ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

আসছে ফণি : আতঙ্কে উপকূলবাসী

সুজাউদ্দিন রুবেল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:২৮, ২ মে ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
আসছে ফণি : আতঙ্কে উপকূলবাসী

ফণির প্রভাবে সাগর উত্তাল

কক্সবাজার প্রতিনিধি : ঘূর্ণিঝড় ফণি কক্সবাজার থেকে ১০২৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে। এটি আগামীকাল শুক্রবার বাংলাদেশে আঘাত হানতে পারে।

৮টি উপজেলা সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে জেলা প্রশাসন। তবে কিছু এলাকার মানুষের অভিযোগ ঘূর্ণিঝড় ফণি নিয়ে প্রশাসনের কোনো প্রচারণা নেই। ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে এখনই উপকূলের লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে আনা প্রয়োজন বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।

কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে চার নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। কক্সবাজার শহরের সমুদ্র উপকূলবর্তী চরপাড়া এলাকা। সমুদ্রের পাড় ঘেঁষে গড়ে উঠেছে বসতি। সেখানে বসবাস করছে ১০ হাজারের অধিক মানুষ।

স্থানীয়দের অভিযোগ ঘূর্ণিঝড় ফণি নিয়ে প্রশাসনের কোনো প্রচারণা নেই। তাই সেখানেই রয়েছে স্থানীয় বাসিন্দারা। এই অভিযোগ শুধু চরপাড়ার বাসিন্দারদের নয়; একই অভিযোগ সমিতি পাড়া, নাজিরারটেক, কুতুবদিয়াপাড়া ও ফদনারডেইল এলাকার বাসিন্দাদেরও। ঘূর্ণিঝড় ফণি নিয়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে তাদের মাঝে।

শহরের উপকূলীয় এলাকা সমিতি পাড়ার বাসিন্দা রুস্তম আলী বলেন, ‘সমুদ্রের খুবই কাছে বসবাস করি। গতকাল থেকে যে পরিস্থিতি দেখা যাচ্ছে, তাতে মনে হচ্ছে ঘূর্ণিঝড় ফণি এবার আঘাত আনবে।’

চরপাড়া এলাকা রহিমা বেগম বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় ফণির কারণে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে তা টেলিভিশনে সংবাদ দেখে জানতে পেরেছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত জেলা প্রশাসন কিংবা সরকারি কোনো সংস্থা আমাদের সতর্ক করেনি।’

একই এলাকার ফিরোজ আহমদ বলেন, ‘আমরা তো সবসময় আতঙ্কে থাকি সমুদ্র উপকূলে বসবাস করার কারণে। যদি সংকেত বেশি হয়ে যায় তখন পরিবার-পরিজন নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে খুবই কষ্ট হয়।’

কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ আব্দুর রহমান বলেন, ‘সাগর যেহেতু উত্তাল তাই এই মুহুর্তে ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে উপকূলের লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে আনা প্রয়োজন। আমাবশ্যার জোয়ারের সঙ্গে যদি ঘূর্ণিঝড় ফণির প্রভাবে সাগরের পানির উচ্চতা আরো বেড়ে যায় তাহলে উপকূলীয় এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’

এদিকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে ঘূর্ণিঝড় ফণি মোকাবিলায় ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে বিভিন্ন সংস্থার ১০ হাজারের বেশি কর্মী। পাশাপাশি প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৮৯টি মেডিক্যাল টিম।

বৃহস্পতিবার দুপুরে জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত প্রস্তুতি সভায় এ তথ্য জানান ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশরাফুল আফসার।

তিনি জানান, ঘূর্ণিঝড় ফণি মোকাবিলায় কক্সবাজারে ৫৩৮টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। যাতে আশ্রয় পাবে উপকূলের সাড়ে ৪ লাখ মানুষ। এ ছাড়া ৮টি উপজেলায় কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। আর জরুরি মুহুর্তের জন্য প্রস্তুত রয়েছে ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) ৬ হাজার ৪৫০ জন কর্মী। তার মধ্যে রোহিঙ্গা শিবিরে ১ হাজার ৭০০ কর্মী প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ৪৩০ ইউনিটে ভাগ হয়ে তারা কাজ করবে। রেড ক্রিসেন্টের রয়েছে ১২ শতাধিক কর্মী। তারা ৫ টি ইউনিটে ভাগ হয়ে কাজ করবে। এ ছাড়া সিভিল সার্জন অফিসের পক্ষ থেকে ৮৯টি টিম গঠন করা হয়েছে। তার মধ্যে ২০ জন চিকিৎসক অন্যান্য এলাকা থেকে এনে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া ফায়ার সার্ভিসের চারটি বিশেষ ইউনিট ও বিদ্যুৎ বিভাগের ছয়টি ইউনিট প্রস্তুত রয়েছে। জেলা শহরের পাশাপাশি উপজেলা পর্যায়ে ব্যাপক প্রস্তুতির নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সুতরাং সবাইকে নিয়ে সম্মিলিতভাবে ঘূর্ণিঝড় ফণি মোকাবেলা করা হবে।

জেলা ফিশিং বোট মালিক সমিতির দেয়া তথ্য মতে, ঘূর্ণিঝড় ফণির কারণে সাগরে মাছ ধরা বন্ধ করে কক্সবাজার উপকূলে ফিরে এসেছে ৫ হাজার ট্রলারের প্রায় ৫০ হাজারের অধিক জেলে।



রাইজিংবিডি/কক্সবাজার/২ মে ২০১৯/সুজাউদ্দিন রুবেল/ইভা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়