ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

ইতিহাস ফেরানোর শক্তিতে বলিয়ান ওয়েস্ট ইন্ডিজ

সাইফ মুহাম্মাদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:১১, ১৯ মে ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ইতিহাস ফেরানোর শক্তিতে বলিয়ান ওয়েস্ট ইন্ডিজ

সাইফ মুহাম্মাদ : আর মাত্র কয়েক দিনের অপেক্ষা ফুরালেই মাঠে গড়াবে আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপের ১২তম আসর। ইংল্যান্ড ও ওয়েলসে অনুষ্ঠিতব্য আসরটিতে অংশগ্রহণ করবে মোট ১০টি দল। প্রতিটি দল অন্তত নয়টি করে ম্যাচ খেলার সুযোগ পাবে। ফলে মনে করা হচ্ছে, এবারের বিশ্বকাপ হয়ে উঠতে পারে ইতিহাসের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ক্রীড়া আয়োজন। যে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অপ্রতিরোধ্য শক্তি হয়ে উঠতে পারে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, যদিও সাম্প্রতিককালে তাদের পারফর্ম্যান্স খুব বেশি আশা জাগাতে পারছে না। তারপরও তাদের বাদ দিয়ে বিশ্বকাপ চিন্তা করার সুযোগ কমই।

ইতিহাসের প্রথম দুটি বিশ্বকাপ জিতেছিলো ক্যারিবীয়রা। তৃতীয় আসরের ফাইনালেও পড়েছিল তাদের পা। কিন্তু সেই শেষ, আর কোনো দিন ফাইনালেও উঠতে পারেনি দুইবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপও ঘরে তোলা ক্যারবীয়রা। তারপরও তাদের পক্ষে বাজির দর কম হওয়ার সুযোগ নেই বললেই চলে।

সম্প্রতি আয়ারল্যান্ড ও বাংলাদেশের সাথে একটি ত্রিদেশীয় সিরিজ খেলেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সিরিজটিতে খেলা পাঁচ ম্যাচের তিনটিই বাংলাদেশের কাছে হেরেছে তারা। অন্য দুই ম্যাচে তারা জিতেছে তুলনামূলক সহজ প্রতিপক্ষ আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে। এই সিরিজের কোনো ম্যাচে ক্যারিবীয়দের ‘সিগনেচার’ ক্রিকেট চোখে পড়েনি। তাদের বোলাররা বল হাতে ছিলেন নির্বিষ, ব্যাটসম্যানরা ছিলেন মাঝ সাগরে দিক ভুলে যাওয়া নাবিকের মতো। শক্তি-সামর্থ্য কিছুটা তারা দেখিয়েছেন বটে, তবে পরিকল্পনা ও সমন্বয়হীনতায় তা কাজে লাগেনি।

অবশ্য ত্রিদেশীয় সিরিজটিতে ক্যারিবীয়দের ব্যর্থতার পেছনে যৌক্তিক একটা কারণও ছিল; আইপিএলের কারণে এই সিরিজে ছিলেন না দলটির বিশ্বকাপ স্কোয়াডের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন সদস্য। তারা যদি থাকতেন, হয়তো বিশ্বকাপের নিয়ে যাওয়ার মতো কিছু আত্মবিশ্বাস পেতো ক্যারিবীয়রা।
 


বিশ্বকাপের জন্য ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ড যে দল ঘোষণা করেছে, ইতিহাস ফিরিয়ে আনার যথেষ্ট ক্ষমতা আছে তাদের। দরকার কেবল মাঠের ক্রিকেটে প্রয়োজনের সময় দল হিসেবে ভালো খেলা। তবেই পুরোনো দিনের দারুণ দাপুটে সময়ের নতুন প্রতিচ্ছবি ক্রিকেট বিশ্বকে দেখাতে পারেন জ্যাসন হোল্ডাররা।

বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্বপ্ন পূরণের মূল ভার থাকবে ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যানদের হাতে। এ কথা কে না জানে যে, শারীরিক শক্তিতে অন্য যে কোনো দেশের ক্রিকেটারদের তুলনায় এগিয়ে থাকায় ক্যারিবীয়দের ব্যাটে যখন তখন দেখা মিলতে পারে দানবীয় ব্যাটিং প্রদর্শনীয়। যা মাত্র কয়েক বলের ব্যবধানে বদলে দিতে পারে ম্যাচের রঙ।

ক্যারিবীয় ব্যাটিং লাইনের মূল ভরসা নিঃসন্দেহে পঞ্চম বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়া ক্রিস গেইল। ক্যারিয়ারের সায়াহ্নে থাকলেও নিজের দিনে পুরো পৃথিবীকে স্রেফ নিরীহ দর্শক বানিয়ে রাখার ক্ষমতা আছে স্বঘোষিত ‘ইউনিভার্সাল বস’-এর। তার সঙ্গে ইনিংসের শুরুতে দেখা যেতে পারে এভিন লুইসকে, ক্যারিবীয় নতুন প্রজন্মের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে যার ঝড় তোলার ক্ষমতা সবচেয়ে বেশি বলে মনে করা হয়।

পরের দিকে আছেন শেই হোপ, নিকোলাস পুরান, ড্যারেন ব্রাভো ও শিমরন হ্যাটমায়াররা। ধারণা করা হচ্ছে, অন্য যে কোনো আইসিসি আসরের মতো আসন্ন বিশ্বকাপেও ব্যাটসম্যানদের জন্য সহায়ক উইকেট তৈরি করা হবে। সেই ধরনের উইকেটে হোপ-ব্রাভোদের ব্যাটে দেখা যেতে পারে প্রলয়নাচন। যে নাচনে প্রতিপক্ষে দফারফা হওয়ার আশঙ্কা তীব্রভাবেই থাকছে।
 


ক্যারিবীয়দের ব্যাটিং শক্তিকে অন্যমাত্রায় নিয়ে যেতে পারেন আন্দ্রে রাসেল। ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলে সেভাবে নিয়মিত না হলেও ক্রিকেটটা তিনি খেলে যাচ্ছেন প্রাণখুলে। বিশ্বজুড়ে অনুষ্ঠিত হওয়া প্রায় সব টি-টোয়েন্টি লিগেই থাকে তার দাপুটে পদচারণা। তিনি দিন কয়েক আগে হয়ে যাওয়া আইপিএল মাতিয়েছেন দারুণ দক্ষতায়। সেখানে কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে ১৩ ইনিংসে ৫৬.৬৭ গড়ে ৫১০ রান করেছেন।  কলকাতার আর কোনো ব্যাটসম্যান ৪৫০ রানও করতে পারেননি। বল হাতে ১৪ ম্যাচে ১১ উইকেট নিয়ে তিনিই ছিলেন দলের সেরা বোলার। সব মিলিয়ে আইপিএল ছিলো রাসেলের জন্য বিশ্বকাপের সেরা প্রস্তুতির মঞ্চ।

রাসেলের সাথে অলরাউন্ডার হিসেবে আরো আছেন জ্যাসন হোল্ডার ও কার্লোস ব্রাথওয়েট। এদের প্রত্যেকেরই ম্যাচের রঙ মুহূর্তেই বদলে দেয়ার অসাধারণ ক্ষমতা আছে।

শ্যানন গ্যাব্রিয়েল, কেমার রোচ, ওশানে টমাস ও শেলডন কাটরেলকে নিয়ে গড়া পেস আক্রমণও দারুণ সমীহ জাগানিয়া। তবে বোলিং লাইনে দক্ষ স্পিনারের অভাবে ভুগতে হতে পারে ক্যারিবীয়দের।  সুনীল নারাইন বা দেবেন্দ্র বিশুর কেউই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিশ্বকাপ দলে জায়গা পাননি। এ ছাড়া তাদের আফসোস থাকবে কাইরন পোলার্ড ও মারলন স্যামুয়েলসের জন্যও। ডোয়াইন ব্রাভোও নেই দলটির সাথে। জ্যাসন হোল্ডার নিশ্চিতভাবেই এদের অভাব টের পাবেন বিশ্বকাপে।

দলীয় শক্তি- সামর্থ্য থেকে পাওয়া আত্মবিশ্বাস কিংবা অতীত ইতিহাসের সোনালি দিন ফিরিয়ে আনার তাড়নার বাইরেও ওয়েস্ট ইন্ডিজকে এই বিশ্বকাপে জেদি করে তুলতে পারে তাদের বিশ্বকাপে আসার প্রক্রিয়াটা। র‍্যাঙ্কিংয়ে সেরা আটে থাকতে না পারায় ক্যারিবীয়দের বিশ্বকাপে ঠাঁই পেতে হয়েছে বাছাইপর্ব পেরিয়ে। জিম্বাবুয়েতে অনুষ্ঠিত হওয়া সেই বাছাইপর্বে বৃষ্টি আইনের বদন্যতায় স্কটল্যান্ডের সাথে মাত্র পাঁচ রানে জেতে বিশ্বকাপ নিশ্চিত করে ক্যারিবীয়রা। বাছাই পর্বের যন্ত্রণাময় যাত্রার কথা ভোলার জন্য হলেও বিশ্বকাপে সবাইকে দেখিয়ে দেয়ার পণ করে নামতে পারে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, এ ধারণা করাই যায়।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ বিশ্বকাপ স্কোয়াড: ক্রিস গেইল, এভিন লুইস, ড্যারেন ব্রাভো, শিমরন হ্যাটমায়ার, অ্যাশনে নার্স, আন্দ্রে রাসেল, ফ্যাবিয়ান অ্যালেন, কার্লস ব্র্যাথওয়েট, জ্যাসন হোল্ডার (অধিনায়ক), নিকোলাম পুরান, শেই হোপ, কেমার রোচ, ওশানে টমাস, শ্যানন গ্যাব্রিয়েল ও শেলডন কাটরেল।




রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৯ মে ২০১৯/ইয়াসিন

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়