ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

রানা প্লাজা ধস: বিচার না হওয়ায় উদ্বেগ টিআইবির

এম এ রহমান মাসুম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৫৫, ২৬ এপ্রিল ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
রানা প্লাজা ধস: বিচার না হওয়ায় উদ্বেগ টিআইবির

নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশের পোশাক শিল্পের সবচেয়ে ভয়াবহ দুর্ঘটনা রানা প্লাজা ধসের পাঁচ বছর পেরিয়ে গেলেও জড়িতদের বিচার না হওয়া উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

বৃহস্পতিবার টিআইবি কার্যালয়ে ‘তৈরি পোশাক খাতে সুশাসন: অগ্রগতি ও চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক পর্যালোচনায় এমন উদ্বেগ প্রকাশ করার পাশাপাশি বেশকিছু সুপারিশ তুলে ধরেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান।

২০১৩ সালে সংঘটিত রানা প্লাজা দুর্ঘটনার ৫ বছর পেরিয়ে গেলেও জড়িতদের বিচার না হওয়া উদ্বেগজনক মন্তব্য করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘যারা অপরাধী, যারা এই দুর্ঘটনার জন্য দায়ী, শুরু থেকেই তাদের বিচারের ক্ষেত্রে বিজিএমইএসহ সংশ্লিষ্টদের দ্বারা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়েছে। বিচারের এই দীর্ঘসূত্রিতা বা বিচার সংশ্লিষ্টদের অদক্ষতার কারণে এর বিচার বিলম্বিত হচ্ছে।’

তিনি বলেন, রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় মূল অপরাধীদের চিহ্নিত করা হয়েছে। কিন্তু বিচার হয়নি। শুধু একটি মামলায় দুজনের ৩ বছর ও ছয় বছর করে শাস্তি হয়েছে। তাও সেটি রানা প্লাজা দুর্ঘটনার কারণে নয়। সেটা তাদের আয়ের সঙ্গে সম্পদের অসামঞ্জস্যতার মামলায়। এই বিচার না হওয়া অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এ সময় রানা প্লাজা ধস ও তাজরীন ফ্যাশনসে সংঘটিত অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় দায়ের করা মামলাগুলোর বিচারে দীর্ঘসূত্রিতারও সমালোচনা করেন তিনি।

তৈরি পোশাক খাতে রানা প্লাজা দুর্ঘটনা পরবর্তীতে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় গৃহীত উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপসমূহের অগ্রগতি পর্যালোচনা ও বিদ্যমান চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করার জন্য এ গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রস্তুত করেছে টিআিইবি।

গবেষণাটি প্রণয়ন ও উপস্থাপন করে অ্যাসিসটেন্ট প্রোগ্রাম ম্যানেজার নাজমুল হুদা মিন। গবেষণায় তিনি দাবি করেন, ২০১৩ সাল থেকে ২০১৮ পর্যন্ত ১০২টি উদ্যোগের মধ্যে ৩৯% অগ্রগতি হয়েছে, ৪১% এর অগ্রগতি চলমান এবং ধীরগতিতে বাস্তবায়ন হচ্ছে বা স্থবির রয়েছে ২০%।

বাংলাদেশ শ্রম আইন-২০১৬ সংশোধন (২০১৩) পুনরায় সংশোধনীর জন্য উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন ত্রিপক্ষীয় কমিটি গঠন এবং কমিটির সংশোধনী প্রস্তাব আইএলও’র ‘কমিটি অব এক্সপার্ট’-এ উপস্থাপন করা হয়। তবে তারা প্রস্তাবটি অসম্পূর্ণ বলে চিহ্নিত করে এর বিভিন্ন ধারা সংশোধনের জন্য সরকারকে অনুরোধ করেছে। আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা রয়েছে বলে গবেষণায় ওঠে এসেছে।

এতে বলা হয়, রানা প্লাজার মালিক ও কারখানা মালিকদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি ও শ্রম আদালতে একাধিক মামলা দায়ের করা হলেও ২০১৫ সালে সিআইডি ৪১ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করে। কিন্তু আসামি পক্ষের আবেদনের কারণে উচ্চ আদালতে মামলায় স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়। তাজরিন ফ্যাশনের মালিকের বিরুদ্ধে দায়ের করা ফৌজদারি মামলায় ২০১৫ সালে সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত মাত্র দুজনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। এছাড়া স্পেকট্রাম ফ্যাশন মালিকের বিরুদ্ধে ২০০৫ সালে হাইকোর্টে রিট করা মামলায় এখন পর্যন্ত শুনানি হয়নি। এতে আইন প্রয়োগে বাস্তব অগ্রগতির ঘাটতি রয়েছে বলে টিআইবির গবেষণায় ওঠে এসেছে।

প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য বেশকিছু উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। তৈরি পোশাক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় ৮ দফা সুপারিশ করে সংস্থাটি। সুপারিশগুলো-তৈরি পোশাক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় তদারকি ও সমন্বয়ের জন্য একক কর্তৃপক্ষ গঠন করতে হবে।

শ্রম আইন-২০০৬ এ বিদ্যমান ঘাটতি বিশেষ করে শ্রমিকের ক্ষতিপূরণ, প্রসূতিকালীন ছুটি, সংগঠন করা ও যৌথ দর কষাকষির অধিকার ইত্যাদি ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সংশোধন করতে হবে।

দ্রত বিচার ট্রাইব্যুনাল গঠন করে বিভিন্ন সময়ে সংঘটিত দুর্ঘটনার দায়েরকৃত মামলসমূহের দ্রুত নিষ্পত্তি করতে হবে। মজুরি, অতিরিক্ত কর্মঘণ্টা, ছুটি ইত্যাদি ক্ষেত্রে শ্রমিকের আইনগত অধিকার সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে নিশ্চিত করতে হবে। এক্ষেত্রে সরকারি তদারকি বাড়াতে হবে।

সাব কন্ট্রাক্ট নির্ভর ও ক্ষুদ্র কারখানার কমপ্লায়েন্স নিশ্চিতের বিভিন্ন অংশীজনের অংশগ্রহণে একটি তহবিল গঠন করতে হবে। এসব কারখানার মালিকদের কারখানা নিরাপত্তা নিশ্চিতে সহজ শর্তে তহবিলে তাদের অভিগম্যতা নিশ্চিত করতে হবে।

সব বায়ারকে তাদের ওয়েবসাইটে নিজ নিজ বাংলাদেশি ব্যবসায়িক অংশীদার কারখানার নাম প্রকাশ করতে হবে। কারখানা বন্ধ করা, শ্রমিক চাকরিচ্যুতিতে ক্ষতিপূরণ না দেওয়া, পণ্যের যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ না করাসহ অন্যান্য অনৈতিক আচরণ বন্ধ করতে হবে।

কেন্দ্রীয় কল্যাণ তহবিল হতে গ্রুপ বীমার প্রিমিয়াম দেওয়ার বিধান রহিত করতে হবে।

রেমিডিয়েশন কো-অর্ডিনেশন সেল কার্যকর করার লক্ষ্যে সরকার, বায়ার ও আইএলও সমন্বিত উদ্যোগে আরসিসির আর্থিক ও কারিগরি সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে, আরসিসির কার্যক্রম পরিবীক্ষণে নিরপেক্ষ বিশেষজ্ঞ অন্তর্ভুক্ত করতে হবে, আরসিসির কার্যক্রম টেকসইকরণে বায়ারদের আইনগত বাধ্যবাধকতার মধ্যে আনতে হবে।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৬ এপ্রিল ২০১৮/এম এ রহমান/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়