ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি বস্ত্র ও পোশাক খাতে বিপর্যয় আনতে পারে

নাসির উদ্দিন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৫৮, ২০ মার্চ ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি বস্ত্র ও পোশাক খাতে বিপর্যয় আনতে পারে

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক : পোশাক রপ্তানিকারকদের বৃহত্তম সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেছেন, গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি বস্ত্র ও পোশাক খাতের জন্য ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।

বুধবার রাজধানীর বিজিএমইএ ভবনে বিজিএমইএ, বিটিএমইএ, বিকেএমইএর যৌথ আয়োজনে শিল্পে জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধির নেতিবাচক প্রভাব সম্পর্কিত বিষয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনগুলোর পক্ষে এ কথা বলেন সিদ্দিকুর রহমান।

বিজিএমইএর সভাপতি বলেন, গ্যাসের মূল্য বর্তমানে প্রতি ঘনফুট ৭ দশমিক ৭৬ টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ১৮ দশমিক ০৪ টাকায় উন্নীত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। অর্থাৎ প্রস্তাবনা অনুযায়ী, শিল্প খাতে গ্যাসের মূল্য ১৩২ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। এতে পোশাক শিল্পে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পাবে প্রায় ৫ শতাংশ। কারণ, প্রতিটি পোশাক কারখানা ওয়াশিং ও ফিনিশিংয়ের সাথে সম্পৃক্ত। আর ওয়াশিং কারখানাগুলোতে বয়লার ব্যবহার হয়। এই প্রস্তাবনা শিল্পের প্রবৃদ্ধি ও বিকাশের সাথে সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক।

বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, প্রতি বছর ৫ শতাংশ হারে পোশাক খাতে মজুরি বাড়ছে। গত ডিসেম্বরে ন্যূনতম মজুরি ৫২ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়েছে। এর ফলে আমাদের উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ। এর ওপর যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ২০১৪ থেকে ২০১৮ সালে আমাদের পোশাকের দরপতন হয়েছে ৭ দশমিক ৪ শতাংশ এবং ইউরোপে দরপতন হয়েছে ৩ দশমিক ৬৮ শতাংশ। তাই আমরা চাই, অন্তত দুই বছর শিল্পে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি যেন না হয়। এমনিতেই শ্রমিকদের বেতন আমরা বাড়িয়েছি। সেটাই এখনো কাটিয়ে উঠতে পারিনি।

সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ২০১৮ সালে পোশাক খাতে মজুরি বাড়ানো হয়। তখন আমাদের দাবি ছিল, কোনো ইউটিলিটির দাম যেন না বাড়ানো হয়।

সরকার গ্যাস সরবরাহ পরিস্থিতির উন্নয়নে কাজ করছে, জানিয়ে বিজিএমইএর সভাপতি বলেন, এরপরও আমরা শিল্পের চাহিদা অনুযায়ী গ্যাসের চাপ পাচ্ছি না। গ্যাস পেলেও অপর্যাপ্ত ও অনিয়মিত সরবরাহ পাচ্ছি। আবার যতটুকু গ্যাস ব্যবহার করছি তার চেয়েও বেশি বিল পরিশোধ করছি। গ্যাস ব্যবহার না করেও তিতাস গ্যাস কোম্পানিকে বাতাসের মূল্য দিচ্ছি। আমরা দীর্ঘদিন ধরে ইবিসি মিটার চেয়ে আসছি, যাতে প্রেসার অনুযায়ী গ্যাসের দাম দিতে পারি।

এ সময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সিদ্দিকুর রহমান বলেন, গ্যাসের দাম বৃদ্ধিতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু তার আগে আমাদের নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।

তিনি বলেন, ২০১২ সালে গ্যাস সংযোগের জন্য আমরা আবেদন করেছিলাম, তার সংযোগ কেবল পেতে শুরু করেছি। শিল্পকারখানায় গ্যাস না পাওয়ার জন্য যে ক্ষতি হয়েছে সেটা মেকাপ করতে হবে। আমাদের ইভিসি মিটার দিতে হবে। সরকার যেটা বলেছে, ব্যাংকে ৯ শতাংশ সর্বোচ্চ সুদ হার হবে। আমরা ৬ শতাংশ হারে ব্যাংকে রাখতে পারব। এটাই আজ পর্যন্ত ব্যাংক বাস্তবায়ন করতে পারল না। আমরা বলছি, এই কাজগুলো করার পর আমাদের সঙ্গে আলোচনা করে পরর্যায়ক্রমে যৌক্তিক পর্যায়ে গ্যাসের দাম বাড়াতে হবে। আমাদের সঙ্গে এগুলো ঠিক না করে হঠাৎ গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করা হলে এ শিল্প ধ্বংস হয়ে যাবে।

তিনি বলেন, মোট উৎপাদিন গ্যাসের ১৬ দশমিক ৬৯ শতাংশ সরবরাহ হয় শিল্প খাতে। এটা খুবই নগন্য। সরকারের কাছে অনুরোধ, এমন কোনো পদক্ষেপ নেবেন না, যাতে শিল্পের বিকাশ রুদ্ধ হয়, শ্রমিক কর্মসংস্থান হারায়, অর্থনীতি গতিহীন হয়ে পড়ে। এমনিতেই বিভিন্ন সংকটে আমাদের গত পাঁচ বছরে ১ হাজার ২০০টি ছোট-মাঝারি কারখানা বন্ধ হয়েছে। বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক অস্থিরতা, ব্যাংকের উচ্চ সুদের হারসহ বিভিন্ন কারণে আমাদের কিন্তু গলা টিপে মেরে ফেলা হচ্ছে। আমাদের রক্তক্ষরণ হচ্ছে। আমরা আর এই রক্ত দিতে রাজি না। যেকোনো কিছু করতে হলে আমাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে তারপরে করতে হবে।

বিকেএমইএর প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ আলী খোকন বলেন, প্রতি ১০ বছরের জন্য একটি শিল্প পলিসি করা প্রয়োজন। কোনো জিনিসের কেমন দাম বাড়ানো হবে, সেটা এ পলিসিতে থাকবে। তাহলে প্রতিষ্ঠানগুলোও সে অনুয়ায়ী পরিকল্পনা করতে পারবে। এছাড়া, বরাদ্দ অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট গ্যাস কোম্পানিগুলে গ্যাস সরবরাহ করতে পারছে না। অন্যদিকে, ইন্ডাস্ট্রিতে যে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে তা ক্লিন নয়। এর প্রভাবে শিল্পের যন্ত্রপাতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অথচ ক্ষতিপূরণ দেওয়া হচ্ছে না। আমরা সরকারকে অনুরোধ করছি, গ্যাস সংকটের কারণে দীর্ঘদিন যাবত যেসকল মিল আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তার ক্ষতিপূরণ না করা পর্যন্ত গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি অগ্রহণযোগ্য।

বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মনসুর আহমেদ বলেন, পোশাক শিল্পকে ধ্বংস করার জন্য গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করা হচ্ছে কি না সেটা খতিয়ে দেখতে হবে। এমনিতেই খরচ বেড়ে যাওয়ায় চাপে রয়েছেন ব্যবসায়ীরা।




রাইজিংবিডি/ঢাকা/২০ মার্চ ২০১৯/নাসির/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়