ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

ভাসা ভাসা ভাষা

নাজমুল হুদা ও আরিফ রহমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:০০, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ভাসা ভাসা ভাষা

নাজমুল হুদা ও আরিফ রহমান : ইতিহাস লেখার বিভিন্ন পদ্ধতি আছে। চাইলে সংক্ষেপে সাধারণ জ্ঞানের মত করে লেখা যায় আবার বিস্তৃত করেও লেখা যায়। ইতিহাস পাঠে আমাদের আগ্রহ বরাবরই কম। আর এই কম আগ্রহের কারণেই বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন সম্পর্কে আমরা আম জনতা দুটো লাইনই কেবল জানি। একটা হচ্ছে তমুদ্দিন মজলিশ আরেকটা হচ্ছে একুশে ফেব্রুয়ারি সালাম-বরকত-রফিকদের ওপরে গুলি বর্ষণ।

ঘটনা পরম্পরা আমরা জানতে চাই না। আর আমাদের এই না জানতে চাওয়ার ফাঁক গলে স্বাধীনতা বিরোধীরা ভাষা সৈনিক সেজে বসার সুযোগ পায়। আজ তাই ইতিহাসের অলিতে গলিতে খানিক আলোক বর্ষণ করতে হচ্ছে নিজেদের তাগিদেই।

সত্যি বলতে, শুরুটা ৪৭ এর জুলাই মাসে (জি হ্যা পাঠক, পাকিস্তান নামক রাষ্ট্র গঠিত হবার আগেই)। আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ডঃ জিয়াউদ্দিন আহমদ হিন্দিকে ভারতের রাষ্ট্রভাষা গ্রহণের অনুরূপ পদক্ষেপ হিসেবে ঊর্দুকেও পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে গ্রহণের প্রস্তাব রেখে বক্তব্য পেশ করেন।

আর এর পরেই প্রথম প্রতিবাদটি আসে এবং সবার অবগতির জন্য বলতে হয় কোন প্রতিবাদী ছাত্র নয়, কোন বিপ্লবী নেতা নয় প্রকৃত অর্থেই এই প্রতিবাদ করেন বাংলা ভাষার প্রাণ প্রণেতা ড: মুহম্মদ শহীদুল্লাহ। তিনি এই বক্তব্যের প্রতিবাদ করে ‘পাকিস্তানের ভাষা সমস্যা’ নামে একটি নিবন্ধ প্রকাশ করেন দৈনিক আজাদ পত্রিকায় ১৯৪৭ সালের ২৯ জুলাই। সেখানে তিনি বলেন, ‘বাংলা ভাষাকে বাদ দিয়ে ঊর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করা হলে বাঙালিদের জন্য তা 'রাজনৈতিক পরাধীনতার নামান্তর' হবে। পরে একই প্রবন্ধ তিনি আগস্টের তিন তারিখে ভারতের সাপ্তাহিক পত্রিকা 'কমরেড'-এ ইংরেজীতে প্রকাশের ব্যবস্থা করেন। যেখানে শিরোনাম ছিল ‘The language problem in Pakistan!’

ড: মুহম্মদ শহীদুল্লার এই প্রতিবাদ তৎকালীন পুর্ববাংলার বাঙালি সমাজকে দারুণভাবে উদ্দীপ্ত করে। তাই ড: মুহম্মদ শহীদুল্লাহকে ভাষা আন্দোলনের উৎস পুরুষ বলা হলে খুব ভুল হবে না! অথচ আজ ঠিক কতজন এই সত্য জানেন?

লক্ষ্য করলে দেখা যাবে সেই সময়ে পূর্ব-পাকিস্তানে রাজনৈতিক একটা শুন্যতা ছিল। কারণ, তখন পাকিস্তান মাত্র প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে, শেরে বাংলা একে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, আবুল হাশিম সাহেবের মত নেতারা তখনও পুরোপুরি পূর্ব পাকিস্তানে আসেননি।

সে সময়ে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দানের প্রশ্নে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আবুল কাশেম পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার মাত্র ১৭ দিনের মাথায় ১ সেপ্টেম্বর ১৯৪৭ সালে 'তমুদ্দিন মজলিস' নামক একটি সাংস্কৃতিক সংগঠন গড়ে তোলেন। এই সংগঠনের সাথে যুক্ত ছিলেন অধ্যাপক নুরুল হক ভুইয়া, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, শামসুল আলম, এ কে এম আহসান, কবি মোফাখখারুল ইসলাম, আব্দুল খালেক, ইঞ্জিনিয়ার নুরুল হুদা প্রমুখ। বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে ড: মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, প্রিন্সিপাল ইব্রাহিম খা, আবুল মনসুর আহম্মদ, ড: কাজী মোতাহার হোসেন, কবি ফররুক আহম্মেদ প্রমুখ তমুদ্দিন মজলিশ’কে সাহায্য সহযোগিতা করেন।

প্রথমে ৭ সেপ্টেম্বর ১৯ নম্বর আজিমপুরে একটি কক্ষ নিয়ে ভাষা আন্দোলনের কার্যক্রম শুরু হয়। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দূরে হওয়ায় ১ম নভেম্বরে অফিস বদল করে রশিদ বিল্ডিং এ স্থানান্তর করা হয় যেটি তৎকালীন আমতলা হিসেবে বহুল পরিচিত আর বর্তমানে ঢাকা মেডিক্যালের পূর্ব পাশে অবস্থিত।  ২০ জানুয়ারি এই অফিস একদল সন্ত্রাসী কর্তৃক আক্রান্ত হয়। ফলে অফিস বদল জরুরি হয়ে ওঠে।

তখন মুহাম্মদ তোয়াহা ফজলুল হক হলের ভি পি এবং তমুদ্দিন মজলিশ নেতা। তিনি তমুদ্দিন মজলিসের মুল অফিসটি রশিদ বিল্ডিং থেকে আজিমপুরে আবুল কাসেম সাহেবের বাড়ীতে পুন:স্থানান্তর করেন আর ভাষা আন্দোলনের একটি উপকমিটি গঠন করে সেটাকে ফজলুল হক হলে স্থানান্তর করেন। এর মধ্য দিয়ে ভাষা আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ধীরে ধীরে জড়াতে শুরু করে।

ভাষা আন্দোলনের ঘোষণাপত্র রচিত হয় যার নাম দেয়া হয় ‘পাকিস্তানের রাষ্ট্র ভাষা বাংলা না ঊর্দু।’ ১৯৪৭ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর সকাল ১০টায় এই ঘোষণাপত্র পাঠ করা হয় আজিমপুরে ভাষা আন্দোলন অফিসে। এখানে তিনটি নিবন্ধ স্থান পায়-

১. অধ্যাপক আবুল কাসেমের 'আমাদের প্রস্তাব'

২. কাজী মোতাহার হোসেনের 'রাষ্ট্র ভাষা ও পূর্ব পাকিস্তানের ভাষা সমস্যা'

এবং ৩. আবুল মনসুর আহম্মেদের 'বাংলাই আমাদের রাষ্ট্র ভাষা হবে'!

ফজলুল হক হল অর্থাৎ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক আন্দোলন শুরুর প্রাক্কালে ১৯৪৭ সালে ১৪ নভেম্বর তমুদ্দিন মজলিশ তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিনের কাছে প্রথম স্মারকলিপি দেয়। এরপর ৫ ডিসেম্বর খাজা নাজিমুদ্দিনের সাথে তার বাসায় আবুল কাসেম ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক মিলে বৈঠক করেন। সেই সময় মাওলানা আকরাম খাঁও তমুদ্দিন মজলিশের সাথে একাত্মতা ঘোষণা  করেন। তখন আবু জাফর শামছুদ্দিনও উপস্থিত ছিলেন।

সেই সময়ের একটা ঘটনা উল্লেখ করার মত। ১৯৪৭ সালের ১২ ডিসেম্বর একদল লোক পুলিশ ব্যারাকে হামলা চালায়। তাদের মিছিলে স্লোগান ছিল ...

‘রাষ্ট্র ভাষা ঊর্দু চাই

ঊর্দু ভাষার বিরোধীরা কাফের

এই কাফেরদের শায়েস্তা করতে হবে।’

প্রায় ৪০ জন লোক এই হামলা চালায়। তাদের হামলায় আহত হয় প্রায় ১৭ জন। তার মধ্যে নওয়াব আলী (ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের দারোয়ান) এবং সাইয়েদ আহম্মেদ (১ম বর্ষ)- এর অবস্থা ছিল শোচনীয়। হামলাকারীদের প্রতিরোধে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন তৎকালীন ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ভিপি নুরুল হুদা। তিনি কলেজের ভাইস প্রিন্সিপালের লাইসেন্স করা পিস্তল উঁচিয়ে হামলাকারীদের দিকে এগিয়ে গেলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। এই হামলার প্রতিবাদে ১৩ ডিসেম্বর পূর্ব পাকিস্তানের সকল সরকারি অফিসে ধর্মঘটের ডাক দেয়া হয়। ভাষা নিয়ে সরকারি অফিসে ধর্মঘট এটাই ছিল প্রথম।

১৯৪৮ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি গণপরিষদ সদস্য আইনজীবী ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত বাংলাকে গণপরিষদের অন্যতম ভাষা করার দাবি পেশ করেন। ২৫ ফেব্রুয়ারি প্রস্তাবটি আলোচনায় আসে। তবে স্পিকার সেটাকে নাকচ করে দেন। এর প্রতিবাদে তমুদ্দিন মজলিশ এবং পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ একত্রে ধর্মঘটের ডাক দেয়। ২৯ ফেব্রুয়ারি তারা ধর্মঘট পালন করে। এই ধর্মঘট চলাকালে ছাত্রদের উপর নির্যাতন-নিপীড়নের প্রতিবাদে ১১ মার্চ প্রদেশব্যাপী হরতালের ডাক দেয়া হয়।

একটি বিবৃতি তৈরি করা হয় ১ মার্চে যাতে স্বাক্ষর করেন অধ্যাপক আবুল কাশেম (তমুদ্দিন মজলিশ), শেখ মুজিবুর রহমান (পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম লীগ), নইমুদ্দীন আহম্মদ (পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের আহ্বায়ক) এবং আব্দুর রহমান চৌধুরী (দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় যুব সম্মেলনে পাকিস্তানি প্রতিনিধি দলের সদস্য)। এরপর পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ আর তমুদ্দিন মজলিশ মিলে ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা সংগ্রাম পরিষদ’ গঠন করা হয়। ১১ মার্চকে ‘বাংলা ভাষা দাবি’ দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। রাতে শেখ মুজিব ও তার সঙ্গীরা কাজ ভাগ করে দিলেন সকালে কে কোথায় থাকবেন আর কে কোথায় পিকেটিং করবেন।

১১ মার্চ ভোর বেলায় শতশত ছাত্র-কর্মী ইডেন বিল্ডিং, জেনারেল পোস্ট অফিস ও অন্যান্য জায়গায় পিকেটিং করেন। শামছুল হক সাহেব আগেই ধরা পড়েছেন, কিছুক্ষণ পরে শেখ মুজিবুর রহমানও ধরা পড়েন। আরো ধরা পড়েন অলি আহাদ। কিন্তু তাজউদ্দিন আহম্মেদ আর মোহাম্মদ তোয়াহাকে পুলিশ গ্রেফতার করতে পারে নি!

মুজিবুর রহমান-শামছুল হক সাহেবরা জেলে, পাশেই আছে মুসলিম গার্লস স্কুল। সেখানে ছোট ছোট মেয়েরা মিছিল করে ...

‘রাষ্ট্র ভাষা বাংলা চাই

বন্দি ভাইদের মুক্তি চাই

পুলিশি জুলুম চলবে না’

১৫ মার্চ সবাইকে মুক্তি দেয়া হয়। ১১ মার্চের এই হরতালই ছিলো মায়ের ভাষার দাবিতে প্রথম হরতাল।

১৯ মার্চ আসবেন পাকিস্তান অধিপতি মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ। তার সামনে দাবিগুলো তুলে ধরা হবে- এই আশায় তমুদ্দিন মজলিশের সভাপতি আবুল কাশেমকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করা হয়। সেই প্রতিনিধিদলের সদস্যরা হলেন কামরুদ্দীন আহম্মেদ, নইমুদ্দিন আহম্মেদ, আজিজ আহম্মেদ, শামসুল আলম, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, মোহাম্মাদ তোয়াহা, আব্দুর রহমান চৌধুরী, আব্দুল মতিন খান।

জিন্নাহ সাহেব এলেন, ২১ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে জনসভায় ভাষণ দিলেন। বললেন, ঊর্দুই পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্র ভাষা হবে! ছাত্ররা হাত তুলে জানিয়ে দিলেন ‘মানি না’! ২৪ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে কার্জন হলে জিন্নাহ সাহেব আবারো বললেন ‘Urdu urdu shall be the state language of Pakistan’. তখন ছাত্ররা তার সামনেই হাত উঁচু করে ‘না না না’ বলে চিৎকার করে ওঠেন। জিন্নাহ সাহেব পাঁচ মিনিট চুপ করে থাকতে বাধ্য হন।

ঐ দিনই জিন্নাহ ছাত্র নেতাদের ডাকেন। সেখানে উপস্থিত ছিলেন পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ আর নিখিল পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ। প্রতিনিধি দলে ছিলেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম, শামসুল হক, অলি আহাদ, মূহাম্মদ তোয়াহা, নইমুদ্দিন আহম্মদ, নুরুল হক ভুইয়া, কামরুদ্দিন আহম্মদ, আজিজ আহম্মদ, তাজউদ্দিন আহম্মদ, নুরুল হুদা আর একমাত্র মহিলা ছিলেন লিলি খান। কিন্তু জিন্নাহ’র  একগুয়ে মনোভাব আর একদেশদর্শিতার কারণে আলোচনায় ঐক্যমত হয়নি।

শেখ মুজিবুর রহমান ঐ বৈঠকে প্রতিনিধি দলে ছিলেন না। কিন্তু জিন্নাহ চলে যাওয়ার কয়দিন পর ফজলুল হক হলের সামনে এক ছাত্রনেতা বক্তৃতা দিচ্ছিলেন আর বলছিলেন ‘জিন্নাহ যা বলবেন আমাদের তাই মানতে হবে। তিনি যখন ঊর্দুই রাষ্ট্রভাষা বলেছেন তখন ঊর্দুই হবে।’ পরে শেখ মজিবুর রহমান তার বক্তব্যের বিরোধিতা করে বক্তব্য দিয়ে বলেন ‘কোন নেতা যদি অন্যায় কাজ করতে বলেন, তার প্রতিবাদ করা এবং তাকে বুঝিয়ে বলার অধিকার জনগণের আছে!’ (অসমাপ্ত আত্মজীবনী- পৃষ্ঠা ৯৯/১০০)।

এরপর ২৬ জানুয়ারি ১৯৫২ সাল। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন প্রকাশ্য জনসভায় ঘোষণা করলেন ‘একমাত্র ঊর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্র ভাষা।’

তার এই ঘোষণায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সমাজ বিক্ষোভে ফেটে পড়লেন। পরদিন ২৭ জানুয়ারি ঢাবির কলাভবনের আমতলায় প্রতিবাদ সভার আয়োজন করা হয়। সেখানে ছাত্ররা তীব্র ভাষায় নিন্দা জানায়। এই সভায় হাবিবুর রহমান শেলী সর্বপ্রথম এম এ জিন্নার আটচল্লিশের উক্তি, লিয়াকত আলীর হুশিয়ারি, খাজা নাজিমুদ্দিনের বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করলেন।

উল্লেখ্য, তখন বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকার সমর্থিত নিখিল পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ আর সরকারবিরোধী পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ ছাড়া অন্য কোন ছাত্র সংগঠনের অস্তিত্ব ছিল না। তখনো পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের জন্ম হয়নি। তবে ৫২ সালের ভাষা আন্দোলন গড়ে তোলার পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান অধুনালুপ্ত পূর্ব পাকিস্তান যুব লীগ (এরা খানিক বাম ঘেষা; অলি আহাদ তখন এই দলের নেতা) এবং পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সমাজ রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য কমরেড আব্দুল মতিনকে আহ্বায়ক করে একটা সংগ্রাম পরিষদ গঠন করে। ফলে পূর্ব পাকিস্তান যুবলীগ, পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ আর সর্বদলীয় ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের মিলিত শক্তি ভাষার জন্য আন্দোলনকে আরো সামনে এগিয়ে নিয়ে যায়। এদেরই ডাকে ৩০ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র ধর্মঘট ও প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন ময়মনসিংহের খালেক নেওয়াজ খান। আবারো পূর্ব বাংলা উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। শেখ মুজিব তখন বিনা বিচারে জেলে।

মাওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা কর্মপরিষদ গঠন :

১৯৫২ এর ৩১ জানুয়ারি ঢাকায় বার লাইব্রেরিতে তৎকালীন বিরোধী রাজনৈতিক নেতাদের এক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এই সম্মেলন আহ্বান করেন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মাওলানা হামিদ খান ভাসানী। এ ছাড়াও ঐ সম্মেলনে আবুল হাশিম সাহেবের ‘খেলাফত রাব্বানী পার্টি’, তমুদ্দিন মজলিশ, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ, পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ আর পূর্ব পাকিস্তান যুবলীগের নেতারাও উপস্থিত ছিলেন। আলোচনা শেষে ভাসানীকে চেয়ারম্যান আর আওয়ামী লীগের গোলাম মাহবুবকে আহ্বায়ক করে 'সর্ব দলীয় রাষ্ট্রভাষা কর্ম পরিষদ' গঠিত হয়।

২১ ফেব্রুয়ারি পূর্ববঙ্গ ব্যবস্থাপক পরিষদের বাজেট অধিবেষন শুরু হবে। তাই ভাসানী ২১ তারিখকে 'ভাষা দিবস' ঘোষণা করলেন আর নির্দেশ দিলেন প্রস্তুতি গ্রহণ করার! মুজিব তখন জেলে।

৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৫২ : (গাজীউল হকের স্মৃতিচারণ) সভাস্থলে চেয়ার এসে পৌঁছানোর আগেই টেবিলের উপর লাফিয়ে  উঠে এমআর আক্তার মুকুল সভাপতি হিসেবে আমার নাম প্রস্তাব করেছিলেন। তিনি যখন সভাপতির নাম প্রস্তাব করছেন তার মতলব বুঝে সৈয়দ নুরুল আলম, মুকুলের প্যান্ট ধরে টেনে নামানোর চেষ্টা করেন। এই টানা হেচড়ায় মুকুলের প্যান্টের কয়েকটি বোতামই ছিড়ে যায়। এরপর ছয় ফুট লম্বা কমরুদ্দিন শহুদ আঙুলের উপরে ভর দিয়ে উঁচু হয়ে হেরে গলায় আমার নাম প্রস্তাবকে সমর্থন করেন। মুকুল টেবিল থেকে নেমে পড়ার সাথে সাথে আমি সভাপতির আসন নিলাম। সেদিন প্রায় দশ হাজার ছাত্র-ছাত্রী সেখানে উপস্থিত হয়, মিছিল করে ঢাকা নগরী প্রদক্ষিণ করে। প্রদেশব্যাপী ২১ ফেব্রুয়ারি ধর্মঘটকে সফল করার আহবান জানানো হয়!’

১৮ ফেব্রুয়ারি: ভোরে জেলখানা থেকে একটি গোপন চিঠি বেরিয়ে আসে। চিঠির লেখক শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি ২৭ মাস বিনা বিচারে বন্দি। তাকে অলি আহাদ, মো: তোয়াহা জানিয়ে এসেছেন ২১ তারিখে মাওলানা সাহেব 'ভাষা দিবস' ঘোষণা করে সাধারন ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন। চিঠিতে জানানো হয়, মুজিবুর রহমান এবং মহিউদ্দিন সাহেব অনশন শুরু করেছেন। ঐ চিঠিতে মুজিবুর রহমান ভাষা আন্দোলনের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করেছিলেন।

২০ ফেব্রুয়ারি: বিকেল ৩টার দিকে মধুর ক্যান্টিনে গাজিউল হকেরা মিটিং করছিলেন আর স্বেচ্ছাসেবকদের তালিকা তৈরি করছিলেন। এমন সময় মাইকে ঘোষণা আসে ২১ ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা জারী থাকবে, কোন প্রকার মিছিল-মিটিং বন্ধ। সাথে সাথেই ছাত্ররা ক্ষোভে ফেটে পড়ে।

২০ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা: সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে জনাব ফকির শাহাবুদ্দিন আহমদের (পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগ নেতা, বাংলাদেশের প্রথম এডভোকেট জেনারেল) সভাপতিত্বে একটি সভা হয়। সভায় সিদ্ধান্ত হয় ‘১৪৪ ধারা মানা হবে না।’ ঠিক একইভাবে ফজলুল হক হলেও একটি মিটিং হয় আব্দুল মোমিনের (পরবর্তিতে আওয়ামী লীগের খাদ্যমন্ত্রী) নেতৃত্বে। ফজলুল হক হলের তখন ভিপি ছিলেন শামসুল আলম এবং জি এস আনোয়ারুল হক খান (পরে তিনি বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয়ের প্রথম সচিব)। এই সভাতেও সিদ্ধান্ত হয় ‘১৪৪ ধারা মেনে নেয়া চলবে না।’

২০ তারিখ সন্ধ্যার পর: নবাবপুরে আওয়ামী মুসলিম লীগ অফিসে মিটিং। সভাপতি আবুল হাশিম, অলি আহাদ, মেডিক্যাল কলেজের ভিপি গোলাম মওলা, আব্দুল মতিন এতে ১৪৪ ধারা ভাঙার ব্যাপারে জোরালো বক্তব্য রাখেন। তাদেরকে সমর্থন করেন ফজলুল হক মুসলিম হল ইউনিয়নের ভিপি শামসুল আলম। মোহাম্মদ তোয়াহা ১৪৪ ধারা ভঙ্গের ব্যাপারে বক্তব্য দেন কিন্তু ভোটাভুটির সময় তিনি ভোট দানে বিরত থাকেন। ফলে 'সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা কর্ম পরিষদ' ১১-৪ ভোটে সিদ্ধান্ত নেয় ১৪৪ ধারা না ভাঙার পক্ষে। এরপর অলি আহাদ তীব্র কণ্ঠে বলেন 'এ সিদ্ধান্ত আমরা মানি না এবং আগামীকাল বিশ্ববিদ্যালয়ে যে ছাত্র সভা হবে সে সভায় ১৪৪ ধারা ভাঙার পক্ষে যদি রায় হয় তবে আমরা ভাঙার পক্ষে।

অলি আহাদের বক্তব্যের জবাবে আবুল হাশিম রাগতঃস্বরে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রসভা হবে সে সভায় সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা কর্ম পরিষদের পক্ষে শামসুল হক (আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রথম সা: সম্পাদক) কর্মপরিষদের সিদ্ধান্ত  ছাত্রদের জানিয়ে দেবেন এবং বক্তব্য পেশ করবেন। যদি তারপরও ছাত্ররা ১৪৪ ধারা ভাঙে তবে স্বাভাবিকভাবে ‘সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা কর্মপরিষদের বিলুপ্তি ঘটবে!’ আবুল হাশিমের এই বক্তব্য প্রস্তাবাকারে গৃহীত হয়।

২০ ফেব্রুয়ারি গভীর রাত: ঢাকা হলের পূর্ব পাশের সিড়িতে খুব গোপন একটা বৈঠক হবে। এখানে এসেছিলেন এমন কিছু তরুণ যারা সর্বদলীয় কর্মপরিষদের সদস্য নন কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে খুব প্রভাবশালী। এরা হাশিম সাহেবের নির্দেশ মানতে নারাজ। এদের কেউ কেউ আবার আগেই ফজলুল হক হলের কামরায় বসে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ১৪৪ ধারা ভাঙা হবে আর ২১ ফেব্রুয়ারি হরতাল পালন করা হবে। রাত ১২টার পর আস্তে আস্তে পুকুর পাড়ে তারা চলে এলেন...

গাজীউল হক

হাবিবুর রহমান শেলী

মোহাম্মদ সুলতান

এম আর আক্তার মুকুল

জিল্লুর রহমান

আব্দুল মোমিন

এস এ বারী এটি

সৈয়দ কমরুদ্দীন শহুদ

আনোয়ারুল হক খান

মঞ্জুর হোসেন

আনোয়ার হোসেন

সভায় সিদ্ধান্ত হল ২১ তারিখের মিটিংয়ে  সভাপতিত্ব করবেন গাজীউল হক। তিনি  গ্রেফতার হলে সভাপতিত্ব করবেন এম আর আক্তার মুকুল। মুকুল যদি গ্রেফতার হন  সভাপতিত্ব করবেন কমরুদ্দিন শহুদ। সভায় আরো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। পরদিনের সভায় প্রথমে বক্তৃতা দেবেন শামসুল হক, তারপর বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম কমিটির আব্দুল মতিন বক্তৃতা দেবেন ১৪৪ ধারা না ভাঙার  পক্ষে। এরপর সভাপতি হিসেবে গাজীউল হক বক্তৃতা দেবেন ১৪৪ ধারা ভাঙার পক্ষে। মিটিং শেষে সবাই চলে যাওয়ার পর স্বল্পভাষী মোমেন  বললেন মুকুলকে, ‘কাল সকালে ভার্সিটিতে গেলে চলবে না, তুমি খুব ভোরে গোপনে ভার্সিটিতে যাবে।’

২১ ফেব্রুয়ারি :

সকাল সাড়ে আটটা :

শহরতলী (কামরাঙ্গীরচর/টংগী) থেকে মিছিল আসতে থাকে কলা ভবনের দিকে।

সকাল সাড়ে নয়টা :

আশপাশের কলেজ থেকে মিছিল আসতে থাকে। বিশেষত ঢাকা মেডিক্যালের মিছিল ছিল সবচে বড়। ইডেন কলেজ থেকে মেয়েদের একটা মিছিল আসে।

সকাল সাড়ে দশটা :

ঢাবি আর আশপাশ ভরে যায় মিছিলে স্লোগানে- ‘১৪৪ ধারা মানি না, রাষ্ট্র ভাষা বাংলা চাই।’ পুলিশ কিংকর্তব্যবিমুঢ়, কি করবে ভেবে পায় না, ওরা অপেক্ষায় নাজিমুদ্দিন কি বলে।’

সকাল এগারোটা : কালো শেরোয়ানী আর জিন্নাহ টুপি পরিহিত শামসুল হক সাহেব আসলেন আর তিনি বললেন, ‘আমরা আন্দোলন করব। ১৪৪ ধারা ভাঙা যাবে না, শান্ত-শিষ্ট মিছিল হবে!’

একজন বলে উঠল- ‘ট্রেইটর!’

ছেলেটির নাম হাসান হাফিজুর রহমান (পরবর্তী সময়ে প্রথিতযশা কবি)। সে শামসুল হক সাহেবের টুপি নিয়ে ছুড়ে ফেলে দিলেন আর বললেন ‘You have no right to speak, get out!’

গেট দিয়ে বেরিয়ে গেল মধ্যরাতের সেই আশ্বারোহীরা।

প্রথম মিছিলের অগ্রভাগে হাবিবুর রহমান শেলী, তার সাথে দশ জন।

২য় দলের নেতা আব্দুস সামাদ আজাদ, তার সাথে দশজন।

৩য় দলের কাণ্ডারী আনোয়ারুল হক খান আর আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ, তাদের পেছনে দশজন।..... এভাবে প্রত্যেকের পেছনে দশজন করে।

এটাই সেই বিখ্যাত 'দশজনি' মিছিল আর তার উদ্যোক্তা হাবিবুর রহমান শেলী।

বিশ্ববিদ্যালয় মিছিলে মিছিলে প্রকম্পিত। দাবি একটাই ‘রাষ্ট্র ভাষা বাংলা চাই।’

১৪৪ ধারা ভেঙে ফেললো ছাত্ররা, সাধারন ছাত্ররা। পুলিশ ঝাঁপিয়ে পড়লো। ছাত্ররা শুরু করলো ইট নিক্ষেপ। কাঁদানে গ্যাসের শেল এসে লাগলো গাজীউল হকের সরাসরি বুকে। তাকে এম আর আক্তার মুকুল আর জুলমত আলী খান (পরবর্তিতে বি এন পি নেতা) নিয়ে রেখে  এলেন মেয়েদের কমন রুমে।

বেলা তিনটা দশ : পুলিশ লাঠিপেটা করে আর কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে ছাত্রদের থামাতে পারেনি। সকাল থেকেই ধাওয়া-পালটা ধাওয়া। বেলা তিনটা দশে প্রথম গুলি চললো। মেডিক্যাল হোস্টেলের উল্টো দিক থেকে একদল সশস্ত্র পুলিশ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কোরেশীর নির্দেশে দৌড়ে এসে পজিশন নিয়ে 'ওয়ালী ফায়ার' করল।

বরকত ছিলো ঢাবির ছাত্র। সে গুলিতে প্রাণ দেয়। মানিকগঞ্জের ছেলে রফিক এসেছিল ঢাকায় বিয়ে করার সওদা করতে। পুলিশের গুলি তার প্রাণ কেড়ে নেয়। আরো প্রাণ দেন সালাম।

আজকের জগন্নাথ হলটি ছিল সেদিনের পূর্ববঙ্গ  ব্যবস্থাপক পরিষদ। সেদিন রক্তের হোলি খেলার পরপরই বসে অধিবেশন, যদিও অধিবেশন বসতে বেশ খানিক দেরি হয়। কারণ, তেলাওয়াতের পর বিরোধী দলীয় নেতা খয়রাত হোসেন (রংপুর)  গুলিবর্ষন জনিত পরিস্থিতি উল্লেখ করে মুলতবি প্রস্তাব উত্থাপন করলে তুমুল বাদানুবাদের সৃষ্টি  হয়। স্পিকার বারবার এই প্রস্তাব নাকচ করে দেন। এ সময় বিরোধীদলের কংগ্রেসী সদস্যরা ছাড়া মাত্র চারজন মুসলিম লীগ সদস্য ছিলেন। এরা হলেন রংপুরের খয়রাত হোসেন, ঢাকার আনোয়ারা খাতুন, যশোরের শামছুদ্দিন, কুমিল্লার আলী আহম্মদ। আর ছিলেন মুসলিম লীগ পার্লামেন্টারি পার্টির সদস্য (পাবনা থেকে নির্বাচিত) মাওলানা আব্দুর রশিদ তর্কবাগিশ। তার সাথে স্পিকারের তীব্র বাদানুবাদ হয়। সংসদ ১৫ মিনিটের জন্য মুলতবী হয় এবং পরের দিন ২২ ফেব্রুয়ারি তাকে পুলিশ গ্রেফতার করে।

গুলিবর্ষণের ঘটনার পর হাসপাতাল পরিদর্শনে রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে সর্বপ্রথম যে নেতা আসেন তিনি হলেন তদানীন্তন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক। এর পরেই আসেন ঢাবি'র অর্থনীতি বিভাগের তৎকালীন প্রধান ও আদিতে তামিলনাড়ু  নিবাসী ডক্টর  আয়ার এবং ব্যবস্থাপক পরিষদ কক্ষ ত্যাগকারী এম এল এ।

বাঙালি জাতির উৎসমূলে রয়েছে এই বাংলা ভাষা। পাকিস্তানের সূচনালগ্ন থেকেই এই যে জাতিসত্তা আর ভাষা সত্তার বৈপরীত্য নিয়ে এ জাতির আন্দোলন সেটাই বাংলা নামের দেশটাকে স্বাধীনতার দিকে একটু একটু করে এগিয়ে নিয়ে যায়। ভাষা আন্দোলনের বড় বড় ঘটনাগুলোকে ছোট ছোট করে আলোচনা করলাম উপরে, যদিও ঘটনাগুলো তাৎপর্যের বিবেচনায় বড় আলোচনার দাবি রাখে। আমরা যারা ইতিহাস পাঠে আগ্রহ খুঁজে পেতে চাই তারা যেন ঘটনাগুলোকে একটু একটু করে ছুঁয়ে দেখতে পারি তারই একটা প্রচেষ্টা।

(এই লেখাটি প্রস্তুত করার জন্য একাধিক পুস্তিকা এবং ইন্টারনেটের সহায়তা নেয়া হয়েছে)।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়