চিরনিদ্রায় জায়ান
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক : যে বয়সে বন্ধুদের সঙ্গে খেলাধুলা আর আত্মীয়-স্বজনের আদর নিয়ে ঘর আলোকিত করে রাখার কথা, সেই বয়সে চিরনিদ্রায় সমাহিত হলেন জায়ান চৌধুরী। শ্রীলঙ্কায় সন্ত্রাসী হামলায় নিহত জায়ান চৌধুরীর জানাজা শেষে বনানী কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়েছে, যেখানে শুয়ে আছেন ১৫ আগস্টের শহীদরা।
বুধবার বাদ আসর রাজধানীর বনানীর চেয়ারম্যান মাঠে সর্বস্তরের মানুষ জানাজায় অংশ নেন। জানাজায় দেশের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন। ছোট্ট জায়ানকে যাতে সবাই শেষ দেখাটা দেখতে পারেন, সেজন্য বনানীর মাঠের চারদিকে চারটি জায়ান্ট স্ক্রিনের ব্যবস্থা রাখা হয়।
নিথর দেহের জায়ানের মুখটি যখন শেষবারের মতো জায়ান্ট স্ক্রিনে দেখানো হচ্ছিল তখন উপস্থিত সবাই শোকে স্তব্ধ হয়ে যান। সবার দীর্ঘ নিঃশ্বাসে পুরো এলাকার পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে। ছোট্ট জায়ান, মায়াবী মুখ? কী অপরাধ ছিল তার? পৃথিবীটাকে ভালো করে দেখার আগেই পৃথিবী থেকে কেন চলে যেতে হলো তাকে?
জানাজা শেষে জায়ানের মরদেহ বনানী কবরস্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেও জায়ানের মরদেহবাহী গাড়ির পেছনে ছুটে চলে হাজার হাজার মানুষ। সেখানে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট যারা শহীদ হয়েছিলেন, তাদের কবরের পাশে সমাহিত হয় ছোট্ট জায়ান।
জায়ানের জানাজার আগে তার নানা ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, ‘শনিবার বাদ আসর বনানীর এই মাঠে জায়ানের কুলখানি হবে।’
তিনি বলেন, ‘জায়ানের জন্য যে সহানুভুতি আপনারা দেখিয়েছেন তা আমাদের পরম পাওয়া। আমার মেয়ে যেন পুত্র হারানোর শোক দ্রুত কাটিয়ে উঠতে পারে এবং তার স্বামী যেন দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠে সেই দোয়া করবেন।’
এর আগে জায়ানকে শেষবারের মতো দেখতে তার নানা আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিমের বনানীর বাসায় এসেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বুধবার দুপুর ২টা ৪০ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী শেখ সেলিমের বাসায় আসেন। তিনি আসার পর এক হৃদয়বিদারক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। শেখ সেলিমসহ সব আত্মীয়-স্বজন কান্নায় ভেঙে পড়েন।
এর আগে দুপুর পৌনে ১টায় শ্রীলঙ্কান এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে জায়ানের মরদেহ হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। দুপুর দেড়টার দিকে মরদেহ শেখ সেলিমের বনানীর ২/এ’র ৯ নম্বর বাসায় আসে।
প্রধানমন্ত্রীর আসাকে কেন্দ্র করে বাড়িটির চারপাশে নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। বাদ আসর বনানীর চেয়ারম্যান বাড়ির মাঠে তার নামাজে জানাজা শেষে বনানীর কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত হবে সবার আদরের ছোট্ট জায়ান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফুফাতো ভাই শেখ সেলিমের মেয়ে শেখ আমেনা সুলতানা সোনিয়া তার স্বামী মশিউল হক প্রিন্স ও দুই ছেলেকে নিয়ে শ্রীলঙ্কায় বেড়াতে গিয়েছিলেন। রোববার শ্রীলঙ্কায় সন্ত্রাসী হামলার সময়ে হোটেলের নিচতলারে একটি রেস্তোরাঁয় সকালের নাস্তা করতে গিয়েছিলেন প্রিন্স ও তার বড় ছেলে জায়ান। এ সময় হামলায় জায়ান নিহত হন এবং প্রিন্স গুরুতর আহত হন। ছোট ছেলে জোহানকে নিয়ে শেখ সোনিয়া ওই সময় হোটেলের কক্ষে ছিলেন। উত্তরায় সানবিম স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র ছিল জায়ান।
শ্রীলঙ্কার ওই দিনের সিরিজ বোমা হামলায় এখন পর্যন্ত ৩৫৯ জন নিহত হয়েছেন। এর দায় স্বীকার করেছে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস)। ওই হামলায় আহত হন অন্তত পাঁচ শতাধিক মানুষ।
রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৪ এপ্রিল ২০১৯/রেজা/সাইফুল
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন