ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

পাকিস্তানের নির্লজ্জ মিথ্যাচার ও আমাদের ন্যায্য পাওনা

হাসান মাহামুদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:৫১, ১৭ ডিসেম্বর ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
পাকিস্তানের নির্লজ্জ মিথ্যাচার ও আমাদের ন্যায্য পাওনা

পাকসেনাদের নির্মমতার শিকার বাংলার এই নারী

হাসান মাহামুদ : একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশিদের উপর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নৃশংসতার  বিষয়টি প্রতিষ্ঠিত সত্য। তার অসংখ্য তথ্যপ্রমাণ বিশ্বের বিভিন্ন গণমাধ্যমে সে সময় প্রকাশিত হয়েছে। শুধু তাই নয়, এর বিরুদ্ধে দালিলিক কাগজপত্র বাংলাদেশ তো বটেই এর বাইরে অনেক দেশেই সংরক্ষিত  রয়েছে।

 

বাংলাদেশের বুকে লাখ লাখ শহীদের সহস্রাধিক গণকবর, জীবিত মুক্তিযোদ্ধাদের শিউরে ওঠা জবানবন্দি এবং নারীদের উপর ইতিহাসের সবচেয়ে ঘৃণিত নির্মম-নির্যাতনের চিত্র আজ  সভ্য মানুষের কাছে কুৎসিত, বীভৎস কর্মকাণ্ডের সাক্ষ্য দিচ্ছে। এখনও সে সময়কার সাংবাদিক যাঁরা সবকিছু প্রত্যক্ষ করেছেন বা নিজ দেশে বসে বাংলাদেশের পক্ষে জনমত সৃষ্টি করেছেন বিভিন্ন সময় প্রকাশিত তাদের সাক্ষাৎকারে পাকিস্তানের কুকর্মের স্পষ্ট চিত্র পাওয়া যায়। এমনকি পাকিস্তানের সুশীল সমাজ এখনো নিজ দেশকে ধিক্কার দেয় একাত্তরে তাদের সেনাবাহিনীর নির্যাতনের জন্য।

 

যে সেনাবাহিনীর মাধ্যমে বাঙালির উপর অত্যাচার চালানো হয়েছিল, তাদেরই একজন  ব্রিগেডিয়ার সিদ্দিক সালিক তার ‘ম্যায়নে ঢাকা ডুবতি দেখা’ বইতে তুলে ধরেছেন- বাঙালিদের ওপর কি পরিমাণ নির্যাতন চালিয়েছে পাকিস্তান। এ সবই আকাশে সূর্য ওঠার মতো চিরন্তন সত্য। অথচ সহস্র দালিলিক প্রমাণের পরও পাকিস্তান ক্রমাগত মিথ্যাচার করে যাচ্ছে আমাদের স্বাধীনতা নিয়ে, আমাদের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে।যদিও  তাদের মিথ্যাচারে আমরা বিস্মিত নই। আমরা বিস্মিত হই নির্লজ্জতার মাত্রা দেখে।

 

গতকাল ১৬ ডিসেম্বর পুরো জাতি যখন ‘বিজয়ের ৪৫ বছর’ উদযাপন করছে, তখন পাকিস্তানের ডিফেন্স বিভাগ নতুন মিথ্যাচারে লিপ্ত হয়েছে। মিথ্যা এবং আপত্তিকর তথ্য দিয়ে একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে তারা। ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে প্রকাশ করা হয়েছে পাকিস্তান ডিফেন্সের পেজে। ভিডিওটি তাদের প্রতিরক্ষা সংস্থা স্পন্সর করে বাংলাদেশে ব্যাপকভাবে প্রচারেরও চেষ্টা করছে।বাড়তি প্রচারণা যাতে না হয় সে কারণে ভিডিও’র লিংক এ নিবন্ধে উল্লেখ করা হলো না।

 

উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং বিতর্কিত এই ভিডিওর মূল বক্তব্য হলো, মুক্তিযুদ্ধ ভারত এবং রাশিয়ার যোগসাজশে একটা ষড়যন্ত্রের চেয়ে বেশি কিছু না। ভিডিওতে পাকিস্তান দাবি করেছে, ‘১৯৭১ সালে বাংলাদেশে ৩০ লাখ বাঙালি মারা যায়নি, যারা মারা গিয়েছিলো তাদের ৯০ শতাংশই বিহারি এবং পাকিস্তানি’।

 

পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণের ৪৬তম বার্ষিকীতে যখন বাংলাদেশে আনন্দের বন্যা বইছে, তখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পাকিস্তান ভিডিওটিতে মুক্তিযুদ্ধের নয় মাসে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসরদের চালানো নির্মম গণহত্যার পুরোটাই অস্বীকার করেছে। মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ মানুষ শহীদ হয়নি বলে দাবি করেছে তারা। যুদ্ধের পর পরাজয়ের তদন্ত করতে গঠন করা হামিদুর রহমান তদন্ত কমিশন। সেই কমিশনের প্রতিবেদনে পাকিস্তানি সেনারা ১০ থেকে ১৫ লাখ মানুষকে হত্যার কথা স্বীকার করলেও এই ভিডিওতে দাবি করা হয়েছে এই সংখ্যাটা নগণ্য।ভিডিওতে আরো দাবি করা হয়, মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা আসলে ছিলো ৫০ হাজার এবং তাদেরকে সামনে রেখে শুরু থেকেই ভারতীয় সেনাবাহিনী মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়।

 

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ভারী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে বাঙালিদের ওপর ঝাপিয়ে পড়ে। খুনে মনোভাব নিয়ে তারা হামলে পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। নির্মম হত্যাকাণ্ডে ছারখার করে দেওয়ার চেষ্টা করে বাঙালির নিজ দেশের স্বপ্ন। অথচ পাকিস্তানি প্রতিরক্ষা বাহিনীর ভিডিওতে দাবি করা হয়েছে, ১৯৭১ সালের মার্চে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছুটি হয়ে গিয়েছিল। তাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো ছাত্র মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়নি। মূলত ছাত্রের ছদ্মবেশ নিয়ে ভারতীয় সেনাসদস্যরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিল এবং তারাই পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিল ১৯৭১ সালে।

 

‘দি ফরগটেন চ্যাপ্টার- স্টোরি অব ইস্ট পাকিস্তান’ শিরোনামের সাত মিনিটের ভিডিওতে ড. জুনাইদ আহমেদ নামক এক পাকিস্তানি লেখকের ‘ক্রিয়েশন অব বাংলাদেশ : এক্সপ্লোডিং মিথস’ এর উপর ভিত্তি করে ভিডিওটি তৈরি করা হয়। এই ভিডিওতে জুনাইদ আহমেদসহ কয়েকজন পাকিস্তানির বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা মূলত ভারত এবং রাশিয়ার ষড়যন্ত্রের ফলাফল। কয়েক লাখ নয়, মাত্র কয়েক হাজার লোক সেসময় বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতের শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেয়।জুনায়েদ আহমেদ আরো দাবি করেন, মুক্তিযুদ্ধে যারা মারা গিয়েছিলো তারা আসলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী এবং এরা সবাই ছিলো দুষ্কৃতিকারী। তারা পাকিস্তানি সেনাদের উপর গুলি চালায় বলেই পাকিস্তানি সেনারা তাদের মেরে ফেলেছিলো।

 

পাঠকের নিশ্চয়ই মনে আছে, কয়েক মাস আগে ঢাকায় পাকিস্তান দূতাবাসের কূটনীতিক ফারিনা আরশাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশে বসে জঙ্গি সম্পৃক্ততার অভিযোগ আনা হয়। যে কারণে বাংলাদেশের অনুরোধে তাকে পাকিস্তান ফিরিয়ে নেয়। এর কিছুদিনের মধ্যে ফিরতি প্রতিশোধের নমুনাস্বরূপ পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশের কূটনীতিক মৌসুমী রহমানকে প্রত্যাহার করতে বাংলাদেশকে অনুরোধ জানায় তারা। বাংলাদেশ দুদিনের মধ্যেই মৌসুমী রহমানকে ফিরিয়ে আনে। যদিও বাংলাদেশি কূটনীতিক মৌসুমী রহমানের বিরুদ্ধে পাকিস্তান সরকার কোনো অভিযোগ বা কারণ দাঁড় করাতে পারেনি। শুধুমাত্র মৌখিক অনুরোধ ছিল। সেটি মেনে নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার।

 

একের পর এক  আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের পরও দেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কাজ সম্পন্ন হচ্ছে। অন্যদিকে পাকিস্তানের দিক থেকে আমরা যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে একের পর এক  বিবৃতি, নিন্দা প্রস্তাব দেখতে পাচ্ছি। সম্প্রতি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানি সেনাদের হাতে নির্যাতিত কোরীয় নারীদের ক্ষতিপূরণ দিতে সম্মত হয়েছে জাপান। এর আগে জাপান ১৯৯৩ সালে প্রথম স্বীকার করে যে, এশীয় নারীদের ওপর তাদের সেনারা ঘৃণ্য নিপীড়ন চালিয়েছিল। তার প্রায় সাত দশক পর এবার তারা ক্ষমা প্রার্থনা করে। সেই যুদ্ধে নির্যাতিত ‘কমফোর্ট উইমেন’ উপাধিপ্রাপ্ত নারীদের ১০০ কোটি ইয়েন (৮৩ লাখ ডলার) ক্ষতিপূরণ দিতে রাজি হয় জাপান। এখন ভাবুন তো, পাকিস্তানের বেলায় কোথায় রয়েছি আমরা?

 

গত মাসে পাকিস্তানের একটি সংবাদমাধ্যম খবর প্রকাশ করে, বাংলাদেশের কাছে নাকি প্রায় ৭০০ কোটি টাকা পাওনা আছে পাকিস্তানের।  যদিও এটি তাদের আভ্যন্তরীণ বিষয়। যে কোনো বিষয়ে যে কেউ বা যে কোনো দেশ সম্পত্তি বা পাওনায় বিষয় হিসাব করতে পারে।কিন্তু আপত্তি হচ্ছে, বাংলাদেশকে ট্যাগ করে প্রকাশিত সংবাদটি কী ইঙ্গিত করে? অথচ আমরা যদি হিসাব করি, তাহলে উল্টো তাদের কাছে আমাদের পাওনার পরিমাণ পাহাড়সম হবে। এই পাওনার হিসাব আমাদের করতে হবে কয়েকটি খাতে। প্রথমেই ধরে নেই প্রত্যক্ষ পাওনার বিষয়টি। ১৯৭৪ সালের এপ্রিল মাসে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জুলফিকার আলী ভুট্টো ঢাকায় এলে বঙ্গবন্ধু সরকার তার কাছে চারশ কোটি ডলার ন্যায্য পাওনা দাবি করেন। জুলফিকার আলী কৌশলে বঙ্গবন্ধুর দাবি এড়িয়ে যান। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর, পরবর্তী সরকারগুলোর পক্ষ থেকে পাকিস্তানের সাথে সম্পদ বণ্টনের বিষয়টি নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।

 

পাকিস্তান আমলে ডলারের মান ছিল এক টাকার বিপরীতে আট ডলার। সে হিসাবে বাংলাদেশ পাকিস্তানের কাছে পায় চার হাজার কোটি ডলার যা তখনকার টাকায় ছিল ৩২ হাজার কোটি টাকা। সুদ না ধরলেও ডলারের বর্তমান বিনিময় হারে তা প্রায় তিন লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা। সুদ ধরলে সেটি আরও  কয়েক গুণ হয়। এবার আসুন যুদ্ধের বিষয়ে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণের পদ্ধতি নিয়ে ভাবি। মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীর ধ্বংসযজ্ঞ ও লুটপাট এবং ৩০ লাখ মানুষ হত্যা ইত্যাদি মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং সংশ্লিষ্ট ক্ষয়-ক্ষতি হিসাব করে অর্থনীতিবিদরা দেখেছেন, যুদ্ধের নয়মাস সরকারি ও বেসরকারি খাতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ  ১২৪৯ কোটি টাকা বা ১.২ বিলিয়ন ডলার।

 

১৯৭০ সালের ঘূর্ণিঝড়ের পর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের জন্য সহায়তা হিসেবে বিভিন্ন দেশ ২০ কোটি ডলার পাঠায়।  সেই অর্থ পায়নি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ। এই বিপুল পরিমাণ অর্থ আমরা এখনো তাদের কাছে পাওনা। পাকিস্তান আমলের ২৪ বছর বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার আগ  পর্যন্ত পশ্চিম পাকিস্তানিরা এখন থেকে রপ্তানি খাত থেকে হওয়া আয়ের প্রায় পুরোটাই পাচার করেছে। এদেশের কৃষক- শ্রমিকের খাজনার টাকা নিয়েছে পশ্চিম পাকিস্তান। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের টাকায় গড়ে উঠেছে করাচি, লাহোর, ইসলামাবাদ আর রাওয়ালপিন্ডির আধুনিক ভবন আর রাস্তাঘাট।এই হিসাবটি আন্তর্জাতিক আদালতে দিতে পারি আমরা।

 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী চারটি নীতি অনুসারে বাংলাদেশের দাবি সম্পূর্ণই যৌক্তিক। জনসংখ্যা নীতিরভিত্তিতে বাংলাদেশ ৫৬ শতাংশ সম্পদ দাবি করতে পারে। সমতার নীতিতে বাংলাদেশ ৫০ শতাংশ দাবি করতে পারে। বৈদেশিক মুদ্রানীতির ভিত্তিতে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান কর্তৃক অর্জিত মোট বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের ভিত্তিতে ৫৪ শতাংশ সম্পদের দাবি করতে পারে। এছাড়া সমগ্র দেশের সম্পদের অনুপাতের নীতির ভিত্তিতে বাংলাদেশ ৪৪ শতাংশ সম্পদ দাবি করতে পারে।

 

আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, কোনো দেশ বিভক্ত হয়ে পড়লে বা স্বাধীন হলে দেশটির স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তিও বণ্টন হয়ে থাকে। কিন্তু তৎকালীন পাকিস্তানের সম্পদের একটি অংশ বাংলাদেশের প্রাপ্য হলেও স্বাধীনতার ৪৫ বছর অতিবাহিত হওয়ার পরও কোনো সম্পদ পাকিস্তানের কাছ থেকে বাংলাদেশ এখনো পায়নি।পাকিস্তান শাসনামলে যেখানে জনসংখ্যার ভিত্তিতে প্রাপ্ত বৈদেশিক সাহায্যের ৫৬ শতাংশ কিংবা সমবণ্টনের ভিত্তিতে ৫০ শতাংশ ঋণ পূর্ব পাকিস্তানের প্রাপ্য ছিল, সেখানে পাকিস্তান ৭৬৪০ মিলিয়ন ডলার মূল্যের বৈদেশিক ঋণের প্রতিশ্রুতি পেলেও পূর্ব পাকিস্তান পেয়েছে মাত্র ২০২৪ মিলিয়ন ডলার বা ২৬.৬ শতাংশ। ঋণের ৬৪৩৯ মিলিয়ন ডলার কাজে লাগানো হয় এবং বাংলাদেশ পায় ১৯৪১ মিলিয়ন ডলার বা ৩০ শতাংশ।

 

পাকিস্তানের অধীনে পূর্ব পাকিস্তান রপ্তানির মোট আয়  করেছিল প্রায় ৫৪.৭ শতাংশ বা ২৫,৫৫৯ মিলিয়ন টাকা বা ৫,৩৭০ মিলিয়ন ডলার। এখানে পশ্চিম পাকিস্তানের আয়  ছিল ২১,১৩৭ মিলিয়ন টাকা বা ৪,৪৪০ মিলিয়ন ডলার। ৪৬,৬৯৬ মিলিয়ন টাকার মোট রপ্তানি আয়ের মধ্যে পূর্ব পাকিস্তানের আমদানির জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে মাত্র ২০,০৬৭ মিলিয়ন টাকা। অর্থাৎ ৪,২২৬ মিলিয়ন ডলার যেখানে পশ্চিম পাকিস্তান পেয়েছে ৯,৩১২ মিলিয়ন ডলার। পূর্ব পাকিস্তানের রপ্তানি আয়ের উদ্বৃত্ত ৪৪২২ কোটি টাকা পশ্চিম পাকিস্তানের জন্য ব্যায় করা হয়। পাকিস্তান আমলে নেওয়া ঋণের মধ্যে বাংলাদেশ ১৯৭৮ সালের মধ্যে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে সমাপ্ত প্রকল্পের মোট ৫০৬.৭৬১ মিলিয়ন ডলারের মধ্যে ১৩.৪৮৫ মিলিয়ন ডলারের দায় গ্রহণ করে।

 

এ ছাড়াও সেসময় চলমান প্রকল্পের ১৪৫.৮৬ মিলিয়ন ডলারের মধ্যে ১৩৬.১২১ মিলিয়ন ডলারের দায়ও বাংলাদেশ গ্রহণ করে। তৎকালীন, পূর্ব পাকিস্তানের অর্থনীতির নিয়ন্ত্রক যেসকল পাকিস্তানি ছিল তারা যুদ্ধের সময় এবং স্বাধীনতার পূর্ব মুহূর্তে তাদের সম্পত্তি রেখেই বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে যায়। এই পাওনাও পাকিস্তানকে শোধ করতে হবে।

 

এবার আসি তাদের জাতিগত অপকর্মের বিষয়ে। ৩০ লাখ মানুষকে হত্যা করার বিষয়টি ‘আন্তর্জাতিক গণহত্যা আইন-এ বিচারের দাবি আমাদের সবসময়ের।আর একাত্তরে পাকিস্তানি সেনাদের চালানো নারী নিপীড়নের ঘটনাগুলোর জন্য দেশটিকে কখনও ক্ষমা করা যায় না। ইতিহাস বলে, এ পর্যন্ত কোনো যুদ্ধে বিপক্ষ শক্তির দ্বারা কোনো দেশের নারীদের এত নির্মম নির্যাতন করা হয়নি। সুতরাং পাকিস্তানতে ক্ষমা চাইতেই হবে। সেটাই হোক আমাদের রাষ্ট্রীয় অঙ্গীকার। পাশাপাশি পাকিস্তানের অব্যাহত নির্লজ্জ মিথ্যাচার রুখে দাঁড়ানোর এখনই সময়।

 

আর  ভিডিওটির বিষয়ে আজই   কূটনৈতিক পদক্ষেপ আশা করছি আমরা। অন্যথায় এই নির্লজ্জ জাতি আরো মিথ্যাচার চালিয়ে যাওয়ার দুঃসাহস দেখাবে।

 

লেখক : সাংবাদিক

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৭ ডিসেম্বর ২০১৬/হাসান/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়