ঢাকা     মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৩ ১৪৩১

কাশ্মিরের দিনরাত্রী ২

জম্মু থেকে ভূস্বর্গের উদ্দেশ্যে

ছাইফুল ইসলাম মাছুম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:১৫, ১৭ মে ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
জম্মু থেকে ভূস্বর্গের উদ্দেশ্যে

ছাইফুল ইসলাম মাছুম : জম্মুতে আমাদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছিল কালিকাধামে। কালিকাধাম বেশ উন্নত মানের আবাসিক হোটেল। হোটেলের নিচ তলাতে করা হয়েছে আমাদের জন্য খাবারের আয়োজন। বিশেষ রুটি ও দানাদার খাবার এ অঞ্চলের মূল খাবার।  এখানে পলিথিনের ব্যবহার নেই, প্লাস্টিকের ব্যবহার খুবই কম, কাগজের তৈরি বিশেষ উপকরণে আমাদের খাবার পরিবেশন করা হয়েছিল।

ভিনদেশী অচেনা খাবারে কোন রকম সকালের নাস্তা সেরে জন্মু বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়িতে যাত্রা শুরু করলাম বিশ্ববিদ্যালটির ক্যাম্পাসের উদ্দেশ্যে। কালিকাধাম থেকে জন্মু বিশ্ববিদ্যালয়ের দূরত্ব আনুমানিক তিন কিলোমিটার। গাড়িতে বসেই দেখছিলাম পাহাড়ি শহর জম্মুকে। চার রাস্তার মোড়ে ট্রাফিক সিগনালে লাল বাতি জ্বলে ওঠায়, আমাদের গাড়িটি থেমে যায়, অথচ সামনে কোন গাড়ি কিংবা ট্রাফিক পুলিশ দেখলাম না। আমরা নির্ধারিত সময়ের আগেই জম্মু বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করলাম। ঘুরে ঘুরে দেখলাম প্রকৃতিবান্ধব দারুণ সাজানো গোছানো ক্যাম্পাস। প্রতিটি ডিপার্টমেন্টের আলাদা আলাদা ভবন। ভবনগুলোর নির্মাণ শৈলী অনেক চমৎকার। শিক্ষার্থীরাও নির্দিষ্ট ড্রেসে বেশ পরিপাটি।

 



জম্মু বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত তৃতীয় আন্তর্জাতিক বিজনেস আইডিয়া প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে রেজিস্ট্রেশন সেরে আমরা প্রবেশ করি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের ব্রিগেডিয়ার রাজেন্দ্র সিং অডিটোরিয়ামে। অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী পর্ব শেষ হলে ভারত উপমহাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাদের বিজনেস আইডিয়া উপস্থাপন করে। আমাদের বিজনেস আইডিয়া প্রথম দিন উপস্থাপনের কথা থাকলেও ইন্টারনেট সমস্যার কারণে আমারা অনুষ্ঠাদের দ্বিতীয় দিন অর্থাৎ ১৫ মার্চ আইডিয়া উপস্থাপন করি। আমাদের বিজনেস আইডিয়াটি ছিল ‘স্মার্ট ওমেন, স্মার্ট কিচেন’ শিরোনামে। দ্বিতীয় দিন প্রোগ্রাম শেষে আমরা বেরিয়ে পড়ি মন্দিরের শহর জম্মু ঘুরে দেখতে। উপভোগ করি বিখ্যাত রঘুনাথ মন্দির, বাহুফোর্ড মন্দির, বাহুফোর্টে অ্যাকোয়ারিয়ামসহ জম্মুর চমৎকার চিরচেনা রূপ।

জম্মু শহরটি ভারতের জম্মু-কাশ্মির রাজ্যের (নভেম্বর থেকে এপ্রিল) শীতকালীন রাজধানী। শহরটিতে অনেক বিখ্যাত মন্দির থাকায় জম্মু ‘মন্দিরের শহর’ নামেও বেশ পরিচিত। আমাদের টিম প্রথমে বাহুফোর্ড মন্দিরের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। বাহুফোর্ট মন্দির জম্মু শহর থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে। মন্দিরটি শহরের প্রাচীনতম দুর্গ এবং মন্দির। মূলত তিন হাজার বছর আগে রাজা বাহুলো খানের দ্বারা নির্মিত। প্রতি মঙ্গলবার এবং রবিবার তীর্থযাত্রীরা উপাসনার জন্য এই মন্দিরে সমাবেত হন। বেহালাওয়ালী মাটা জম্মুর প্রতিষ্ঠিত দেবতা। বাহুফোর্ড মন্দিরটি কারো কারো কাছে ‘কালিমাতা মন্দির’ নামে পরিচিত। লোকাল বাসে পরিচয় হয় শকুন্তলা রানীর সাথে, তিনিও বাহুফোর্ড মন্দিরে যাবেন। তিনি মানত নিয়ে রোজ আসেন মন্দিরে। শকুন্তলা রানী যখন জানলেন আমরাও বাহুফোর্ড মন্দিরে যাচ্ছি, তখন তিনি বেশ আন্তরিকতা দেখালেন, পথ দেখিয়ে নিয়ে গেলেন মন্দিরের পথে। মন্দিরে প্রবেশ করতে সিঁড়ি ধরে ঝুলানো শত ছোট বড় ঘণ্টা। আমরা টুং টাং ঘণ্টা বাজাতে বাজাতে এগিয়ে চললাম। শকুন্তলা রানী আমাদের দেখালেন কিভাবে পুজো দিতে হয়, কিভাবে লাল কাপড় বেঁধে মানত করতে হয়, দেখালেন নিয়ম। বাহুফোর্ড মন্দিরের পাশ ঘেঁষা আরেকটি দর্শনীয় স্থান বাহুফোর্ড অ্যাকোয়ারিয়াম ফিশ মিউজিয়াম।

 



অ্যাকোয়ারিয়ামটি বড় মাছের সাদৃশ্য সুড়ঙ্গের আকার প্রায় ৬০০ ফুট লম্বা। এটিতে রয়েছে ২৪টি জলগুহা। কাচেঁর পাত্রের মধ্যে সামুদ্রিক প্রায় ১২০ ধরনের মাছ সংরক্ষণ করা হয়েছে। আমরা ভিন দেশের আশ্চর্যজনক মাছের জীববৈচিত্র্য দেখে মুগ্ধ হই। ছবি তুলি। ওখানে পরিচয় হয় কাশ্মিরের দুই যমজ ভাইয়ের সাথে। মাশনা ও মারশাদ। দুই ভাই স্থানীয় আকাশ ইনস্টিটিউটে পড়ছে। তারা যখন জেনেছে আমরা বাংলাদেশ থেকে এসেছি, তারা বেশ উচ্ছ্বাস দেখালো। ক্রিকেট খেলার কারণে তারা বাংলাদেশকে জানে।

ফিশ মিউজিয়াম দেখে আমাদের পরের গন্তব্য জম্মুর বিখ্যাত রঘুনাথ মন্দির। জম্মু শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত, মন্দিরটি উত্তর ভারতে সবচেয়ে মহিমান্বিত মন্দির কমপ্লেক্স। জম্মুর প্রধান বাণিজ্যিক বাজার নামকরণ করা হয় মন্দির কমপ্লেক্স-এর নামে। সেনাবাহিনীর কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনীতে মন্দিরটিতে রয়েছে সহস্র দেব-দেবীর মূর্তি। পুরো মন্দির আমরা ঘুরে ঘুরে দেখি, প্রসাদ সংগ্রহ করি। ছবি তোলা নিষেধ বলে মন্দিরের ভেতরে কোন ছবি তোলা হয়নি। মন্দিরের পাশে গড়ে ওঠা মার্কেটে শীতের পোশাক, কাশ্মিরি শাল, স্থানীয় ফসল আখরোট রয়েছে। আমরা ফুটপাত থেকে খেয়ে নিই দারুণ স্বাদের পাঞ্জাবী লাচ্ছি। খাই জন্মুতে উৎপাদিত কমলার রস।

 



জম্মুতে আমাদের তৃতীয় দিনের অধিকাংশ সময় কেটেছে জম্মু বিশ্ববিদ্যালয়ে। দিনটি ছিল বেশ মজার, ক্যাম্পাসে ছিল জম্মুর স্থানীয় সাংস্কৃতির দারুণ সব আয়োজন। ছিল রকমারি স্বাদের রাজ্যের রাজকীয় সব খাবার। ঐ দিন আমরা ভূস্বর্গ কাশ্মিরের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করি।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৭ মে ২০১৮/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়