ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

মার্শাল-সানীতে ঢাকার জয়রথ থামাল রাজশাহী

ইয়াসিন হাসান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৪১, ১৬ জানুয়ারি ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
মার্শাল-সানীতে ঢাকার জয়রথ থামাল রাজশাহী

ক্রীড়া প্রতিবেদক, সিলেট থেকে : এবারের বিপিএলে প্রথমবারের মতো পরাজয়ের তিক্ত স্বাদ পেল ঢাকা ডায়নামাইটস। রাজশাহী কিংস ২০ রানে হারিয়েছে চতুর্থ আসরের চ্যাম্পিয়নদের।

ঢাকায় চার ম্যাচের চারটি জিতে সিলেটে পা রেখেছিল ঢাকা। মিরপুরে চার ম্যাচে জিতেছিল আগে ব্যাটিং করে। বিশাল পুঁজি পেয়ে প্রতিপক্ষকে হারিয়েছিল রান ব্যবধানে। এবার রাজশাহী কিংস আগে ব্যাটিংয়ে নেমে ঢাকাকে পাঠাল লক্ষ্য তাড়া করতে। নিজেদের স্বস্তির জায়গা থেকে বেরিয়ে পরাজয় সঙ্গী করল সাকিব আল হাসানের দল।

মার্শাল আইয়ুবের দারুণ ব্যাটিং আর আরাফাত সানীর নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে রাজশাহী তৃতীয় জয়ের দেখা পেয়েছে। মার্শালের ৪৫ রানের ইনিংসে ভর করে ৬ উইকেটে ১৩৬ রান তুলেছিল রাজশাহী। জবাবে ঢাকার ইনিংস থেমে যায় ১১৬ রানে। ৪ ওভারে একটি মেডেনে মাত্র ৮ রানে ৩ উইকেট নিয়ে বোলিংয়ে উজ্জ্বল আরাফাত সানী। দুই ক্রিকেটারের ধ্রুপদী পারফরম্যান্সে রাজশাহী টুর্নামেন্টে নিজেদের অবস্থান জানান দিল ভালোভাবেই।

সিলেটে বুধবার টস জিতে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুটা বাজে হয় রাজশাহীর। অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ আন্দ্রে রাসেলের ফুলটস তুলে মারতে গিয়ে কাইরন পোলার্ডের হাতে ক্যাচ দেন ১ রানে। মুমিনুল হক ও সৌম্য সরকারকে বাদ দিয়ে শাহরিয়ার নাফীস ও মার্শালকে সুযোগ দেয় রাজশাহী। প্রথম সুযোগেই বাজিমাত দুজনের। সাইডবেঞ্চে বসে থাকার তিক্ততা ভুলে দুজনের ৫৩ বলে ৭৫ রানের জুটিতে বড় সংগ্রহের পথে এগোতে থাকে পদ্মাপাড়ের দলটি।



দারুণ সব শটে ২২ গজে ব্যাটিং দ্যুতি ছড়ান দুই ব্যাটসম্যান। বিশেষ করে মার্শালের ব্যাটিং ছিল নজরকাড়া। বোঝাই যাচ্ছিল না ২০১৩ সালের পর প্রথম বিপিএল খেলতে নেমেছেন ঢাকার এ ক্রিকেটার। রাসেলকে পুল করে উইকেটের পেছন দিয়ে চার মেরে শুরু মার্শালের। এরপর পঞ্চম ওভারের দ্বিতীয় ও তৃতীয় বলে দুই চারের পর শেষ বলে পুল করে ছক্কা হাঁকান ফাইন লেগ দিয়ে। তরুণ আসিফ হাসানকে ডাউন দ্য উইকেটে এসে উড়ান লং অফ দিয়ে। মাঝে এক-দুই রানে নিয়ে স্ট্রাইক রোটেট করেছেন ডানহাতি ব্যাটসম্যান।

নাফীস শুরুতে টাইমিংয়ে গড়বড় করলেও ইনিংসের মাঝপথে নিজেকে ফিরে পান। সাকিবকে সুইপ করে দুটি বাউন্ডারি হাঁকানোর পর আলিস ইসলামকে তুলে মারেন ইনসাইড আউট শটে। ১১ ওভারে রাজশাহীর রান ছিল ১ উইকেটে ৭৬। ১২তম ওভারে জোড়া ধাক্কা খায় রাজশাহী। দুই সেট ব্যাটসম্যান তিন বলের ব্যবধানে ফেরেন সাজঘরে।

সুনীল নারিনকে তুলে মারতে গিয়ে রুবেলের হাতে নাফীস ক্যাচ দেন ২৭ বলে ২৫ রান করে। এক বল পর নুরুল হাসান সোহানের হাতে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন রাজশাহীর নায়ক মার্শাল। ৩১ বলে ৩ চার ও ২ ছক্কায় তার ইনিংসটি থামে ৪৫ রানে।

তাদের ফেরার পর রাজশাহীর ইনিংস চেপে ধরেন ঢাকার স্পিনাররা। সাকিব, নারিনের দারুণ বোলিংয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে এগোতে থাকে রাজশাহীর স্কোরবোর্ড। রায়ান টেন ডেসকাট ১৬ ও জাকির হাসান করেন ২০ রান। ক্রিস্টিয়ান ইয়নকার ৯ ও ইসরু উদানা ৩ রানে অপরাজিত থাকেন। সব মিলিয়ে ৬ উইকেটে ১৩৬ রানের পুঁজি পায় রাজশাহী।



১৯ রানে ৩ উইকেট নেন নারিন। সাকিব ও আলিস ইসলাম ২৯ রানে পেয়েছেন ১টি করে উইকেট।

লক্ষ্য তাড়ায় ২৩ রান তুলতেই ৩ উইকেট হারায় ঢাকা। মিরাজের বলে নারিন ১ রানে এলবিডব্লিউ হওয়ার পর হজরতউল্লাহ জাজাইয়ের স্টাম্প উড়িয়ে দেন ইসরু উদানা। সানী নিজের প্রথম বলে তুলে নেন হার্ডহিটার রাসেলের উইকেট। ইনিংস মেরামতের দায়িত্ব পড়ে অধিনায়ক সাকিব ও রনি তালুকদারের ওপর। কিন্তু তাদের ব্যাট হাসেনি এদিন। সানীর বলে সাকিব ১৩ রানে ইয়নকারের হাতে ক্যাচ দেওয়ার পর রনি বোল্ড হন ১৪ রানে। ৫৩ রানে অর্ধেক ব্যাটসম্যান সাজঘরে ফেরার পর আর ম্যাচে ফেরেনি ঢাকা।

পোলার্ড যতক্ষণ ক্রিজে ছিলেন, ততক্ষণ আশা ছিল ঢাকার। কিন্তুর রাব্বীর বলে ডেসকাট ও সৌম্যর অসাধারণ ক্যাচে পোলার্ড ১৩ রানে আউট হলে পরাজয় নিশ্চিত হয় শিরোপা প্রত্যাশীদের। শেষ দিকে ১৪ বলে ২১ রান তুলে পরাজয়ের ব্যবধান কমান সোহান। নাঈম শেখ ১৮ বলে করেন ১৭ রান।

সানীর ৩ উইকেট ছাড়াও রাজশাহীর প্রত্যেক বোলারই ছিলেন দুর্দান্ত। মিরাজ ১৮ রানে ২টি, রাব্বী ২৪ রানে, মুস্তাফিজুর ১৯ রানে এবং উদানা ৩৬ রানে একটি করে উইকেট পেয়েছেন।



ঢাকার জয়রথ থামিয়ে রাজশাহী কিংস বিপিএল জমিয়ে তুলল, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। পাঁচ ম্যাচে এটি ঢাকার প্রথম পরাজয়। অন্যদিকে রাজশাহীর ছয় ম্যাচে তৃতীয় জয়। মার্শাল ও সানীর অসাধারণ পারফরম্যান্সে বিজয়ের মালা পরে সিলেট পর্ব শেষ করল রাজশাহী।



রাইজিংবিডি/সিলেট/১৬ জানুয়ারি ২০১৯/ইয়াসিন/পরাগ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়