ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

‘মৃত্যুই মামলা থেকে মুক্তির উপায়’

মামুন খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:২৭, ১ মে ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘মৃত্যুই মামলা থেকে মুক্তির উপায়’

নিজস্ব প্রতিবেদক : ‘হয় আদালত আমাকে খালাস দিক, নইতো মেরে ফেলুক।  মামলার বোঝা আর বইতে পারছি না। আমার মৃত্যুই মামলা থেকে একমাত্র মুক্তির উপায়।  তবে জীবিত অবস্থায় মামলা থেকে খালাস পাইলে মরে গিয়েও শান্তি পেতাম।’

কথাগুলো বলছিলেন শতবর্ষী রাবেয়া খাতুন।  বয়সের ভারে ন্যূব্জ রাবেয়া খাতুন।  শরীর যেন আর পেরে উঠছে না। তারপরও অস্ত্র মামলায় ১৭ বছর ধরে ঢাকার একটি আদালতে হাজিরা দিচ্ছেন এ শতবর্ষী মহিলা।

রাবেয়া খাতুনকে প্রতি ধার্য তারিখে আদালতে হাজিরা দিতে আসতে হয়।  ঠিক মতো হাঁটতেও পারেন না তিনি। তারপরও মামলার কারণে মিরপুরের শেওড়াপাড়ার বাসা থেকে প্রতি হাজিরার তারিখে খুব সকালে পুরান ঢাকার সদরঘাটের আদালতে আসতে হয়।  দীর্ঘ সময় ধরে এই আসা-যাওয়ার শাস্তি থেকে তিনি এখন মুক্তি পেতে চান।

রাবেয়া খাতুন বলেন, ‘মিথ্যা এক মামলায় প্রায় ১৭ বছর ধরে আদালতের বারান্দায় ঘুরছি।  একে তো বয়সের ভার বইতে কষ্ট হয়।  তারপর এ মিথ্যা মামলার ভার? আর নিতে পারছি না।  অনেকদিন ধরে এই মামলায় যাওয়া-আসার শাস্তি আমি ভোগ করতেছি।  আদালত আমাকে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতিও দেয় না।  তারিখে তারিখে আসি, কোনো কিছু হয় না।  মনে হচ্ছে মৃত্যুই এ মামলা থেকে মুক্তি পাবার একমাত্র উপায়।’

তিনি বলেন, ‘১৭ বছর আগে আমার নামে মিথ্যা অস্ত্র মামলা দেওয়া হয়।  আমি কোনোদিন কোনো অস্ত্রই দেখি নাই। আমি অনেক দূর থেকে আসি।  আমি আর সইতে পারি না।  আমি এ মামলা থেকে খালাস চাই।’

১৬ বছর ধরে সাক্ষ্যগ্রহণ চলমান ওই মামলায় বয়সের ভারে ন্যূব্জ রাবেয়া প্রত্যেক ধার্য তারিখেই আদালতে আসতে হয় একা।  অধিকাংশ সাক্ষীর সাক্ষ্য না হওয়ায় ঝুলতে থাকা এ মামলায় আর কতদিন রাবেয়া খাতুনকে হাজিরা দিতে হবে সংশ্লিষ্ট কেউ বলতে পারছেন না।

মামলাটি ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মো. আল মামুনের আদালতে বিচারাধীন।  আগামী ৩১ জুলাই মামলাটিতে পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ঠিক করেছেন আদালত।

এ সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুর সাত্তার দুলাল বলেন, ‘মামলাটিতে ১৫ জন সাক্ষী রয়েছে। ছয়জনের সাক্ষ্য হয়েছে।  এখনো মামলার তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষী হয়নি।  আমরা জানতে পেরেছি, তদন্ত কর্মকর্তা মারা গেছেন।  তাই আদালত বিষয়টি নিশ্চিত হতে পুলিশ প্রতিবেদন তলব করেছেন।  ওই প্রতিবেদন আসলে মামলাটি নিষ্পতির দিকে নেওয়া যাবে।’

তবে এ সম্পর্কে রাবেয়া বেগমের আইনজীবী মেহেদী হাছান পলাশ বলেন, ‘একজন বয়স্ক নারী আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ায় ১৭ বছর ধরে আদালতে আসছেন।  গ্রেপ্তার হওয়ার পর ছয় মাস জেলও খেটেছেন।  রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষী না আনতে পারায় ১৭ বছর ধরে মামলাটি চলছে। কবে শেষ হবে তাও ঠিন নেই। ’

তিনি বলেন, ‘পূর্বের বিচারক মামলাটি সাক্ষ্যগ্রহণ সমাপ্ত করে আসামির আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য ধার্য করেন। ওই বিচারক বদলি হয়ে যাওয়ার পর নতুন বিচারক পুনরায় মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণে ফিরিয়ে নেন।  সর্বশেষ ২০১৪ সালে সাক্ষী হয়েছে।  এরপর গত পাঁচ বছর রাষ্ট্রপক্ষ কোনো সাক্ষী হাজির করেনি।’

মামলার এজাহারে পুলিশের অভিযোগ, তেজগাঁও থানাধীন কাজীপাড়াস্থ ৩/ক, গার্ডেন রোডের আব্দুল মজিদের ঘরের দক্ষিণ পাশে ২০০২ সালের ১ জুন রাত সাড়ে ১১টায় একটি চটেরব্যাগসহ পালানোর সময় গ্রেপ্তার হন রাবেয়া খাতুন। ওই সময় ব্যাগের ভেতর ছয় রাউন্ড গুলিসহ একটি বিদেশি পিস্তল পাওয়া যায়।

ওই ঘটনায় তেজগাঁও থানার এসআই আব্দুর রাজ্জাক বাদী হয়ে রাবেয়াসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।  ছয় মাস কারাভোগের পর রাবেয়া খাতুন জামিন পান।  মামলার চার্জশিটে রাবেয়া এবং পলাতক জুলহাস নামে আরো একজনকে আসামি করা হয়।

২০০২ সালে ২ জুন তেজগাঁও থানায় দায়ের হওয়া এ মামলায় একই বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আব্দুল আজিজ । পরের বছর ২৪ মার্চ চার্জ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরু হয়। ২০০৭ সালের ১৮ জানুয়ারি সাক্ষ্য শুরু হওয়া এ মামলায় ২০১৪ সালের ১১ মে পর্যন্ত ছয়জনের সাক্ষ্য হয়। ১৫ জন সাক্ষী থাকা এ মামলায় এরপর আর কোনো সাক্ষ্য হয়নি।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১ মে ২০১৯/মামুন খান/সাইফুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়