ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

সপ্তদশ সংশোধনী বিল পাস

সংরক্ষিত নারী আসন আরও ২৫ বছর

আসাদ আল মাহমুদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:০৪, ৮ জুলাই ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সংরক্ষিত নারী আসন আরও ২৫ বছর

সংসদ প্রতিবেদক : জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনে সদস্য নির্বাচনের বিধান আরও ২৫ বছর বহাল রাখার প্রস্তাব সম্বলিত সংবিধানের সপ্তদশ সংশোধনী বিল সংসদে সর্বসম্মতিক্রমে পাস হয়েছে।

রোববার বিকেলে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে জাতীয় সংসদ অধিবেশনে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক ‘সংবিধান (সপ্তদশ সংশোধন) বিল-২০১৮’  পাসের প্রস্তাব করেন।

সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ এবং জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ এসময় উপস্থিত ছিলেন।

সাধারণতঃ সংবিধান সংশোধনী বিল পাস করতে হলে সংসদের দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠ সংসদ সদস্যদের সমর্থনের প্রয়োজন হয়। বর্তমান সংসদে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে। প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টিও এই বিলে সমর্থন দিয়েছে। এ কারণে বিলটি সর্বসম্মতিক্রমে পাস হয়।

বিলে সংবিধানের ৬৫ অনুচ্ছেদের বিদ্যমান দফা ৩ এর পরিবর্তে ‘সংবিধান (সপ্তদশ সংশোধন) আইন, ২০১৮ প্রবর্তনকালে বিদ্যমান সংসদের প্রথম বৈঠকের তারিখ থেকে শুরু করে পঁচিশ বছরকাল অতিবাহিত হবার অব্যবহিত পরবর্তীকালে সংসদ ভেঙ্গে না যাওয়া পর্যন্ত ৫০টি আসন কেবল নারী সদস্যদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে এবং তারা আইনানুযায়ী পূর্বোক্ত সদস্যদের মাধ্যমে সংসদে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির ভিত্তিতে একক হস্তান্তরযোগ্য ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হবেন’ শীর্ষক নতুন দফা ৩ প্রতিস্থাপন করা হয়।

বিলে বলা হয়, তবে শর্ত থাকে যে, এ দফার কোন কিছুই এ অনুচ্ছেদের দফা ২ এর অধীন কোন আসনে কোন নারীর নির্বাচন নিবৃত্ত করবে না।

জাতীয় পার্টির সেলিম উদ্দিন, রুস্তম আলী ফরাজী, ফখরুল ইমাম, বেগম রওশন আরা মান্নান, নূর-ই- হাসনা লিলি চৌধুরী, নূরুল ইসলাম মিলন, কাজী ফিরোজ রশীদ ও আব্দুল মুনিম চৌধুরী বিলের ওপর জনমত যাচাই, বাছাই কমিটিতে প্রেরণ ও সংশোধনী প্রস্তাব আনলে তা কন্ঠ ভোটে নাকচ হয়ে যায়।

এর পর সংবিধান অনুযায়ী বিভক্তি ভোটের মাধ্যমে সংবিধান (সপ্তদশ সংশোধন) বিল, ২০১৮ বিবেচনার প্রস্তাব পাস করা হয়। প্রস্তাবের পক্ষে ২৯৫ ভোট এবং বিপক্ষে একটি ভোটও পড়েনি।

পরে বিধি অনুযায়ী আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বিল পাসের প্রস্তাব করলে তা প্রথমে কন্ঠ ভোটে গ্রহণ করে বিধান অনুযায়ী বিভক্তি ভোটে পাস করা হয়।

বিল পাসের প্রস্তাবের অর্থাৎ হ্যাঁ’র পক্ষে ২৯৮ ভোট পড়েছে। বিপক্ষে অর্থাৎ না’র পক্ষে কোন ভোট পড়েনি। ফলে সর্বসম্মতিক্রমে সংবিধান (সপ্তদশ সংশোধন) বিল, ২০১৮ পাস হয়।

সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৬৫ এর দফা (৩) এর বিদ্যমান বিধান অনুযায়ী বর্তমানে সংরক্ষিত ৫০টি মহিলা আসনের ১০ বছর মেয়াদ ২০১৯ সালের ২৮ জানুয়ারি শেষ হবে। এ মেয়াদ বৃদ্ধি না করলে ওই সময় অতিবাহিত হওয়ার পর সংসদে নারীদের জন্য কোন আসন সংরক্ষিত থাকবে না। ফলে একাদশ জাতীয় সংসদে তা অব্যাহত রাখতে সংবিধানের সংশ্লিষ্ট বিধান সংশোধন করে এ বিল পাসের মাধ্যমে মেয়াদ আরো ২৫ বছর বাড়ানো হলো।

এই বিল পাসের আগে বিলটির ওপর জনমত যাচাই-বাছাই ও সংশোধনী প্রস্তাব এনে বিরোধী জাতীয় পার্টি ও স্বতন্ত্র ৯ জন সংসদ সদস্য বলেন, নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের মধ্যে রোলমডেল। পৃথিবীর মধ্যে একটি দেশ হচ্ছে বাংলাদেশ যার প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলের নেতা, উপনেতা ও স্পিকার হচ্ছেন নির্বাচিত নারী। নারীর এই ক্ষমতায়নের যুগে সংরক্ষিত আসন বৃদ্ধি করতে আনা এই বিলটি উল্টো পেছনে ঠেলে দিবে।

তবে জাতীয় পার্টির বেগম রওশন আরা মান্নান সংরক্ষিত নারী আসনের পক্ষে অবস্থান নিয়ে নারীর ক্ষমতায়নে ৫০ নয়, সংরক্ষিত আসন সংখ্যা বাড়িয়ে ৭৫ করার দাবি জানান।

জবাবে আইনমন্ত্রী কাজী নজরুল ইসলামের ’নারী’ কবিতার কিছু পংক্তি তুলে বলেন, ১৯৭২ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু সংবিধানে সংসদে ১৫টি আসন সংরক্ষিত রাখায় নারীর ক্ষমতায়নের সিঁড়ি তৈরি হয়। আজ তাঁরই কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ নারীর ক্ষমতায়নে সারাবিশ্বের কাছে রোলমডেল। তার জ্বলন্ত উদাহরণ এই জাতীয় সংসদ। যেখানে প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে বিরোধী দলের নেত্রী, স্পিকার ও সংসদ উপনেতাও নারী। তাই এই আইনটি গত ৪০ বছর ধরে নারীর ক্ষমতায়নকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছে। আর জনগণের সমর্থন রয়েছে, জনপ্রতিধিদের সমর্থন রয়েছে।

তিনি বলেন, এই বিলটি পাস হলে সংবিধানের কোন ধারায় লংঘন হবে না। সংরক্ষিত আসন সংরক্ষণ করা হলেও যে কোন নারী সরাসরি ভোটে অংশগ্রহণ করতে পারবেন। সরাসরি নির্বাচনে অংশগ্রহণে এই সংবিধান সংশোধনটি কোন বাঁধাই সৃষ্টি করবে না। এই সংসদে ৭৩ জন নারী সংসদ সদস্য রয়েছেন, এর মধ্যে ২২ জনই সরাসরি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে নির্বাচিত হয়ে এসেছেন। মেয়াদ বৃদ্ধি অনেকবারই করা হয়েছে। তাই সংশোধনী প্রস্তাবগুলো গ্রহণযোগ্য নয়।

এরপরই কার্যপ্রণালী বিধির ৯৯ (গ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী দু’দফা বিভক্তি ভোটে যান স্পিকার। দু’মিনিটের ঘন্টা বাজানোর পর স্পিকার ভোট প্রদানের ঘোষণা করলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধী দলের নেতা বেগম রওশদ এরশাদসহ সব সংসদ সদস্যরা হ্যাঁ লেখা লবিতে ভোট প্রবেশ করে তাদের ভোট দেন। না ভোট লেখা লবিতে একজন সংসদ সদস্যও প্রবেশ করেননি। দু’দফা ভোট গ্রহণ শেষে স্পীকার ভোটের ফলাফল ঘোষণা করে বিলটি সর্বসম্মতিক্রমে পাসের ঘোষণা দেন।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/০৮ জুলাই ২০১৮/আসাদ/এনএ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়