ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাবের প্রতিবাদে মানববন্ধন

হাসিবুল ইসলাম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:০৯, ১৭ এপ্রিল ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাবের প্রতিবাদে মানববন্ধন

গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাবের প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে বাংলাদেশ সাধারণ নাগরিক সমাজ (ছবি : শাহীন ভুঁইয়া)

নিজস্ব প্রতিবেদক :  গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাবের প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে বাংলাদেশ সাধারণ নাগরিক সমাজ। তারা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের বিরুদ্ধে বিতর্কিত ভূমিকা পালনের অভিযোগ এনে এর প্রতিবাদ জানিয়েছে।

বুধবার রাজধানীতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত মানববন্ধনে এই প্রতিবাদ জানানো হয়।

‘গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব ও কমিশনের বিতর্কিত ভূমিকার প্রতিবাদে মানববন্ধন’ শিরোনামে আয়োজিত মানববন্ধনে গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘জ্বালানী মন্ত্রীর বক্তব্যের ব্যাখ্যা কমিশনকে দিতে হবে। পৃথিবীর সব দেশেই সরকার মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব আনে, আর মূল্য নির্ধারণ করে নিয়ন্ত্রক কমিশন। অথচ আমাদের দেশে কমিশনকে অবজ্ঞা করে জ্বালানী মন্ত্রী মূল্যবৃদ্ধির বক্তব্য প্রদান করেন।’

সিপিবি’র সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘আগামী ছয় মাসে গ্যাসের মূল্য আমদানির উপর কি পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে তা এখনই নির্ধারণ করতে চায় সরকার। যা মোটেও ন্যায়সংগত নয়।’

সভাপতির বক্তব্যে মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন একটি স্বাধীন সার্বভৌম প্রতিষ্ঠান হলেও এই কমিশনের এবারের গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির প্রস্তাবের শুনানি ও পরবর্তী সময়ে তাদের ভুমিকা জনমনে সঙ্কার সৃষ্টি করেছে।

প্রথমতঃ কমিশনের নিজস্ব আইনের ২ (ঝ) উপধারা মতে এনার্জি সরবরাহ বা তদসম্পর্কিত বিশেষ সেবার মূল্যহার ৩৪ (৫) উপধারা মতে কমিশন কতৃর্ক নির্ধারিত ট্যারিফ কোন অর্থবছরে একবারের বেশি পরিবর্তন করা যাবে না। এই ক্ষেত্রে কমিশন নিজস্ব আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে গণশুনানি করেছে।

দ্বিতীয়তঃ একটি স্বাধীন সার্বভৌম প্রতিষ্ঠানের কোন সদস্য কারো পক্ষপাত অবলম্বন করতে পারে না, অথচ শুনানি চলাকালে কশিনের একজন সদস্য মূল্যবৃদ্ধির পক্ষে বক্তব্য দিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করেছেন।

তৃতীয়তঃ কোম্পনিগুলো ২৯ জানুয়ারি ৬৬ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব করলে কমিশন ১১ মার্চ গণশুনানির আয়োজন করে। অথচ শুনানিতে অংশ নিয়ে আমরা জানতে পারলাম কোম্পানিগুলো ১০২ দশমিক ৮৫ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধির সংশোধনী প্রস্তাবের উপর শুনানি করছে। নাগরিকদের সঙ্গে এধরনের লুকোচুরি করলেও বিইআরসি কোন ব্যাবস্থা নেয়নি।’

চতুর্থতঃ মহামান্য হাইকোর্ট ৩১মার্চ তাদের রায়ে বলেছেন, কোম্পানিসমূহের দুর্নীতি ৫০ শতাংশ কমালে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি করার প্রয়োজন হবে না। সেইসঙ্গে কমিশনকে দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত করার নির্দেশ দেন। কিন্তু এই নির্দেশের ১৬দিন অতিবাহিত হলেও কমিশন অদ্যাবধি কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।

পঞ্চমতঃ জ্বালানী মন্ত্রীর গত ১১ এপ্রিলের বক্তব্য ‘গ্যাসের দাম বাড়াচ্ছি না, এটি সমন্বয় হচ্ছে। কারণ, কম দামে গ্যাস দেওয়া হচ্ছে ‘ (সূত্রঃ প্রথম আলো, ১২ এপ্রিল ২০১৯) মন্ত্রি  মহোদয়ের বক্তব্য একটি স্বাধীন কমিশনের উপর হস্তক্ষেপ বলে সাধারন নাগরিকগণ মনে করেন। অথচ কমিশন এখনো পর্যন্ত নির্বিকার।’

ষষ্ঠতঃ এলএনজি’র মূল্য আন্তর্জাতিক ও প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে মিল না রেখেই আমদানিকারক কোম্পানি ও পেট্রো বাংলার প্রস্তাবিত মূল্যের উপর ভর করে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করার সিদ্ধান্তের উপর কমিশনের কোন ভূমিকা না থাকা দুঃখজনক। সেই সঙ্গে এলপিজি’র লাইসেন্স প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান হয়েও বাজার নিয়ন্ত্রণ ও নিরাপত্তার কোন ব্যবস্থার উদ্যোগ কমিশন এখন পর্যন্ত নেয়নি।

উপরোক্ত অবস্থার প্রেক্ষিতে দেশের নাগরিকগণ  মনে করেন এই কমিশন লোক দেখানো গণশুনানি  করেছে যা প্রমানিত। তাহলে কারি কারি অর্থ ব্যয় করে কমিশন রেখে লাভ কি? ’

আমাদের বক্তব্য, সরকারের পরিসংখ্যান বলছে, চলতি বছর মূল্যস্ফীতি ঘটেছে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। সেখানে ১০২ দশমিক ৮৫ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাবের ফলে মূল্যস্ফীতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা পরিসংখ্যানের বিষয়।’

তিনি বলেন, ‘সিএনজি গ্যাসে ৪০ দশমিক ২৫ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব সড়কে শৃঙ্খলা আনয়ন কমিটি কর্তৃক ১১১ দফা সুপারিশের পরিপন্থী। সরকার যেখানে গণপরিবহনে ভাড়া নৈরাজ্য দূর করতে ও সৃঙ্খলা আনতে কাজ করে যাচ্ছে, যেখানে প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং খোঁজ খবর রাখছেন সেখানে এই প্রস্তাবিত মূল্য গণপরিবহনে ভাড়া নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খল অবস্থাকে উসকে দিচ্ছে। আবাসিক খাতে জ্বালানির সংকট চরমে। এরমধ্যে দেশের ৯০ ভাগ জনগোষ্ঠী এখনো রাষ্ট্রের জ্বালানি ব্যবহার করতে পারছে না, যারাও পারছে তারাও আবার নির্ধারিত মূল্যের চাইতে কম গ্যাস ব্যাবহার করছে। গবেষকগণ মনে করেন গ্যাসের মূল্য বাড়লে জিডিপি কমবে ২.৮ শতাংশ। অর্থাৎ আমরা এগিয়ে যাওয়ার বদলে পিছিয়ে পড়বো।’

নাগরিকগণ যেহেতু কমিশনের উপর আস্থা রাখতে পারছে না তাই গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির বিষয়টি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে সুরাহা করে দিয়ে মূল্যবৃদ্ধি না করার পক্ষে সিদ্ধান্ত প্রদান করার জন্য অনুরোধ করছি। জ্বালানী নিয়ন্ত্রক কমিশনকে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে জ্বালানী মন্ত্রীর বক্তব্যের ব্যাখ্যা প্রদান করতে আহ্বান জানান তিনি।

মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের আহ্বায়ক মহিউদ্দিন আহমেদ। উপস্থিত ছিলেন, বাসদের কেন্দ্রীয় নেতা রাজেকুজ্জামান রতন, সংগঠনের সদস্য সচিব মোঃ দেলোয়ার হোসেন, বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতির যুগ্ম মহাসচিব এম.এ মনিরুল হক, গ্রীন মুভমেন্টের চেয়ারম্যান বাপ্পী সরদার, সংগঠনের সমন্বয়কারী আমিনুল ইসলাম বুলু, কাজী আমানুল্লাহ মাহফুজ, রাজু আহমেদ খানসহ বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৭ এপ্রিল ২০১৯/হাসিবুল/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়