মেসি-জাদুতে শেষ আটে বার্সা
ক্রীড়া ডেস্ক : আগের রাতে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর হ্যাটট্রিকের পর সবার নজর ছিল বর্তমান বিশ্বের আরেক সেরা ফুটবলার লিওনেল মেসির ওপর। বার্সেলোনা তারকা জুভেন্টাস তারকার মতো ঠিক তিন গোল করতে পারলেন না, তবে যা করলেন তা হ্যাটট্রিকের চেয়ে কম কিসে!
আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড নিজে করলেন জোড়া গোল, আরো দুই গোল করালেন সতীর্থদের দিয়ে। তাতে গোলশূন্য প্রথম লেগের পর ঘরের মাঠে ফিরতি লেগে লিঁওকে ৫-১ গোলে উড়িয়ে দিয়ে টানা ১২ বারের মতো চ্যাম্পিয়নস লিগের কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে গেল বার্সেলোনা।
সেই সঙ্গে চ্যাম্পিয়নস লিগে এই নিয়ে ঘরের মাঠে টানা ৩০ ম্যাচে অপরাজিত থাকল বার্সা। যেটি ঘরের মাঠে কোনো দলের সবচেয়ে দীর্ঘ অপরাজেয় যাত্রার রেকর্ড। এই ৩০ ম্যাচের মধ্যে বার্সা জিতেছে ২৭টি এবং ড্র হয়েছে ৩টি।
আর বার্সার জয়ের নায়ক মেসি মাত্র দ্বিতীয় খেলোয়াড় হিসেবে ইউরোপের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ এই প্রতিযোগিতার ১২ আসরে নকআউট পর্বে গোল করলেন। পর্তুগিজ ফরোয়ার্ড রোনালদো যেটি করেছেন ১৩ আসরে।
ন্যু ক্যাম্পে বুধবার রাতে ম্যাচের ১৭ মিনিটে বার্সাকে এগিয়ে দেন মেসিই। পেনাল্টি থেকে পানেনকা শটে গোলটা করেন পাঁচবারের বর্ষসেরা খেলোয়াড়। লুইস সুয়ারেজ ফাউলের শিকার হলে পেনাল্টি পেয়েছিল বার্সা।
এর আগে চতুর্থ মিনিটেই গোল পেতে পারতেন মেসি। ডি বক্সের বাইরে থেকে আর্জেন্টাইন তারকার বাঁ পায়ের বাঁকানো শট জালেই ঢুকতে যাচ্ছিল। ডান দিকে ঝাঁপিয়ে কর্নারের বিনিময়ে তা ঠেকিয়ে দেন অতিথি গোলরক্ষক।
৩১ মিনিটে বার্সার ব্যবধান দ্বিগুণ করেন ফিলিপে কুতিনহো। ডি বক্সের বাইরে থেকে সুয়ারেজ লিঁওর দুই খেলোয়াড়কে ফাঁকি দিয়ে বল বাড়ান কুতিনহোকে। গোলরক্ষক এগিয়ে আসায় ফাঁকা জালে বল পাঠিয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগে ন্যু ক্যাম্পে নিজের প্রথম গোল করেন ব্রাজিলিয়ান প্লে-মেকার।
দুই গোল হজমের পর আরেকটি বড় ধাক্কা খায় লিঁও। প্রথম গোলের পর চোট পেয়েছিলেন গোলরক্ষক অ্যান্থনি লোপেজ। অনেকক্ষণ চিকিৎসা নেওয়ার পরও খেলা চালিয়ে যান তিনি। দ্বিতীয় গোলের পর তাকে নিয়ে আর ঝুঁকি নেননি কোচ ব্রুনো জেনেসিও। অনেকটা লোপেজের অনিচ্ছার বিরুদ্ধেই তাকে উঠিয়ে ম্যাথু জর্জিলিনকে মাঠে নামান কোচ।
প্রথমার্ধে অন টার্গেটে একটি শটও নিতে পারেন লিঁও। বেশিরভাগ সময় বল দখলে রাখা বার্সা দ্বিতীয়ার্ধেও আধিপত্য ধরে রাখে। এই অর্ধের শুরুতেই আরেকটি গোল পেতে পারতেন মেসি। কিন্তু তার চিপ শট গোলমুখ থেকে ফেরান লিঁওর ডিফেন্ডার ফার্নান্দো মার্কাল।
৫৮ মিনিটে লিঁও একটি গোল শোধ করে চাপে ফেলে দেয় বার্সাকে। বক্সের ভেতর বল ক্লিয়ার করতে ব্যর্থ হন বার্সার খেলোয়াড়রা। বুক দিয়ে বল নামিয়ে সোজাসুজি শটে বার্সা গোলরক্ষক মার্ক আন্দ্রে টের স্টেগেনকে পরাস্ত করেন লুকাস টুসার্ত।
এরপর আরো কয়েকবার বার্সার রক্ষণে ভীতি ছড়ায় অতিথিরা। তবে ৭৮ মিনিটে নিজের দ্বিতীয় গোলে বার্সা শিবিরে স্বস্তি ফেরান মেসি। সার্জিও বুসকেটসের পাস থেকে বল পেয়ে ডি বক্সের ভেতরে ঢুকে দুই ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে শট নেন বার্সা ফরোয়ার্ড। ঝাঁপিয়ে পড়ে ঠেকানোর চেষ্টা করেছিলেন গোলরক্ষক, তবে বল তার হাতে লেগে গড়িয়ে গড়িয়ে জালে জড়ায়।
চলতি চ্যাম্পিয়নস লিগে বায়ার্ন মিউনিখের রবার্ট লেভানডফস্কির সঙ্গে যৌথভাবে সর্বোচ্চ গোলদাতা মেসির এটি অষ্টম গোল। সব মিলিয়ে ১০৮তম গোল। এর মধ্যে ঘরের মাঠে ৬১ ম্যাচে মেসির গোল ৬২টি।
এরপর লিঁওর জালে আরো দুইবার বল পাঠায় স্বাগতিকরা। দুইবারই গোলে অবদান রাখেন মেসি। ৮১ মিনিটে ডান দিক থেকে মেসির বাড়ানো বল থেকে দলের চতুর্থ গোলটি করেন জেরার্ড পিকে। ৮৬ মিনিটে মেসির পাস থেকেই অতিথিদের জালে পঞ্চম পেরেকটি ঠুকে দেন বদলি হিসেবে নামা উসমান ডেম্বেলে।
রাতের আরেক ম্যাচে বায়ার্ন মিউনিখকে তাদেরই মাঠে ৩-১ গোলে হারিয়ে চলতি আসরে চতুর্থ ইংলিশ ক্লাব হিসেবে শেষ আটে জায়গা করে নিয়েছে লিভারপুল। অ্যানফিল্ডে প্রথম লেগ গোলশূন্য ড্র হয়েছিল। শেষ আটের টিকিট পাওয়া বাকি ছয় দল হলো ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, ম্যানচেস্টার সিটি, টটেনহাম, আয়াক্স, পোর্তো ও জুভেন্টাস।
রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৪ মার্চ ২০১৯/পরাগ
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন