ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

জরুরি স্বাস্থ্যসেবা নীতিমালা গেজেট আকারে প্রকাশের নির্দেশ

মেহেদী হাসান ডালিম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:২০, ৮ আগস্ট ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
জরুরি স্বাস্থ্যসেবা নীতিমালা গেজেট আকারে প্রকাশের নির্দেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক : সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তির জরুরি স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণ ও সহায়তাকারীকে সুরক্ষা প্রদান নীতিমালা ২০১৮ গেজেট আকারে প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। রায় প্রকাশিত হওয়ার দুই মাসের মধ্যে স্বাস্থ্য সচিবকে এ রায় বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে। এ সংক্রান্ত নতুন আইন না হওয়া পর‌্যন্ত এ নীতিমালাই আইন হিসেবে বিবেচিত হবে।

এ বিষয়ে জারি করা রুল যথাযথ ঘোষণা করে বুধবার বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ ও বিচারপতি ফরিদ আহমেদের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।

আদালতে রিটের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার রাশনা ইমাম, ব্যারিস্টার আনিতা গাজী রহমান ও অ্যাডভোকেট শারমিন আক্তার। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কাজী জিনাত হক।

রায়ের পর ব্যারিস্টার রাশনা ইমাম রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘সড়ক দুর্ঘটনায় আহতদের জরুরি স্বাস্থ্যসেবা সংক্রান্ত জারি করা রুল যথাযথ ঘোষণা করে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে ২০১৮ সালে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের করা এ সংক্রান্ত নীতিমালার দুটি অংশে আদালতের পর্যবেক্ষণ যুক্ত করে এই নীতিমালা গেজেট আকারে প্রকাশ করার নির্দেশ দিয়েছেন।

এর আগে ২০১৬ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি গুরুতর আহত ব্যক্তিদের জরুরি চিকিৎসাসেবা দিতে দেশের সরকারি-বেসরকারি সব হাসপাতালকে নির্দেশ দিয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট।

একই সঙ্গে জরুরি চিকিৎসাসেবা প্রদান এবং চিকিৎসা না পেলে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি কোথায় অভিযোগ করবেন সে বিষয়ে নীতিমালা করতেও সরকারকে নির্দেশ দেন আদালত।

সে অনুযায়ী যানবাহন দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তির জরুরি চিকিৎসাসেবার স্বার্থে সরকার ‘জরুরি স্বাস্থ্যসেবা ও সহায়তাকারী সুরক্ষা প্রদান নীতিমালা-২০১৮’ প্রণয়ন করে।

নীতিমালায় ‘সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তির জরুরি সেবা প্রদান’ অংশে বলা হয়েছে, ‘সড়ক দুর্ঘটনায় আক্রান্ত ব্যক্তির জীবন রক্ষর্থে তাৎক্ষণিকভাবে (গোল্ডেন আওয়ার এর মধ্যে) তাকে নিকটতম হাসপাতালে প্রেরণ এবং জরুরি চিকিৎসাসেবা প্রদান করতে হবে। আইনি জটিলতার সম্ভাবনা বিবেচনায় চিকিৎসাসেবা প্রদানে বিলম্ব করা যাবে না এবং আহত ব্যক্তির আর্থিক সক্ষমতা বিষয় বিবেচনা না করে বেসরকারি হাসপাতালসমূহ (কর্পোরেট  স্যোশাল রেসপন্সিবিলিটি-সিএসআর) এর আওতায় চিকিৎসা সেবা প্রদান করবে।’

নীতিমালার ‘চিকিৎসা সেবা প্রদানে স্থানান্তর’ অংশে বলা হয়েছে, ‘সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের পূর্ণাঙ্গ (ইনটিগ্রেটেড) চিকিৎসা সেবা সুবিধা বা সক্ষমতা না থাকলে রোগীর শারীরিক অবস্থা এবং প্রাথমিক চিকিৎসা সংক্রান্ত তথ্যাবলী লিপিবদ্ধ করে (গোল্ডেন আওয়ারের মধ্যে) হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে জীবন রক্ষাকারী উন্নত চিকিৎসা প্রদানের লক্ষ্যে উপযুক্ত চিকিৎসা সুবিধা সম্বলিত হাসপাতালে নিজ দায়িত্বে স্থানান্তর করবে।’

‘উপযুক্ত সুবিধাসম্পন্ন হাসপাতাল কর্তৃক চিকিৎসা প্রদানের বাধ্যবাধকতা’ অংশে বলা হয়েছে, ‘আহত ব্যক্তির চিকিৎসা প্রদানে সক্ষমতা সম্পন্ন হাসপাতাল কোনো অবস্থাতেই রোগীর চিকিৎসা ব্যাতিরেকে ফেরৎ দিতে বা স্থানান্তর করতে পারবে না।’

নীতিমালায় ‘অবহেলা বা শৈথিল্য প্রদর্শন’ অংশে বলা হয়েছে, ‘জরুরি চিকিৎসাসেবা প্রদানের ক্ষেত্রে কোনো চিকিৎসক বা স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী ব্যক্তির অবহেলা বা শৈথিল্য অসদাচরণ হিসেবে বিবেচিত হবে;

জরুরি চিকিৎসা সেবা প্রদানে অবহেলা বা শৈথিল্য প্রদর্শন করলে নিবন্ধন বা লাইসেন্স বা অনুমতি প্রদানকারী কর্তৃপক্ষ উক্ত হাসপাতালের বিরুদ্ধে বিধিমত প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

‘জরুরি স্বাস্থ্যসেবা সেল গঠন’ অংশে বলা হয়েছে, ‘সরকার এ নীতিমালা বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণের লক্ষ্যে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের আওতাধীন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে একটি জরুরি স্বাস্থ্যসেবা সেল গঠন করবে;

এই সেল নীতিমালার কার্যকারিতা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে উপযুক্ত সুপারিশ প্রণয়ন ও মনিটরিং করবে এবং মনিটরিংয়ে চিকিৎসা সেবা প্রদানের কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের অবহেলা বা শৈথিল্য চিহ্নিত হলে প্রচলিত আইন অনুযায়ী তা বিচার্য হবে। ‘আহত ব্যক্তির তথ্য সংরক্ষণ ও সরবরাহকরণ’ অংশে বলা হয়েছে, ‘সকল হাসপাতাল সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তিকে চিকিৎসাসেবা প্রদান সংক্রান্ত তথ্য নির্ধারক ছক অনুযায়ী ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের আওতাধীন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে প্রেরণ করবে।

‘আহত ব্যক্তিকে সহায়তাকারীর সুরক্ষা’ অংশে বলা হয়েছে, একজন সহায়তাকারী কোনো কর্মের জন্য দায়ী হবেন না।

আহত বা বিপদগ্রস্ত ব্যক্তির সহায়তাকারীকে নাম, ঠিকানা বা টেলিফোন নম্বর প্রদানে বাধ্য করা যাবে না। তবে তিনি স্বেচ্ছায় তথ্য দিলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তা লিপিবদ্ধ করে সংরক্ষণ করবে এবং প্রয়োজনে তা ব্যবহার করতে পারবে। সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তিকে হাসপাতালে আনার পর স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার দায়িত্ব হাসপাতালের কর্তৃপক্ষের উপর বর্তাবে।

কোনো বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আহত ব্যক্তির আত্মীয় ব্যতীত অন্য কোনো সহায়তাকারীকে চিকিৎসা ব্যয় সংশ্লিষ্ট কোনোরূপ অর্থ পরিশোধে বাধ্য করতে পারবে না।

আহত ব্যক্তিকে সহায়তাকারীকে কোনোরূপ দায়বদ্ধতার সাথে সংশ্লিষ্ট করা হবে না মর্মে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চোখে পড়ে এমন জায়গায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করবে।

‘আহত ব্যক্তিকে জরুরি চিকিৎসা দেওয়ার ক্ষেত্রে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা বা অন্য কোনো ব্যক্তির করণীয়’ অংশে নীতিমালায় বলা হয়েছে, ‘সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তি সড়ক দুর্ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকলে চিকিৎসাসেবা প্রদানের পূর্বে তাকে কোনোরূপ হয়রানি করা যাবে না বা আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের লক্ষ্যে কোনো পুলিশ স্টেশনে পাঠানো কিংবা আনা যাবে না। একজন পুলিশ কর্মকর্তা কোনো প্রকার আইনি প্রক্রিয়া শুরু করার আগে আহত ব্যক্তির চিকিৎসার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।’

নীতিমালার ‘জনসচেতনতা ও প্রচার’ অংশে আহত ব্যক্তির জরুরি স্বাস্থ্যসেবার বিষয়ে প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় নিয়মিত প্রচার ও বিভিন্ন পর্যায়ে কর্মশালা আয়োজনের মাধ্যমে জনসচেতনতা বৃদ্ধি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আহত ব্যক্তির জরুরি স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ে মহড়া এবং আহত ব্যক্তির জরুরি চিকিৎসা শিক্ষা কারিক্যুলাম যুক্ত করতে বলা হয়েছে সরকারকে।

এছাড়া, এ নীতিমালা কার্যকর করার লক্ষ্যে সরকারকে অবকাঠামোগত ও প্রয়োজনীয় সেবা সুবিধা নির্দিষ্ট করে  ছয় মাসের মধ্যে ‘জাতীয় অ্যাম্বুলেন্স কোড’ প্রণয়ন করার জন্য বলা হয়েছে রায়ে।

২০১৬ সালে মানবাধিকার সংগঠন বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) ও সৈয়দ সাইফুদ্দিন কামাল নামের এক ব্যক্তি জনস্বার্থে এই রিট আবেদন করে।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৮ আগস্ট ২০১৮/মেহেদী/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়