ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

বাংলাদেশি অভিযাত্রীদের ২৩ হাজার ফুট উঁচু পর্বত জয়

আরিফ সাওন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:১৯, ২৩ জুন ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বাংলাদেশি অভিযাত্রীদের ২৩ হাজার ফুট উঁচু পর্বত জয়

নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশি অভিযাত্রী দল হিমালয়ে ২৩ হাজার ১১৩ ফুট উঁচু ‘লাকপা রি’ পর্বতশিখর বিজয় করেছে। শনিবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে সংবাদ সম্মেলন করে এ তথ্য জানানো হয়। এসময়ে পতাকা প্রত্যর্পণ করা হয়। পর্বতারোহীরা তাদের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, তিব্বতে এভারেস্ট-এর উত্তর-পূর্বে ২৩ হাজার ১১৩ ফুট উঁচু ‘লাকপা রি’ পর্বত অবস্থিত। বাংলাদেশের পর্বতারোহী দলটি ২৯ এপ্রিল নেপালের উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করে। ৪ মে নেপালের রসুয়াগাড়ি সীমান্ত পার হয়ে তিব্বতের ক্যারুং ও তিংরি অতিক্রম করে দলটি ৮ মে বেস ক্যাম্পে পৌঁছায়।

বেস ক্যাম্পে চার রাত এবং মিডল ক্যাম্পে এক রাত থেকে দলটি ১৩ মে প্রায় ২১ হাজার ফুট উচ্চতায় অ্যাডভান্স বেস ক্যাম্পে যায়। ১৭ মে রাত আড়াইটায় অ্যাডভান্স বেস ক্যাম্প থেকে তিন শেরপা গাইডকে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশের তিন পর্বতারোহী চূড়ান্ত আরোহণ শুরু করেন।

প্রায় ২ হাজার ফুট খাড়া হিমবাহ ও পাথরের দেয়ালে আইস অ্যাক্স, ক্রাম্পন ও জুমারের সাহায্যে কষ্টসাধ্য আরোহণ শেষে ১৭ মে চীনের সময় বিকাল ৫টায় বাংলাদেশের তিন পর্বতারোহী এম এ মুহিত, বাহলুল মজনু ও শায়লা পারভীন ‘লাকপা রি’ শীর্ষে আরোহণ করেন।

ইতিপূর্বে এম এ মুহিত দুই বার এভারেস্ট আরোহণ করেছেন এবং বাহলুল মজনু পাঁচটি ও শায়লা পারভীন একটি ৬ হাজার মিটার পর্বত আরোহণ করেছেন। ৭ হাজার মিটার উচ্চতার ‘লাকপা রি’ পর্বতশিখরে এই অভিযান পরিচালনা করেছে বাংলা মাউন্টেইনিয়ারিং অ্যান্ড ট্রেকিং ক্লাব এবং যৌথভাবে স্পন্সর করেছে প্যারাগন এগ্রো লিমিটেড, আরলা ফুডস্ বাংলাদেশ লিমিটেড, এমকে এন্টারপ্রাইজেস লিমিটেড ও আজিম গ্রুপ।

সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক ও বাংলাদেশ সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অভিযানের স্পন্সর প্যারাগন এগ্রো লিমিটেডের চিফ অপারেটিং অফিসার মোল্লা মামুন মনোয়ার; আরলা ফুডস্ বাংলাদেশ লিমিটেডের ডিজিএম আহমেদ কবির এবং আজিম গ্রুপের জিএম মো. মসিউর রহমান।

অ্যান্টার্কটিকা ও সুমেরু অভিযাত্রী ইনাম আল হক সাংবাদিক সম্মেলন পরিচালনা করেন। অভিযানের দলনেতা এম এ মুহিত ‘লাকপা রি’ শিখরে উন্নীত জাতীয় পতাকাটি প্রত্যর্পণ করেন এবং অভিযানের স্লাইড দেখান। দলের অপর দুই অভিযাত্রী শায়লা পারভীন ও বাহলুল মজনু অভিযানের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন।

রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, আমাদের যে তরুণরা বিপথে যাচ্ছে, খারাপ কাজ করছে, মাদকের দিকে ঝুঁকছে তাদেরকে যদি খেলাধুলা বা এই যে পর্বত আরোহনের মত এ রকম কর্মকাণ্ডে যুক্ত করা যায় তাহলে তারা মাদকসেবন বা খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকবে।

তিনি বলেন, শুধু ক্রিকেটকে ঘিরে রাষ্ট্রের অনেক পৃষ্ঠপোষকতা। কিন্তু পর্বত আরোহনের মত কর্মকাণ্ডে রাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতা নেই। এদের কিছুই দেওয়া হয় না। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো এসব কর্মকাণ্ডের সহযোগিতায় এগিয়ে আসে। আমাদের দেশে পর্বত আরোহনের যত অর্জন সব ব্যক্তি উদ্যোগে বা বেসরকারি সহযোগিতায়। রাষ্ট্রের কোন পৃষ্ঠপোষকতা নেই।

তিনি মনে করেন, এসব কর্মকাণ্ডে রাষ্ট্রের সহযোগিতা করা উচিত যাতে অনেক বেশি তরুণ এই কর্মকাণ্ডে আরো বেশি সম্পৃক্ত হতে পারে। তারা সম্পৃক্ত হলে মাদকাসক্ত বা অন্যান্য খারাপ কাজে থেকে দূরে থাকবে এবং শারীরিক ভাবে যোগ্য হয়ে উঠবে।

অভিজ্ঞতার বর্ণনা করতে গিয়ে শায়লা পারভীন বলেন, ক্রেনাসে (ফাটল) পড়ে গিয়েছিলাম। ফাটলটা অনেক বড় ছিলো। খুব ভয় পেয়েছিলাম। এতো ভয় পেয়েছিলাম, যা বলার মত নয়। এটা সারাজীবন মনে থাকবে। অনেক বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারতো, অনেক বড় বিপদ হতে পারতো। এটা একটা মারাত্মক ব্যাপার ছিলো। ফাটলের ভিতর থেকে উদ্ধার পাবো কিনা তা নিয়ে সংশয় ছিলো। কিন্তু ওপরওয়ালার কৃপায় আর দলের অন্যরা অনেক চেষ্টার পর আমায় উদ্ধার করে। অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার পাই। ঝুঁকি ছিলো, ভয় ছিলো। তবে এই অভিজ্ঞতা ভবিষ্যতে আরো কাজে লাগবে। আগে নেপালে অনেকবার গেছি। কিন্তু তিব্বতে এই প্রথম। 

দলনেতা মুহিত বলেন, আমরা যেখানে গেছিলাম, সেখানে আরো দুইটা ইউরোপিয়ান টিমের যাওয়ার কথা ছিলো কিন্তু তারা যেতে পারে নি। তারা ব্যর্থ হয়। কিন্তু আমরা সফল হয়েছি। যাদের নিয়ে গেছিলাম তারা ফিট আছে। আগামী বছর তাদের এভারেস্টে পাঠানো যাবে। এব্যাপারে সকলের দোয়া ও সহযোগিতা প্রয়োজন।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৩ জুন ২০১৮/সাওন/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়