ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

দেশের ইলেকট্রনিক্স শিল্পের পথিকৃৎ এস এম নজরুল ইসলাম

এনএ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০১:৫১, ১৭ ডিসেম্বর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
দেশের ইলেকট্রনিক্স শিল্পের পথিকৃৎ এস এম নজরুল ইসলাম

রাইজিংবিডি ডেস্ক : বাংলাদেশের ইলেকট্রনিক্স পণ্য উৎপাদন শিল্পের পথিকৃৎ ওয়ালটনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান এস এম নজরুল ইসলাম। সুদূরপ্রসারি চিন্তাশীল এই মানুষটি তার গ্রাম গোসাই জোয়াইরকে অনেক ভালোবাসতেন। তাই দেশের বৃহৎ ইলেকট্রনিক্স পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ওয়ালটনের প্রতিষ্ঠাতা হয়েও গ্রামেই জীবন যাপন করতেন। তার প্রতিষ্ঠিত ওয়ালটন এখন বিশ্বের কাছে শিল্পসমৃদ্ধ বাংলাদেশের ইতিবাচক ইমেজ তুলে ধরছে। বাংলাদেশও যে পারে বিশ্বের কাছে সেটিই প্রমাণ করছে মেড ইন বাংলাদেশ খ্যাত ওয়ালটন পণ্য।

কর্মজীবনে সফল ব্যক্তিত্ব আলহাজ এসএম  নজরুল ইসলাম ৭ মে, ১৯২৪ সালে টাঙ্গাইল সদর উপজেলার গোসাই জোয়াইর গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম এস এম আতাহার আলী তালুকদার এবং মাতার নাম মোসাম্মৎ শামছুন নাহার।

প্রথমে বাবা এস এম আতাহার আলী তালুকদারের সঙ্গে ব্যবসায় জড়িত হলেও স্বাধীনতার পর আলাদাভাবে ব্যবসা শুরু করেন তিনি। ব্যবসা শুরুর প্রাথমিক অবস্থায় তিনি নানাবিধ প্রতিকূলতার সম্মুখীন হন। কিন্তু তার সততা ও কর্মনিষ্ঠার মাধ্যমে সব প্রতিকূলতা সাহসের সঙ্গে মোকাবিলা করেন।

দেশের মানুষের কাছে সাশ্রয়ী মূল্যে ইলেকট্রনিক্স পণ্যসামগ্রী পৌঁছে দিতে ১৯৭৭ সালে প্রতিষ্ঠা করেন রেজভী অ্যান্ড ব্রাদার্স, সংক্ষেপে আরবি গ্রুপ। রেজভী তাঁর বড় ছেলে। পাঁচ ছেলে আর দুই মেয়ের পিতা তিনি। যে ব্যবসাতেই হাত দিয়েছেন, সফলতা পেয়েছেন সেখানেই। সৎ, নিষ্ঠাবান ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন সব মহলে ।

নজরুল ইসলাম তাঁর ছেলেদের নিয়ে বৈঠক করে ব্র্যান্ডের নাম ঠিক করলেন ওয়ালটন। পারিবারিক বৈঠকে আরেকটি নাম ঠিক হয় মার্সেল। তবে প্রথমে ওয়ালটন ব্র্যান্ডের নামেই যাত্রা শুরু। আরবি গ্রুপ নাম বদলে হয়ে গেল ওয়ালটন গ্রুপ। যাতে বিশাল ভূমিকা রাখেন তাঁর মেধাবী সন্তানরা। আগে যেখানে ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ কথাটাকে অবহেলার চোখে দেখা হতো, একসময়  সেটিই হয়ে ওঠে সম্মানের এক স্লোগান।

এক সময় দেশে ব্যাপক চাহিদা তৈরি হয় ওয়ালটন পণ্যের। এই ব্র্যান্ডের পণ্যের উচ্চমান গ্রাহকদের আশাবাদী করে তোলে। এরপর শুরু হয় একই গ্রুপের আরেক ব্র্যান্ড মার্সেলের পথ চলা। নজরুল ইসলামের দূরদর্শিতা ও সুযোগ্য পরিচালনায় ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ লেখা ওয়ালটন পণ্যের সুনাম ও খ্যাতি আজ দেশের সীমানা পেরিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে।

২০০৬ সালে গাজীপুরের চন্দ্রায় জায়গা কিনে ওয়ালটনের নিজস্ব কারখানা নির্মাণের কাজে হাত দেওয়ার পর প্রথমে কিছু বাধার সম্মুখীন হতে হয়। তবে সেসব বাধা পেরিয়ে নিজেদের অর্থেই কারখানা নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করা হয়। ২০০৮ সালে নিজস্ব কারখানায় উৎপাদিত হয় ওয়ালটন ফ্রিজ। সাশ্রয়ী মূল্যে উচ্চমানের পণ্য এবং সেবা দিয়ে জয় করে নেন গ্রাহকের আস্থা। পর্যায়ক্রমে শুরু হয় টেলিভিশন, মোটরসাইকেল এবং এয়ারকন্ডিশনার উৎপাদন প্ল্যান্ট। সবকিছুতেই ওয়ালটন পাইওনিয়ার।

তবে শুধু দেশেই বাজারজাত করে সীমাবদ্ধ থাকেনি ওয়ালটন। উদ্যোগ নেওয়া হয় বিদেশে রপ্তানির। প্রথমে মধ্যপ্রাচ্য দিয়ে শুরু হয় ওয়ালটন পণ্যের রপ্তানি। বর্তমানে প্রায় ২০টি দেশে যাচ্ছে ওয়ালটন পণ্য। মেড ইন বাংলাদেশ লেখাটি এখন বিশ্বের মানুষের কাছে সম্মান আদায় করে নিতে সক্ষম হচ্ছে। এরই মধ্যে বিভিন্ন রকমের হোম, কিচেন ও ইলেকট্রিক্যাল অ্যাপ্লায়েন্স উৎপাদন শুরু হয়েছে।

এরপর ‘সময় এখন বাংলাদেশের’ স্লোগান নিয়ে যাত্রা শুরু করে দেশের প্রথম মোবাইল ফোনের কারখানা। পরবর্তী সময়ে ল্যাপটপও উৎপাদন শুরু করে ওয়ালটন। এর মধ্য দিয়ে ওয়ালটন কারখানা কমপ্লেক্স হয়ে উঠেছে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ প্রযুক্তি পণ্যের উৎপাদন ও গবেষণাগার। প্রায় ৩০ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। তৈরি হচ্ছে দক্ষ জনশক্তি।

বর্তমানে বাংলাদেশে শিল্পায়নের মডেল হয়ে উঠেছে ওয়ালটন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা ওয়ালটন কারখানা পরিদর্শন করে মুগ্ধ হয়েছেন। অনেক বিশেষজ্ঞ ওয়ালটনের উদ্যোগকে অভিহিত করেছেন আসল শিল্প হিসেবে।

ব্যবসায়িক সাফল্য বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে আলহাজ এসএম  নজরুল ইসলাম বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক ও উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে নিজেকে নিয়োজিত করেন। তিনি টাঙ্গাইল জেলা সমবায় ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক, টাঙ্গাইল জেলা সার ডিলার সমিতির সভাপতি, টাঙ্গাইল কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাংকের পরিচালক এবং টাঙ্গাইল কেন্দ্রীয় জমি বন্ধকি ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ভাইস চেয়ারম্যান এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন।

তিনি তাঁর গ্রামে এসএম  নজরুল ইসলাম কারিগরি বিদ্যালয় নামে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেছেন। এছাড়া, মসজিদ, মাদ্রাসা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, এতিমখানাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত সাহায্য-সহযোগিতা দিতেন। অসুস্থ ও দরিদ্র মানুষের জন্য তাঁর হৃদয় কাঁদতো। তিনি গ্রামের দুস্থ, বৃদ্ধ ও মহিলাদের জন্য বয়স্কভাতা প্রকল্প চালু করেছেন।

মহৎপ্রাণ ব্যক্তি নজরুল ইসলাম গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর রাতে না-ফেরার দেশে চলে যান। রাজধানীর অ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৩ বছর। পরদিন ১৮ ডিসেম্বর তাঁর নিজ গ্রাম গোসাই জোয়াইরে পারিবারিক কবরস্থানে বাবা-মায়ের কবরের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত হন তিনি।

এস এম নজরুল ইসলামের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে তাঁর স্মরণে আজ সোমবার দুপুরে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ওয়ালটন গ্রুপের করপোরেট অফিস প্রাঙ্গণে (প্লট-১০৮৮, রোড- ৮০ফিট-২, ব্লক-আই, বসুন্ধরা আ/এ) আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।

এছাড়া ওয়ালটন গ্রুপের সিস্টার কনসার্ন সব অফিস, কারখানা ও দেশব্যাপী সব ওয়ালটন প্লাজায় আলোচনা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। পরিবারের পক্ষ থেকে মরহুমের বড় ছেলে এসএম নূরুল আলম রেজভী তাঁর পিতার আত্মার মাগফেরাত কামনায় দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন।





রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৭ ডিসেম্বর ২০১৮/এনএ/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়