ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

পোশাক শ্রমিকরাও আসছে ডিজিটালের আওতায়

হাসান মাহামুদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০১:৫৭, ২৭ জুন ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
পোশাক শ্রমিকরাও আসছে ডিজিটালের আওতায়

হাসান মাহামুদ : বর্তমান সরকারের অন্যতম লক্ষ্য দেশকে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে উন্নীত করা। এ কাতারে এবার শামিল হতে যাচ্ছে জাতীয় অর্থনীতির প্রধানতম চালিকা শক্তি হিসেবে বিবেচিত তৈরি পোশাক শিল্প। আইসিটি মন্ত্রণালয়ের সহায়তায় পোশাক শ্রমিকদের সম্পৃক্ত করা হচ্ছে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা ‘ই-ওয়ালেট’ এর সাথে। এর ফলে বৃহৎ এই জনগোষ্ঠীর বেতন ব্যবস্থা আসছে ডিজিটালাইজেশনের আওতায়।

তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সূত্র জানায়, বর্তমান সরকারের ঘোষণার সাথে একাত্মতা রেখে দেশের সব পোশাক কারখানায় বেতন ডিজিটাল করার প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন করাকে সংগঠনটি আপাতত প্রধান চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে। বিশেষ করে বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে বিষয়টিতে জোর দেওয়া হচ্ছে।

‘ই-ওয়ালেট’ ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করতে হলে সবার আগে সংগঠনটির প্রয়োজন দেশের বিদ্যমান পোশাক কারখানা ও শ্রমিকদের তালিকা চূড়ান্ত করা। সেক্ষেত্রে সংগঠন সূত্র বলছে, আপাতত বিজিএমইএ এর তালিকাভুক্ত কারখানার শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করা হবে। পরবর্তীতে এই কার্যক্রমের আওতায় আনা হবে দেশের সকল পোশাক শ্রমিককে।

জানা গেছে, বিজিএমইএ এর এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে সরকারের আইসিটি মন্ত্রণালয়। এ বিষয়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের তথ্য ও জনসংযোগ কর্মকর্তা শহিদুল আলম মজুমদার জানান, তৈরি পোশাক শিল্প খাতের কর্মীদের জন্য মোবাইল ফিনানশিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) সুবিধা প্রদানে ‘ডিজিটাল ওয়ালেট’ বা ই-ওয়ালেট চালু করতে বিজিএমইএ এর সাথে সমঝোতা চুক্তি করতে যাচ্ছে বিভাগটি। বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টায় উত্তরায় অবস্থিত বিজিএমইএ কমপ্লেক্সে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের উপস্থিতিতে চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠিত হবে।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ এবং বিজিএমইএ উভয়েই আশা করছে, পোশাক শ্রমিকদের ডিজিটাল ‘ই-ওয়ালেট’ প্ল্যাটফর্মে সম্পৃক্ত করা গেলে একদিকে যেমন ভোগান্তি কমে স্বচ্ছতা নিশ্চিত হবে, অন্যদিকে সরকারের ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ শ্লোগান বাস্তবায়নেও নতুন মাত্রা যোগ হবে।

সংশ্লিণ্ট সূত্রে জানা গেছে, পৃথিবীব্যাপী মোবাইল ফোন বৃদ্ধির সাথে সাথে বাড়ছে মোবাইল ফোনভিত্তিক গ্রাহক সেবা। জীবনযাত্রায় আর্থিক লেনদেন যেহেতু বড় রকমের ভূমিকা পালন করে, সেহেতু বর্তমানে বিভিন্ন ব্যাংকিং কোম্পানি তাদের সেবাগুলোকে মোবাইল ফোন নির্ভর করে তুলছে। অন্যদিকে ই-কমার্স, ই-সেবা ভিত্তিক কোম্পানিগুলোর সাথে লেনদেন সংক্রান্ত জটিলতাগুলোকে সহজ করতে মোবাইল ফোন নির্ভর সেবার দিকে মনোযোগ দিচ্ছে বড় বড় টেক জায়ান্টগুলো। এমন একটি সেবাই ‘ডিজিটাল ওয়ালেট’ বা ‘ই-ওয়ালেট’ নামে পরিচিত।

ডিজিটাল ওয়ালেট মূলত দুই ধরনের হয়। ক্লায়েন্ট-সাইড ওয়ালেট ও সার্ভার-সাইড ওয়ালেট। এই দুটি ক্যাটাগরির ওপর নির্ভর করেই ওয়ালেট সেবাগুলো অফলাইন নাকি অনলাইন, কিংবা ব্যবহারকারীর নাকি কোনো কোম্পানির নিয়ন্ত্রণাধীন হবে তা নিশ্চিত করে।

 

ই-ওয়ালেট সেবায় পণ্যের মূল পরিশোধসহ রয়েছে অনেক কিছুই

 

ক্লায়েন্ট-সাইড ওয়ালেট সাধারণত ব্যবহারকারীর নিয়ন্ত্রণাধীন। ব্যবহারকারীকে ব্যক্তিগত স্মার্টফোন বা কম্পিউটারে একটি অ্যাপলিকেশন ইনস্টল করতে হয় এবং পেমেন্ট সংক্রান্ত তথ্যাদি ইনপুট দেওয়ার পাশাপাশি কোনো সেবা বা পণ্যের মূল্য পরিশোধের জন্য ব্যক্তিগত ব্যাংক অ্যাকাউন্টের সাথে সংযুক্ত করে অথবা অন্য কোনোভাবে টাকা রিচার্জ করে অ্যাপ্লিকেশনটিকে সচল করতে হয়।

প্রযুক্তিবিদরা বলছেন, বর্তমানে, ডিজিটাল ওয়ালেট প্রযুক্তির দ্বিতীয় প্রজন্ম চলছে। উন্নত বিশ্বে এই প্রযুক্তি নিয়ে নানান উদ্ভাবনী কাজ হওয়ার পাশাপাশি তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতেও বিভিন্ন ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানের পৃষ্ঠপোষকতায় সীমিত সেবামূলক ডিজিটাল ওয়ালেট ব্যবস্থা চালু হচ্ছে।

বাংলাদেশেও বিকাশ, রকেট, ইউক্যাশ, এমক্যাশের মতো মোবাইল ব্যাংকিং সেবাগুলোও ই-ওয়ালেট সেবার মান বৃদ্ধি করছে। নামি দামি, বৃহৎ পণ্য বিক্রয় প্রতিষ্ঠানগুলোর পাশাপাশি স্বতন্ত্র মালিকানাধীন ছোট ছোট প্রতিষ্ঠানগুলোও ভোক্তাদের সাথে লেনদেনে এসব সেবা ব্যবহার করছে।

বিজিএমইএ সূত্র আরো জানায়, এরই মধ্যে ই-ওয়ালেট বা এমএফএস সার্ভিস চালু করার জন্য মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি বিকাশসহ মোবাইল অপারেটরগুলোর সাথে যোগাযোগ করছে সংগঠনটি। এমনকি সংগঠনের পরিচালনা পর্ষদের পাশাপাশি বিভিন্ন কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময়ের মাধ্যমে এ বিষয়ে মতামত গ্রহণ করা হয়েছে। এরই মধ্যে একটি কর্মপরিকল্পনাও চূড়ান্ত করা হয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে আশা করা হচ্ছে- দ্রুততম সময়ে প্রক্রিয়াটি বাস্তবায়ন করতে চায় বিজিএমইএ।

সার্বিক বিষয়ে বিজিএমইএ’র সভাপতি রুবানা হক বলেন, দেশের অর্থনীতিতে পোশাক খাতের অবদান অন্যতম। এ খাতের দেশের বৃহৎ একটি জনগোষ্ঠী সম্পৃক্ত। দেশ যখন ডিজিটালের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, তাহলে এই বৃহৎ অংশ তো বাইরে থাকতে পারে না।

তিনি বলেন, সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, আমরা চাই বিপুলসংখ্যক পোশাককর্মীকে একটি সুনির্দিষ্ট কাঠামোর আওতায় আনতে। যাতে একদিকে তাদের মধ্যে বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়ে, এবং উৎপাদনশীলতায় গতি আসে।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৭ জুন ২০১৯/হাসান/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়