর্ণনা দেন তিনি। পেশায় শিক্ষক শাহরিনের নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডু ও পোখারা সফরের পরিকল্পনা ছিল। দুর্ঘটনায় তাঁর শরীরের অনেক জায়গায় পুড়ে গেছে। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, শাহরীনের ডান পায়ে আঘাত লেগেছে এবং তাঁর শরীরের ১৮ শতাংশ পুড়ে গেছে। অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হতে পারে।

ওই বিমানে ছিলেন অপর এক বাংলাদেশি যাত্রী মেহেদি হাসান। প্রথমবারের মতো বিমানে করে নেপালে যান তিনি। সঙ্গে ছিল স্ত্রী, চাচাতো ভাই ও তার মেয়ে। তিনি তার ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা বলেন- ‘আমাদের আসন ছিল বিমানের পেছন দিকে। আগুন দেখতে পেয়ে আমরা বিমানের জানালা ভাঙার চেষ্টা করেছি, কিন্তু পারিনি। আশা করেছিলাম আমাদের কেউ উদ্ধার করবে। আমি ও আমার স্ত্রী বেঁচে গেছি। কিন্তু আমার চাচাতো ভাই ও তার মেয়ে নিখোঁজ রয়েছে।’ মেহেদি হাসানও কাঠমান্ডু মেডিকেল কলেজ টিচিং হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

বেঁচে যাওয়া অপর এক যাত্রী কেশব পান্ডে। তিনি বিবিসিকে বলেন, ‘বিমান বিধ্বস্তের পর আমি বের হওয়ার চেষ্টা করি। বিমানে তখন আগুন জ্বলছিল। কিন্তু আমি বের হতে ব্যর্থ হই। আমার হাত ও পা আটকা পড়েছিল। আমার আসন ছিল ইমারজেন্সি দরজার কাছে। উদ্ধার কর্মীরা এসে যখন দরজা খোলে তখন সম্ভবত আমি নিচে পড়ে যাই। এরপর আর আমার কিছু মনে নেই। আমি অচেতন হয়ে গিয়েছিলাম।’



বিধ্বস্ত বিমানের জানালা দিয়ে বেরিয়ে আসা সনম শাক্য নামের এক যাত্রী এএফপিকে বলেন, বিমানটি ওপর থেকে নিচে আবার ও ডান থেকে বামে যাচ্ছিল। আমি ভাবলাম এয়ার ট্রাফিকের কারণে এটি হচ্ছে।

দূর্ঘটনার সময় বিমানবন্দরে অপর একটি বিমানে শ্রাধা গিরি নামের এক যাত্রী তার মেয়েসহ বসেছিলেন। ইউএস-বাংলার বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনা তিনি প্রত্যক্ষ করেন তার বিমানে বসে। বিবিসিকে তার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে বলেন, বাইরে ব্যাপক শোরগোল হচ্ছিল। বিমানটি যেখানে বিধ্বস্ত হয় সেখানে অনেক নিরাপত্তা কর্মী, অ্যাম্বুল্যান্স, অগ্নিনির্বাপক গাড়ি ছুটে যাচ্ছিল। আমাদের সবার চোখের সামনে এ ঘটনার আকষ্মিকতায় আমরা হতবিহ্বল হয়ে যাই।

সোমবার নেপালের স্থানীয় সময় দুপুর ২টা ২০ মিনিটে ত্রিভূবন বিমানবন্দরে অবতরণকালে রানওয়ে থেকে ছিটকে গিয়ে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। ঢাকা থেকে কাঠমান্ডুগামী ওই বিমানে ৬৭ জন যাত্রী ও চারজন ক্রু ছিলেন। এদের মধ্যে দুই শিশুসহ ৩৩ বাংলাদেশি ছিলেন। সবশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এর ৫০ আরোহী নিহত হয়েছেন।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৩ মার্চ ২০১৮/এনএ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়