ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় দিবস আজ

শাহ মতিন টিপু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৪:২৬, ৩০ এপ্রিল ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় দিবস আজ

শাহ মতিন টিপু : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও ২১তম বিশ্ববিদ্যালয় দিবস আজ। এটি দক্ষিণ এশিয়ার সবচাইতে বড় হাসপাতাল ও চিকিৎসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় দেশে চিকিৎসাশাস্ত্রে উচ্চতর গবেষণার একমাত্র প্রতিষ্ঠান। ১৯৯৮ সালে বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার পর থেকে এ দেশে চিকিৎসা বিজ্ঞানে উচ্চতর গবেষণা এবং চিকিৎসা সেবায় এটি অনন্য ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে।

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।

প্রদত্ত বাণীতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেন, ‘গবেষণা, নতুন রোগের কারণ ও চিকিৎসার বিভিন্ন ক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তির প্রয়োগ ঘটায় চিকিৎসা বিজ্ঞানে প্রতিনিয়ত পরিবর্তন আসছে। এজন্য দেশের চিকিৎসকদের চিকিৎসাক্ষেত্রে সর্বশেষ জ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পর্কে অবহিত থাকতে হবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় দেশের চিকিৎসা বিজ্ঞানের একমাত্র উচ্চতর প্রতিষ্ঠান হিসেবে এই প্রতিষ্ঠানের কাছে জনগণের প্রত্যাশা অনেক।’

প্রদত্ত বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে আমরা ১৯৯৮ সালে দেশের প্রথম মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়’ প্রতিষ্ঠা করি। এ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে দেশে মেডিক্যাল উচ্চশিক্ষার বিকাশ, স্বাস্থ্যখাতে গবেষণার প্রসার এবং বিশ্বমানের চিকিৎসাসেবা প্রদানে কাজ করে যাচ্ছে।’

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করে তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় আজ দেশের চিকিৎসা জগতে সেন্টার অব এক্সিলেন্সে পরিণত হয়েছে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ১০০০ শয্যায় উন্নতি করার লক্ষ্যে প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও রাজশাহী ও চট্টগ্রামে দু’টি মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় চালু করার লক্ষ্যে উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সিলেটে আরো একটি মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’

দিবসটি উপলক্ষে জাতীয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব পতাকা উত্তোলন, বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপিত জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ, বেলুন ও পায়রা উড়ানো, বর্ণাঢ্য র‌্যালি এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।

এছাড়া সকাল সাড়ে ৯ টায় শহীদ ডা. মিলন হলে এক সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থাকবেন। দিবসটি উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য কনক কান্তি বড়ুয়া সবাইকে শুভেচ্ছা ও আন্তরিক অভিনন্দন জানিয়েছেন।

ঢাকার শাহবাগে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের প্রথম চিকিৎসা বিশ্ববিদ্যালয়। আগে এর নাম ছিলো ইনস্টিটিউট অফ পোস্ট গ্রাজুয়েট মেডিসিন এন্ড রিসার্চ ("Institute of Post Graduate Medical Research", সংক্ষেপে 'IPGMR')। স্থানীয়ভাবে এটি পিজি হাসপাতাল নামেই বহুল ব্যবহৃত পরিচিত। ১৯৯৮ সালে জাতীয় সংসদে আইন প্রণয়নপূর্বক পিজি হাসপাতালকে বাংলাদেশের প্রথম চিকিৎসা বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরকালে এর প্রতিষ্ঠাতা উপাচার্য ছিলেন অধ্যাপক এম এ কাদরী।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর দেশের চিকিৎসা সেবায় খুলে যায় নতুন দিগন্ত। মেডিকেল শিক্ষায় বিএসএমএমইউ এখন সম্পূর্ণ আন্তর্জাতিক মানের। যার স্বীকৃতি হিসেবে ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে স্কপাস ও স্পেনের সিমাগো রিসার্চ গ্রুপ পরিচালিত জরিপে বিশ্ব সেরার তালিকায় ৬৪০তম স্থান অর্জন করেছে এই বিশ্ববিদ্যালয়। ওই জরিপে দেশের ১১টি নেতৃস্থানীয় বিজ্ঞান গবেষণা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বিএসএমএমইউ অবস্থান ৫ম।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, এ বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে ৪৬০ জন ফ্যাকাল্টি মেম্বার, ৫২টি বিভাগ, ৯৫টি পোস্ট গ্রাজুয়েট কোর্স, ৪২টি অধিভুক্ত মেডিক্যাল কলেজ ও ইনস্টিটিউট। এ বিশ্ববিদ্যালয় হতে ২২টি মেডিক্যাল কলেজে ৬২টি রেসিডেন্সি কোর্স পরিচালনা করা হচ্ছে।

গত বছরে চালু করা হয়েছে ২৪ ঘণ্টা ল্যাবরেটরি সার্ভিস। বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবরেটরি মেডিসিন বিভাগে রক্ত, ইউরিন, স্টুল, বডি ফ্লুয়েড, টিউমার মার্কার্সসহ প্রায় ১০০ ধরণের পরীক্ষা সুবিধা চালু রয়েছে। এরমধ্যে স্টুল ফিক্যাল ফ্যাট, ইউরিন এমিনোএসিডইউরিয়া, ফেজ কনস্ট্রাস্ট, বডি ফ্লুয়েড পোলারাইজিং, টিউমার মার্কাস বি টু মাইক্রোগ্লুবুলিন, সি এ ৭২.৪ স্টমার্ক, সাইফ্রা-২১-১ লাং, পরীক্ষাগুলো দেশের মধ্যে শুধুমাত্র বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবরেটরি মেডিসিন বিভাগেই হয়ে থাকে।

এখানে প্রতিদিন বহির্বিভাগে চিকিৎসা নেয় ৮০০০ রোগী। হাসপাতালে মোট শয্যা সংখ্যা ১৯০৪টি, যার অর্ধেক বরাদ্দ সম্পূর্ণ বিনামূল্যে গরীব রোগীদের জন্য। চালু হয়েছে ১৮ শয্যার রিহ্যাবিলিটেশন মেডিসিন ওয়ার্ড। বর্হিবিভাগে চালু রয়েছে সমন্বিত থ্যালাসেমিয়া সেন্টার। সফলভাবে চলছে বর্হিবিভাগে বৈকালিক বিশেষ চিকিৎসা সেবা। মাত্র ২০০ টাকার বিনিময়ে জনগণ পাচ্ছেন অধ্যাপক বা সহযোগী অধ্যাপকের কাছ থেকে চিকিৎসা পরামর্শ। প্রতিদিন প্রায় হাজার রোগী এই সেবা পাচ্ছেন। রোগীর সর্ব্বোচ্চ সেবা নিশ্চিত করতে রয়েছে সান্ধ্যকালীন রাউন্ডের ব্যবস্থা।

এর অভ্যন্তরে কোথায় কি পাবেন সহজেই তা জানাতে বিএসএমএমইউতে আছে তথ্য ও অভ্যর্থনা কেন্দ্র। আছে আলাদা সেবা কেন্দ্রও। দেশের যেকোন মানসম্মত হাসপাতালের চেয়ে কম খরচে করা হচ্ছে বিভিন্ন রোগের পরীক্ষা-নিরীক্ষা। সব ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুযোগ আছে এখানে। ল্যাবরেটরি সার্ভিস খোলা থাকে ২৪ ঘন্টা। সর্বাধুনিক প্রযুক্তি দিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে এখানকার রেডিওলজি বিভাগ।

হৃদরোগীদের জন্য আধুনিক সিসিইউ-১ ও সিসিইউ-২ চালুর পর থেকে দেশের যেকোনও হৃদরোগ চিকিৎসার হাসপাতাল থেকে বিএসএমএমইউ’র উপর মানুষের আস্থা বেড়েছে বহুগুণ।

প্রথমবারের মতো বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের সুচিকিৎসার জন্য মুক্তিযোদ্ধা সেল গঠন হয়েছে এখানে। এছাড়া, প্রবীণদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার জন্য খোলা হয়েছে জেরিয়াট্রিক মেডিসিন উইং। প্রথমবারের মতো ডে কেয়ার ওটি চালু হয়েছে এখানে। এইডস রোগীদের জন্য বিএসএমএমইউতে খোলা হয়েছে আলাদা ইউনিট।




রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩০ এপ্রিল ২০১৮/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়