ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

তিন খাতে সংস্কার চায় সিপিডি

এম এ রহমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:০৭, ৭ জানুয়ারি ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
তিন খাতে সংস্কার চায় সিপিডি

নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশের ব্যাংকিং, রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ এবং স্থানীয় সরকার বিভাগে সংস্কারের সুপারিশ করেছে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)।

 

বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ তুলে সিপিডি বলেছে, এই তিন খাতের সংস্কার ছাড়া জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাড়ানো সম্ভব হবে না।

 

শনিবার রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে ‘বাংলাদেশ অর্থনীতি ২০১৬-২০১৭’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে সিপিডির ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য্য এসব সুপারিশ তুলে ধরেন।

 

ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য্য বলেন, গত বছর ও চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে ব্যাংকিং খাতে কোনো পরিবর্তন করতে পারেনি সরকার। বিশেষ করে, এ খাতে কুঋণ আরো বেড়েছে। এর মধ্যে সরকারি ব্যাংকগুলোতে কুঋণের পরিমাণ অনেক বেশি। এ ছাড়া দেশে বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়লেও ব্যাংকের অলস টাকার পরিমাণ কিন্তু কমেনি।সুতরাং ব্যাংকিং খাতের বিশৃংঙ্খলা রোধ করতে হলে সংস্কারের কোনো বিকল্প নেই। ব্যাংকিং খাত সংস্কারের জন্য আলাদা ব্যাংকিং কমিশন গঠন করতে হবে। তিন-চার মাসের জন্য এ কমিশন গঠন করা যেতে পারে। কমিশন স্বাধীনভাবে কাজ করে এ খাতের সামগ্রিক অবস্থা ও দুর্নীতির চিত্র সরকারকে জানাবে। সরকার সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। অর্থমন্ত্রীও বাজেটে আলাদা ব্যাংকিং কমিশন গঠনের কথা বলেছিলেন। কিন্তু তিনি কেন এটা বাস্তবায়ন করছেন না তা স্পষ্ট নয়।

 

তিনি আরো বলেন, রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগে বড় ধরনের অনিয়ম হয়। বর্তমানে আমাদের দেশে ১ কিলোমিটার রাস্তা বানাতে যে ব্যয় হয় তা পৃথিবীর মধ্যে সর্বোচ্চ। এত বেশি ব্যয় আর কোনো দেশে হয় না। রাষ্ট্রীয় ব্যয়স্ফীতি সঠিক হারে হচ্ছে কিনা তা এখন দেখা জরুরি হয়ে গেছে। সরকারের উচিত উন্নয়ন ক্ষমতায় নিয়ন্ত্রণ আনা। প্রতিবছর পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় কত টাকা ব্যয় করেছে তার হিসাব দেওয়া। আমি মনে করি, ব্যয় হিসাবের সঙ্গে জনগণ কতটুকু সুফল পেয়েছে ও সামগ্রিক কতটুকু ফল এসেছে, সে হিসাবও দেওয়া উচিত।

 

খ্যাতিমান এ অর্থনীতিবিদ বলেন, টেকসই জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য রপ্তানির পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ বাজারকে গুরুত্ব দিতে হবে। এ ছাড়া রপ্তানিতে তৈরি পোশাক শিল্পের বাইরে অন্যান্য খাত, বিশেষ করে চামড়া, সিরামিক ও হিমায়িত খাদ্য পণ্যকে সামনে নিয়ে আসতে হবে।

 

সিপিডির ফেলো বলেন, হতদরিদ্রদের জন্য ১০ টাকা কেজিতে চাল বিতরণের কর্মসূচিতে নানা অনিয়ম হয়েছে। গড়ে ১১ কেজি চাল কম দেওয়া হয়েছে। সঠিক ব্যক্তি এ সহায়তা পেয়েছেন কি না তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। তিন মাসে প্রতিজন হতদরিদ্র  ৯০ কেজি করে চাল পাওয়ার কথা বলা হলেও বাস্তবে ৭৯ কেজি করে চাল পেয়েছেন তারা। চাল বিতরণে আরো স্বচ্ছতা প্রয়োজন। এই সুবিধা দেশের গার্মেন্টস শ্রমিকদেরও দেওয়ার সুপারিশ করেন দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য্য।  

 

দেবপ্রিয় ভট্টচার্য্য বলেন, মূল্যস্ফীতি স্থিতিশীল আছে বলে সরকার দাবি করলেও খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতি অনেক বেড়েছে।বিশেষ করে, বিদ্যূৎ ও গ্যাস পেতে মানুষের ব্যয় অনেক বেড়েছে। এই মুহূর্তে তেলের দাম কমানো উচিত।

 

তিনি বলেন, অন্যান্য বারের চেয়ে গত অর্থবছরে তুলনামূলক সফল অর্থনৈতিক বছর পার করেছে বাংলাদেশ। তবে এ বছরে কিছু শক্তিশালী ক্ষেত্রে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে, কৃষি পণ্য উৎপাদন, রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় তুলনামূলক কমেছে।

 

বাংলাদেশ-ভারত ট্রানজিট প্রসঙ্গে সিপিডি মনে করে, ফি নির্ধারণ প্রক্রিয়ায় আরো স্বচ্ছতা জরুরি। সব ধরনের অবকাঠামোগত সুবিধা না থাকায় যথাযথ রাজস্ব আদায় হচ্ছে না। যদি সেটা সম্ভব হতো তাহলে ৬ গুণ রাজস্ব আদায় সম্ভব। গত সাত মাসে মাত্র ৮ লাখ ২০ হাজার টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে।

 

সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন- সিপিডির নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান, গবেষণা পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন, অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম প্রমুখ।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/৭ জানুয়ারি ২০১৭/এম এ রহমান/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়