ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রথম শর্ত স্বাধীনতাকে ভালোবাসা

হাসান মাহামুদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:২৩, ২৫ মার্চ ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রথম শর্ত স্বাধীনতাকে ভালোবাসা

রাইজিংবিডি’র আয়োজনে তারুণ্যের দৃষ্টিতে স্বাধীনতা শীর্ষক বৈঠকি

হাসান মাহামুদ: আমাদের জাতীয় জীবনে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিকল্প নেই। কিন্তু এখনো অনেকেই স্বাধীনতার কথা মুখে বললেও বিষয়টি মন থেকে মানতে চান না, ভালোবাসেন না, হৃদয়ে লালন করেন না। অথচ মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রথম শর্তই হচ্ছে স্বাধীনতাকে মন থেকে ভালোবাসা, স্বাধীনতা নিয়ে ভাবা।

মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নে সবচেয়ে বাস্তবসম্মত উপায় কী হতে পারে? এই প্রশ্নে তরুণ শিক্ষার্থীরা এমন মনোভাব ব্যক্ত করেছেন। ‘তারুণ্যের দৃষ্টিতে স্বাধীনতা’ শিরোনামে এক বৈঠকি’র আয়োজন করে অনলাইন নিউজ পোর্টাল রাইজিংবিডি ডটকম। পোর্টালটির কার্যালয়ে কনফারেন্স রুমে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকিতে উপস্থিত ছিলেন দেশের ২৫টি বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থীরা।

রাইজিংবিডি ডটকমের উদ্যোগে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের নিয়ে ‘পাঠকসংঘ’ গঠন করা হচ্ছে। এরই মধ্যে দেশের বাইরে যুক্তরাষ্ট্র, জাপানসহ কয়েকটি দেশেও পাঠক সংঘের কমিটি গঠিত হয়েছে। পাঠক সংঘের প্রাথমিক কার্যক্রম শুরুর অংশ হিসেবে গত বুধবার এই বৈঠকির আয়োজন করা হয়। বৈঠকিতে নতুন প্রজন্মের প্রতিনিধিরা ‘স্বাধীনতাকে কেমন চোখে দেখেন’ তা তুলে ধরেন। নিজেদের মতো করে ব্যাখ্যা করেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। একই সঙ্গে তরুণ শিক্ষার্থীদের আলোচনার মাধ্যমে উঠে আসে কীভাবে আমাদের জাতীয় এবং দৈনন্দিন জীবনে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে জাগ্রত করা যায়।

মূলত বৈঠকিতে স্বাধীনতা পরবর্তী বিভিন্ন অনুষঙ্গ, অনুসর্গ এবং প্রভাবক নিয়ে আলোচনা করা হয়। এতে শিক্ষার্থীদের আলোচনা থেকে উঠে আসে কয়েকটি উদ্বেগজনক তথ্য। এর মধ্যে রয়েছে- ‘চেতনা’ শব্দটি নিয়ে অস্পষ্টতা রয়েছে দেশের অনেক শিক্ষার্থীর মনে। এরপর, জাতীয় জীবনে ‍মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিকাশের প্রথম প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে সঠিক ইতিহাস জানার অভাব। আর এই সঠিক ইতিহাস না জানার প্রধান কারণ ইতিহাস বিকৃতি এবং সরকারিভাবে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস প্রচারের কোনো ব্যবস্থা না করা।

আলোচনায় আরো উঠে আসে, বর্তমানে তরুণদের একটি অংশ মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ভাবতে চায় না। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করা হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস রচিত হয়েছে ইতিহাসবিদদের ব্যক্তিগত মতাদর্শ থেকে-এমনও মনে করেন অনেকে। ২৪ ঘণ্টায় ‘বায়ান্ন’, ‘একাত্তর’, ‘স্বাধীনতা’, ‘মুক্তিযুদ্ধ’ শব্দগুলো কতবার উচ্চারিত হয় এ দেশে? এ প্রশ্নটিও বৈঠকিতে উঠে আসে। বাঙালি সংস্কৃতি বিজাতীয় সংস্কৃতির আগ্রাসনের শিকার। মরমী শিল্পী আব্দুল আলিমের গানের সুর রিংটোনে বেজে উঠলে তাকে কেন ‘ব্যাকডেটেড’ বলা হবে-এ প্রশ্নও তোলেন একজন।

এসব কারণে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা জাতীয় জীবনে অনুপস্থিত। দেখা দিচ্ছে অসংখ্য অসঙ্গতি। সংঘবদ্ধভাবে তরুণরা যেন আলাদা হয়ে যাচ্ছে। যার কারণে বিপথগামী হচ্ছে তরুণসমাজ। আর সামগ্রিকভাবে আমরা যেন আপোসকামিতার মধ্য দিয়ে বেঁচে আছি। এ জন্য মঙ্গলসাধন কিংবা মঙ্গলসৃষ্টি হচ্ছে না আশানুরূপ। এই সমস্যা থেকে উত্তরণের ৩টি উপায় উঠে এসেছে আলোচনায়। বলা হচ্ছে- এ জন্য মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস সহজলভ্য করতে হবে, সামাজিক অবস্থার পরিবর্তন করতে হবে এবং সর্বোপরি সর্বাগ্রে স্বাধীনতার আবেগ ও মর্মকে মন থেকে ভালোবাসতে হবে।

যেহেতু শিক্ষার্থী তথা তরুণরা আগামী দিনের যোদ্ধা এবং তরুণদের দ্বারাই মঙ্গলসাধন সম্ভব, তাই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিকাশের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। এক্ষেত্রে ভাষা শহীদ এবং বীর ‍মুক্তিযোদ্ধাদের মনুমেন্ট, ভাস্কর্য প্রতিটি সরকারি ও বেসরকারি কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপন করা উচিত। এক্ষেত্রে কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর। তবে তা সীমিত পরিসরে হলেও করার যুক্তি উঠে এসেছে আলোচনায়।

আলোচনায় ঘুরেফিরে আসে ‘জাতীয় মূল্যবোধের পরিপন্থি চেতনা’ উত্থানের প্রসঙ্গ। বলা হয়, আরেকটি যুদ্ধের সামনে দাঁড়িয়ে আমরা। আলোচনায়, একে ‘জাতীয় চেতনার পরিপন্থি প্রয়াস’ বলে আখ্যায়িত করা হয়। এই অপপ্রয়াস রুখতে মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত, কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় বিচার ব্যবস্থার স্বাধীনতা নিশ্চিত, বেকারত্ব দূর, মাদক নিরসনসহ বেশকিছু পদক্ষেপ গ্রহণের সুপারিশ উচ্চারিত হয়।

বৈঠকিতে মূল প্রবন্ধ বা প্রসঙ্গ আলোচনা উপস্থাপনে বলা হয়, ৭ মার্চের ভাষণের পরিপ্রেক্ষিতে বাঙালি জাতি যখন মুক্তির স্বপ্নে বিভোর, তখন ২৫ মার্চের কালোরাতে পাকিস্তানি নরপশুরা নিরস্ত্র বাঙালির উপর ঘৃণ্য আক্রমণ চালায়। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বর্বর হত্যাযজ্ঞের দিনটিকে ‘গণহত্যা দিবস’ ঘোষণার আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। মুক্তিযুদ্ধের ৪৬ বছর পর এবার প্রথমবারের মতো দেশে ‘গণহত্যা দিবস’ পালিত হচ্ছে। নিঃসন্দেহে আমরা ভাগ্যবান যে, আমরা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের একটি অংশ হতে পারছি। জাতীয় সংসদের স্বীকৃতির পর আন্তর্জাতিকভাবেও দিবসটি পালনের জন্য ইতোমধ্যে জাতিসংঘে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে দিনটি আন্তর্জাতিকভাবে যাতে পালিত হয়, এ জন্য সমর্থন আদায়ের চেষ্টা চলছে। এক্ষেত্রে তরুণদের  করণীয় বৈঠকিতে আলোচিত হয়। এক্ষেত্রে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং ‍মিডিয়া গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে তারা মত দেন। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব শিক্ষক আন্তর্জাতিক জার্নালে লিখেন, তারাও ভালো ভূমিকা রাখতে পারেন জনমত সৃষ্টি এবং এ বিষয়ে সমর্থন আদায়ে।

লেখক: সাংবাদিক



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৫ মার্চ ২০১৭/হাসান/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়